জল থইথই জমিতে চাষে নেমে পড়েছেন মহিলারা। বাঁকুড়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
বৃষ্টি এ বার কেমন হবে, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চাষিরা। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের বৃষ্টিতে কোমর বেঁধে চাষিরা মাঠে ধান রোয়ার কাজে নেমে পড়েছেন। তাঁদের হাসি মুখ দেখে স্বস্তিতে বাঁকুড়া জেলা কৃষি দফতর।
জেলা কৃষি দফতর জানাচ্ছে, জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে বাঁকুড়া জেলায়। গত বছরের ঘাটতি কাটিয়ে এ বছর জেলায় তাই আরও বেশি পরিমাণ জমিতে আউশ ও আমন ধান চাষ হতে চলছে। এ বার প্রায় চার লক্ষ হেক্টর জমিতে আউশ ও আমন ধানের চাষ হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় একলক্ষ হেক্টর বেশি।
বাঁকুড়া জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা দেবদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর জেলায় বৃষ্টিপাত ধারাবাহিক ভাবে কম হয়েছিল। ফলে জেলার কয়েকটি ব্লকের বেশ কিছু মৌজায় আউশ ও আমন ধান চাষ হয়নি। জেলার ৩৮৩৬টি মৌজার মধ্যে ৮১৮টি খরার কবলে পড়েছিল। সে বার মাত্র ২ লক্ষ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। এ বার অবশ্য সেই পরিস্থিতি নেই। এখনও পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের গড় স্বাভাবিক রয়েছে। জেলায় ৩৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে চলতি বছরে জেলায় ৩ লক্ষ ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ও আমন ধান চাষ হবে।’’
জেলার কৃষি আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, বাঁকুড়া জেলার তিনটি মহকুমার ২২টি ব্লকে বৃষ্টিপাতের গতিপ্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, এ বার ধানচাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত জুন মাসে জেলায় ২০৬ মিলিলিটার বৃষ্টিপাত হয়। আর জুলাই মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত জেলায় ১৪৭ মিলিলিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা স্বাভাবিকের (স্বাভাবিক ১২০ মিলিলিটার) তুলনায় কিছুটা বেশি। এতে অবশ্য ধানচাষে কোনও ক্ষতি হবে না বলেই কৃষি দফতরের দাবি।
জেলার এক কৃষি আধিকারিক বলেন, “গত বছর সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ার জন্য জেলার বেশ কিছু মৌজায় ধান চাষ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বীজতলায় চারা তৈরি হওয়ার পরে জমিতে জল না থাকায় ধানের চারা আর রোপন করা যায়নি। অনেক জমিতে চারা রোপন করা হলেও জলের অভাবে তা শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। অনেক এলাকায় বীজতলা তৈরি করতে পারেননি চাষিরা। কিন্তু এ বার ধারাবাহিক ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে জেলার অধিকাংশ জমিতে ধান চাষ করতে পারবেন চাষিরা।’’
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে টানা বৃষ্টির জন্য কিছু এলাকায় কাঁচা শাক-সব্জি, পটল, শশা, ঢেঁড়শ, লঙ্কা, বরবটি, টম্যাটো-সহ কিছু ফসল নষ্ট হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। যদিও জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তার দাবি, “কাঁচা শাক-সব্জি সাধারণত উঁচু জমিতে চাষ হয়। এ পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাতের হার স্বাভাবিকের তুলনায় খুব বেশি নয়। তাই বৃষ্টির জন্য ফসলের ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনও কোন ব্লক থেকেই সে ভাবে পাওয়া যায়নি।’’
বৃষ্টি স্বস্তি দিয়েছে জেলার সাধারণ মানুষকে। হাসি ফুটিয়েছে সাধারণ চাষিদের মুখেও। রানিবাঁধের ক্ষুদ্র চাষি মিহির সর্দার, হিড়বাঁধের জবলা কিস্কু বললেন, “সামান্য বিঘে দুয়েক জমিতে চাষ করে কোনও রকমে সংসার চালাই। বৃষ্টির জলের অভাবে গত বছর জমিতে ধান চাষ করতে পারিনি। এ বার ভরা বর্ষা দেখে বীজতলা করেছি। ধানের চারা রোপন করব।”
জেলা কৃষি দফতরের দাবি, বিষ্ণুপুর মহকুমার কোতুলপুর, জয়পুর, বিষ্ণুপুর, ইন্দাস, পাত্রসায়র, সোনামুখী ব্লকে বীজতলা তৈরি হয়ে গিয়েছে। এখন পুরোদমে ধান রোয়ার কাজ শুরু হয়েছে। বাঁকুড়া ও খাতড়া মহকুমার বহু এলাকায় ধানের চারা রোপনের কাজ চলছে। বৃষ্টিপাতের এই ধারা বজায় থাকলে এ বার রেকর্ড সংখ্যক জমিতে ধান চাষ হবে।
আলু চাষের ফলন ভাল হলেও বাজারে দাম না পেয়ে বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল চাষিদের। সেই ক্ষতে এ বার ধানচাষের মলম দেয় কি না, সে দিকেই তাকিয়ে জেলার কৃষিজীবীরা।