রাতের চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জারে প্রশ্নের মুখে যাত্রী নিরাপত্তা

চোরের হাত থেকে ব্যাগ উদ্ধার তরুণীর

রাতের ট্রেনে যাত্রীরা কতটা নিরাপদ, পুরুলিয়াগামী চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে টের পেলেন এক তরুণী। চলন্ত ট্রেনে মহিলা কুপের মধ্যে থেকেই তাঁর ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাল এক দুষ্কৃতী। কোনও রকমে টানা হ্যাঁচড়া করে তরুণী সেই ব্যাগ কেড়ে নিলেও ধরে রাখতে পারেননি ওই দুষ্কৃতীকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:২৩
Share:

তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছেন শরণ্যা। —নিজস্ব চিত্র।

রাতের ট্রেনে যাত্রীরা কতটা নিরাপদ, পুরুলিয়াগামী চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে টের পেলেন এক তরুণী।

Advertisement

চলন্ত ট্রেনে মহিলা কুপের মধ্যে থেকেই তাঁর ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাল এক দুষ্কৃতী। কোনও রকমে টানা হ্যাঁচড়া করে তরুণী সেই ব্যাগ কেড়ে নিলেও ধরে রাখতে পারেননি ওই দুষ্কৃতীকে। ওই কামরায় রেলপুলিশ তো ছিলই না, বাকি পথেও রেলপুলিশের তিনি দেখা পাননি বলে অভিযোগ। এই ঘটনাকে ঘিরে রেলে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল। ওই ট্রেনে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে জিআরপি। কেন তাঁদের ট্রেনে দেখা যায়নি? এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে খড়গপুর এসআরপি-র ডিএসপি (সদর) দিলীপ পাল বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখব কী হয়েছে।’’

পুরুলিয়া শহরের সিন্দারপট্টি এলাকার বাসিন্দা বিএড কলেজের ছাত্রী শরণ্যা মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার রাতে হাওড়া থেকে এস- ২ সংরক্ষিত কামরার ভিতরে একটি কুপে উঠেছিলেন। ওই কুপে ছ’জনের আসন থাকলেও তাঁকে নিয়ে পাঁচজন মহিলা যাত্রী ছিলেন। তিনি লোয়ার বার্থে শুয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মাথার কাছে ব্যাগ নিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হল, মাথার কাছে কারও হাত। চোখ মেলতেই দেখি একটা লোক আমার ব্যাগটা টেনে নিচ্ছে। আমি ধড়মড়িয়ে উঠি। চোরটা ব্যাগ নিয়ে কুপ থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি ওকে ধাওয়া করি। কামরার মধ্যেই দৌড়ে ওর হাত থেকে কোনওরকমে ব্যাগটা ছিনিয়ে নিই। আমি ওর হাত শক্ত করে ধরে রেখে ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করছিলাম। কিন্তু ট্রেনের গতি তখন কম ছিল। আমার হাত ছাড়িয়ে চোরটা দরজা খুলে বাইরে লাফ মারে। ধস্তাধস্তিতে আঙুল কেটে যায়।’’ তিনি জানান, ঘটনাটি বালিচক স্টেশনের কাছাকাছি এলাকায় ঘটেছে।

Advertisement

শরণ্যার অভিযোগ, কামরায় অনেক যাত্রী থাকলেও কেউ ওঠেননি। তবে তাঁর কুপের মহিলা যাত্রীদের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। শরণ্যা নিজের কুপে ফিরে গেলে কী ঘটেছে তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খোঁজ করেও ওই কামরায় তিনি রেলপুলিশের একজন কর্মীকেও দেখতে পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘চিৎকার করার পরেও কোনও পুলিশ কর্মীর দেখা না পেয়ে বেশ অবাক হয়ে গিয়েছি। খড়গপুর স্টেশনে ট্রেন ছাড়ার পরে কোথা থেকে খবর পেয়ে এক টিকিট পরীক্ষক এসে ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নেন। তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার বদলে, গোটা ট্রেনে তিনি একমাত্র টিকিট পরীক্ষক বলে নিজের অসহায়তা প্রকাশ করেন!’’

ওই তিক্ত অভিজ্ঞতার পরে ওই তরুণীর আর বাকি রাতে ঘুম আসেনি। বুধবার সকালে ট্রেন পুরুলিয়া স্টেশনে পৌঁছলে ট্রেনের গার্ডকে ঘটনার কথা জানান তিনি। সব শুনে ট্রেন ছাড়ার তাড়া রয়েছে জানিয়ে গার্ড এড়িয়ে যান বলে শরণ্যার অভিযোগ। এরপর তিনি সহযাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে পুরুলিয়ার স্টেশন ম্যানেজারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান।

ওই কুপে থাকা অন্য যাত্রী শম্পা ঘোষ বলেন, ‘‘এই ট্রেনে মাঝেমধ্যেই চুরি-ছিনতাই বচ্ছে। মাঝে মধ্যে মাতালও ঢুকে পড়ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা বলে কিছুই নেই।’’ অন্য যাত্রীদের প্রশ্ন, তরুণীর চিৎকারের পরেও কোনও নিরাপত্তকর্মীর দেখা মেলেনি। ওই দুষ্কৃতী যদি এই তরুণীকে আক্রমণ করত তাহলে কী হতো?’’ পুরুলিয়ার স্টেশন ম্যানেজার অমিতাভ মজুমদার বলেন, ‘‘চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জারে ছিনতাইয়ের চেষ্টার একটি অভিযোগ পেয়েছি। আদ্রায় ডিভিশনের সদর দফতরে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন