সব বহুতলেরই স্বাস্থ্যপরীক্ষার দাবি

শুক্রবার বিকেলে সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া অত্যন্ত ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকা একটি বাণিজ্যিক বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১১
Share:

সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক বহুতল। নিজস্ব চিত্র

‘বিপজ্জনক’ বাড়ি থেকে কী শিক্ষা নেবে পুরসভা?

Advertisement

শুক্রবার বিকেলে সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া অত্যন্ত ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকা একটি বাণিজ্যিক বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ে। অভিযোগ, কারিগরি অনুমোদন পাওয়া বা নির্মাণ কোনওটাই ঠিক নিয়মে হয়নি। তাই এমন ঘটনা। তার পরেই উঠে গিয়েছে জরুরি ওই প্রশ্নটা।

শহরবাসীর একাংশের কথায়, এখনও হয়তো জেলা সদরে তেমন করে প্রোমোটার-রাজ জাঁকিয়ে বসেনি। তবে প্রতি বছর শহরে বহুতলের সংখ্যা বাড়ছে। উদ্বেগের বিষয় হল, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বহুতল গড়ায় সব নিয়ম মানা হয়নি। পুর কর্তৃপক্ষও এই মতের বিরোধিতা করতে পারছেন না। বরং সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড লাগায়ো বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ার পরে বেনিয়মের অভিযোগকে শনিবারই মান্যতা দিয়েছিলেন সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘ওই বহুতলের কারিগরি অনুমোদন আগের বোর্ড দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু নথি ঘেঁটে দেখছি, সেটা নিয়ম মেনে হয়নি।’

Advertisement

শুক্রবার দুপুরে ওই বহুতলের একাংশে ফাটল দেখা দিতেই উদ্বেগ ছড়িয়েছিল। পুলিশ-প্রশাসন ও পুরকর্তারা ছুটে আসেন। বিকেলে বহুতলের একাংশ ভেঙেও পড়ে। যে কোনও সময় পুরো বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে— এই আশঙ্কায় বহুতলে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বেসরকারি ব্যাঙ্ক, জীবন বিমা নিগমের অফিস, গয়না বিপণি-সহ সমস্ত দোকান-অফিস বন্ধ করার নির্দেশ দেয় প্রশাসন। ১৩৩ ধারা জারি করে বহুতলের একেবারে গা-ঘেঁষে থাকা পেট্রোল পাম্পও ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক (সিউড়ি) রাজীব মণ্ডল।

জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, বহুতলটি ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন পূর্ত দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরে বহুতল সংস্কার করা হবে, না ভেঙে ফেলা হবে সেটা স্থির হবে। শহরবাসীর প্রশ্ন, একটির ক্ষেত্রে তদন্ত হলে বাকিগুলির ক্ষেত্রে কেন নয়? পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘তিন বছর কয়েক মাস দায়িত্ব সামলাচ্ছি। এই সময়ে ১৪টি বহুতল নির্মিত হয়েছে। তবে আমার পূ্র্ববর্তী বোর্ডের আমলে ঠিক কী ঘটেছে, প্রতিটি বহুতলের ফাইল ঘেঁটে দেখতে হবে। বিচ্যুতি থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হবে। কারণ, বহুতল নিয়ম না মেনে তৈরি হলে চরম বিপদ হতে পারে।’’ তবে, পুরপ্রধান আশ্বাসেও কতটা কাজ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

পুরসভার হিসেবে, দু’দশকে শহরে তৈরি হয়েছে ৫০টিরও বেশি বহুতল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিয়মের আড়ালে বেনিয়ম হয়েছে, কান পাতলে শোনা যায় এমন মন্তব্য। হয় ঠিক মতো কারিগরি অনুমোদন নেই, নয়তো যত তলা পর্যন্ত করার অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল, তার থেকে মর্জিমাফিক তলা বাড়িয়ে নিয়েছেন বহুতলের মালিক। মূল রাস্তা থেকে বহু তল পর্যন্ত যত ফুট চওড়া রাস্তা রাখা দরকার তাও নেই। এমন বহুতল আছে, যেখানে আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি ঢোকার রাস্তা নেই। কেউ আবার রাস্তার একাংশ দখল করে নিয়েছেন। বিপদ এড়াতে দু’দিকে সিঁড়ি করার কথা থাকলেও অনেক বহুতল সেটা মানেনি। পার্কিং প্লেস নেই। ফলে চারচাকা গড়ি দাঁড়ায় রাস্তার উপরেই।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অবৈধ নির্মাণের এমন স্পর্ধার পিছনে প্রভাবশালীরা রয়েছেন বলে অভিযোগ।

শহরের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, জেলা সদর হওয়ায় নানা কাজে প্রচুর মানুষকে নিত্যদিন শহরে আসতে হয়। শপিং মল, অফিস-আদালত, হাসপাতাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব হাতের নাগালে পাওয়ার ইচ্ছেয় অনেকেই সিউড়িতে বসবাস করতে চাইছেন। ফলে ক্রমশ বাড়ছে শহর। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাণিজ্যিক বহুতল ও অনুষ্ঠান ভবন ফ্ল্যাট বাড়ি তৈরি হচ্ছে, হয়েছে। সেই সুযোগেই হচ্ছে বেনিয়ম। ২০১৫ সালে বহুতল গড়ায় এই সব বেনিয়ম নিয়ে পুরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন প্রাক্তন কাউন্সিলর ইয়াসিন আখতার। তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে আক্ষেপ রয়েছে ইয়াসিন বাবুর।

সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকার বহুতলের একাংশ ভেঙে পড়ার পরে যদি হুঁশ ফেরে, প্রশাসন ও পুরসভার তার অপেক্ষায় শহরবাসী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন