সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কি পুড়বে আতসবাজি, প্রশ্ন

রাত ১১.৪৫ থেকে ১২.৪৫ পর্যন্ত বাজি পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছে বিচারপতি এ কে সিকরি এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০৪
Share:

সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে বাজি ফাটবে কি? প্রশ্ন নানা মহলে।

কালীপুজোর সময়ে পোড়ানো যাবে বাজি। সারা দেশে সামগ্রিক ভাবে বাজি নিষিদ্ধ করল না শীর্ষ আদালত। তবে বাজির ব্যবহারে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বাজি পোড়ানো যাবে শুধু রাত আটটা থেকে দশটা পর্যন্তই। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশকে ঘিরে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া
মিলেছ জেলাজুড়ে।

Advertisement

বাজি বিক্রেতা, বাজি প্রস্তুতকারকদের কথায়, যা কিছু বিক্রি হয় জোগান ও চাহিদার উপর নির্ভর করে। সেই জায়গায় নিয়ন্ত্রণ থাকলে, সচেতনতা গড়ে উঠলে দেশের আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তেমন বাজিই বিক্রি ও ফাটানো হবে। এতে সমস্যার কিছু নেই। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আদালত বাজিকে তো পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। আমাদের ব্যবসা বাঁচবে।’’ একই সুর বাজি ব্যবহারকারীদের কথায়ও। তাঁদের অনেকেই বলছেন আনন্দের জন্যই বাজি ফাটানো। সকলের স্বাস্থ্যরক্ষার স্বার্থেই দূষণ কমাতে আদালতের কথা মেনে চলা উচিত। তবে, কেউ কেউ বলছেন, ‘‘এত নিয়ম মেনে আনন্দ করা যায় নাকি!’’

অনলাইনে আতসবাজি কেনাবেচার ওপর এদিন সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। ক্রিসমাস ও নিউ-ইয়ার্স ইভের সময়ও বাজি পোড়ানোর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। রাত ১১.৪৫ থেকে ১২.৪৫ পর্যন্ত বাজি পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছে বিচারপতি এ কে সিকরি এবং বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম
কোর্টের বেঞ্চ।

Advertisement

বীরভূমে বাজি পোড়ানোর ছবিটা একটু আলাদা বলে মত স্থানীয় বাজি বিক্রেতাদের। কালী পুজো ও দীপাবলিকে ঘিরে নানা আতসবাজির পাশাপাশি নিষিদ্ধ শব্দবাজিও ফাটে। তবে বীরভূমে দুর্গাপুজোয় বাজি ফাটানো বা পোড়ানোর ধুম কালীপুজো বা দীপাবলির থেকে অনেক বেশি। বেশ কয়েকছর ধরে জেলা পুলিশের তৎপরতার জন্য শব্দবাজিতে কিছুটা রাশ পড়লেও, খুব একটা তফাত হয় নি। বেচাকেনা ও বাজি ফাটানোর রেওয়াজ সমানে চলছে। প্রতিমা নিরঞ্জনের পর জেলার বেশ কিছু পুজো উদ্যোক্তা নিয়ম করে আতসবাজির প্রদর্শনীর
আয়োজন করেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর দুবরাজপুরের তেমনই একটি পুজো উদ্যোক্তা ইউথ কর্নার ক্লাবের সম্পাদক সোমেশ আচার্য বলছেন, ‘‘আদালতের রায় কে স্বাগত। গত চার দশক ধরে এমন আয়োজন করে আসছি। আমরা শব্দবাজি এড়িয়ে আতসবাজিতে জোর দিই। দোশের সর্বোচ্চ আদালত যে যা বলেছে তার বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। শুধু সচেতনতা বাড়াতে হবে।’’ প্রায় একই সুর সিউড়ির সেচ কলোনি
পুজো উদ্যোক্তাদেরও।

বড় বাজেটের আতসবাজি তৈরির দায়িত্ব বর্তায় মূলত মালাকারদের উপর। বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত বোলপুরের সুরুলের শ্যামল মালাকার বলছেন, ‘‘আমরা চাহিদা অনুযায়ী বাজি তৈরি করি। উদ্যোক্তা বা ক্রেতা আদালতের নির্দেশ মানলে আমরাই বা বানাবো কেন। আদালতকে ধন্যবাদ পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা এলে বাজি শিল্পের সঙ্গে জুড়ে থাকা মানুষদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যেত।’’ একই বক্তব্য নানুরের আনন্দ মালাকারেরও।

সিউড়ি দুবরাজপুরের বেশ কিছু খুচরো বাজি বিক্রেতার কথায়, ‘‘দেখুন কলকাতা থেকে বাজি নিয়ে এসে বিক্রি করি। শব্দদূষণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নির্দিষ্ট শব্দ সীমায় থাকা বাজি ও আতসবাজিই বিক্রি হয়। আদালতের নির্দেশ সবাই মেনে চললে আমরা মানব না কেন।’’ তবে বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ জানাচ্ছেন, দুর্গাপুজোর তুলনায় কম হলেও কালী পুজো ও দিওয়ালিকে ঘিরে বাজি ফাটানোর হিড়িক বীরভূমে আছে। রামপুরহাট, বোলপুর, লাভপুর, সাঁইথিয়া, সিউড়ি এবং দুবরাজপুরের মত জেলার বিভিন্ন বাজারে আতসবাজির সঙ্গে কোথাও প্রকাশ্যে কোথাও বা আড়ালে বিক্রি হয় নিষিদ্ধ শব্দবাজি এমনটাই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। সচেতনতা গড়ে উঠলে, সময় মেনে বাজি ফাটানোর চল হলে, ক্রেতা না চাইলে কেন নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন