আপনজন: খড়িকাশুলির হোমে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রদীপ জ্বালিয়ে ভাইদের কপালে টুক টুক করে ফোঁটা দিচ্ছিল ওরা। তুলে দিচ্ছিল মিষ্টির প্লেট। সেই সঙ্গে নতুন পোশাক।
ভাইফোঁটার আগের দিন শুক্রবার হোমের আবাসিক দাদা-ভাইদের এ ভাবেই মাতিয়ে রাখল বিষ্ণুপুরের একটি বেসরকারি স্কুলের কয়েকজন পড়ুয়া। তাতেই খুশির হাওয়া বয়ে গেল বিষ্ণুপুরের খড়িকাশুলির সরকারি হোমে।
নবম শ্রেণির ওই পড়ুয়ারা স্কুলের পড়াশোনার বাইরেও সমাজের জন্য অন্য কিছু করার কথা ভাবে। ‘চলো এগিয়ে আসি’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে নিজেরা চাঁদা তুলে এবং স্কুলের শিক্ষক ও কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে পুজোর আগেই বিষ্ণুপুরের একটি বেসরকারি হোমে গিয়ে নতুন পোশাক দিয়ে এসেছিল তারা। এ বার ভাইফোঁটার আগে উপহার পৌঁছে দিল অন্য একটি হোমে।
ওই সংগঠনের তরফে ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে, ‘‘স্কুল বন্ধ। তাই টিউশন নিতে যাওয়ার পথে কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করি, ভাইফোঁটাতে আমরা বাড়িতে আনন্দ করি। সেই আনন্দের ভাগ কিছুটা হোমের ভাইদের দিলে কেমন হয়?’’
মাঠে নেমে পড়ে ওরা। গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে বাকিটা নিজেরা চাঁদা দিয়ে তারা ওই হোমের আবাসিক ছেলেদের জন্য খাবার, পোশাক কিনে ফেলে।
তারপরে শুক্রবার বৃষ্টির মধ্যেই গাড়িতে সে সব তুলে অনুষ্কা সাহা, ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়, রেশমি ঝা, পূজা ওঝা আর গৌরব বাসিয়া হইহই করতে করতে সটান ওই হোমে হাজির হয়। হোমের ৩৮ জন ছেলেকে সারি সারি বসিয়ে তারা একে একে ফোঁটা দেয়, সঙ্গে মিষ্টি, পোশাকও।
হোম থেকে ফেরার পথে তারা বলে, ভাইফোঁটার দিন বাড়িতে সবার ব্যস্ততা থাকে বলে আগের দিনটা হোমে কাটানোর কথা তারা ভেবেছিল। কিন্তু হোমে এসে নতুন ভাইদের সঙ্গে তারা কম আনন্দ পায়নি। তাই ওদের ছেড়ে আসার সময় সবারই মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
ওদের এই কর্মকাণ্ড দেখে বিস্মিত হোমের সুপার পার্থ ঘোষাল। তিনি বলেন, ‘‘খুবই ভাল উদ্যোগ। এত কম বয়েসে, ওরা এত বড় কাজ করল দেখে আমিও অবাক হয়েছি। হোমের ছেলেরাও খুব খুশি ভাইফোঁটা আর উপহার পেয়ে।’’