ঘটনাস্থলের অদূরেই বাড়ি তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের। তদন্তে উঠে এসেছে পড়শি গ্রামের আর এক সদস্যের নামও।
শুক্রবার সন্ধ্যায় কালুহা গ্রামে বোমা বিস্ফোরণে নাম জড়াল শাসকদল তৃণমূলেরই। ওই ঘটনায় রাতেই জখমদের মধ্যে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শফিউদ্দিন শেখ (৪৭)। বাড়ি পাশের তপন গ্রামে। এলাকায় সমাজবিরোধী বলে পরিচিত নিহত ওই ব্যক্তির বোমা বাঁধতে পারদর্শী ছিলেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। ওই ঘটনায় কম করে পাঁচ জন জখম হয়েছে বলে গ্রামবাসীর দাবি। যদিও রামপুরহাট হাসপাতালে মাত্র দু’জন জখম ভর্তি।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় কালুহা গ্রামের তৃণমূল সদস্য গোপীকান্ত মুখোপাধ্যায় এবং তপন গ্রামের তৃণমূল সদস্য মুর্শেদ আলি-সহ মোট জনের বিরুদ্ধে খুনের ষড়যন্ত্র, বিস্ফোরক মজুত-সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে বাবর আলি নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক। গোটা ঘটনাটিই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলকে ঘিরে শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জের বলে দাবি বিরোধীদের।
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের দাবি, ১৬ আসনের কালুহা পঞ্চায়েতে ১১ জন সদস্য তৃণমূলের। বিরোধী পাঁচ জন। বর্তমান প্রধান খুকুন্নেশা বিবির সঙ্গে দলের একাংশের বিরোধী তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছে। অভিযোগ, তারই জেরে শুক্রবার সন্ধ্যায় এলাকার ওই দুই তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যদের নেতৃত্বে কালুহা গ্রামে জয়দেব লেটের বাড়িতে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা প্রচুর পরিমাণে বোমা বাধঁছিল। ঘটনাস্থল থেকে গোপীকান্তের বাড়ি মেরেকেটে ১০০ মিটার। আচমকা বিস্ফোরণে তপনের শফিউদ্দিন-সহ জয়দেব লেট-সহ চার পাঁচ জন দুষ্কৃতী গুরুতর জখম হয়। বিরোধীদের দাবি, বিস্ফোরণের পরেই গোপীকান্ত দাঁড়িয়ে থেকে আহত জয়দেবকে নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। জখম রঙ্গলাল লেট এবং মুর্শেদ আলিকেও অন্যত্র পাঠিয়ে দেন। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে মজুত শতাধিক বোমা এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম আশপাশের পুকুরগুলিতে ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন গোপীকান্ত। তার পরেই তিনি গ্রাম ছেড়ে পালান বলে বিরোধী এবং বাসিন্দাদের দাবি।
ইতিমধ্যেই বাবর আলি নামে তপন গ্রামের এক দুষ্কৃতীকে ধরে ফেলে আটক করে গ্রামবাসীদের একাংশ। তাঁদের ক্ষোভ, আগে খবর দেওয়া হলেও পুলিশ ইচ্ছে করে ঘণ্টা দেড়েক পরে গ্রামে ঢোকে। তত ক্ষণে জখমদের অনেকেই পালিয়ে যায়। পুলিশ পৌঁছলে গ্রামবাসীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা পুলিশের গাড়িও আটকে রাখেন। পরে ঘেরাওমুক্ত হয়ে পুলিশ আটক বাবরকে গ্রেফতার করে। গুরুতর জখম হয়ে পড়ে থাকা শফিউদ্দিনকে উদ্ধার করে রাত পৌনে ৯টা নাগাদ রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা করে। সওয়া ৯টা নাগাদ সেখানেই সশফিউদ্দিন মারা যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় জয়দেব রামপুরহাটে ভর্তি।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, দলের দুই গোষ্ঠীর কলহের জেরেই ওই ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযুক্ত তৃণমূল সদস্যদের বিরুদ্ধে যিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন, সেই আলিম খান কালুহা পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী। আলিমের দাদা তথা তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য হাফিজ খানের অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েতের দখল নেওয়ার জন্যই অভিযুক্তেরা বোমা বাঁধছিল। খুন করার ষড়যন্ত্র করছিল।’’ তৃণমূলের কালুহা অঞ্চল কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল আলির দাবি, ‘‘সম্প্রতি পঞ্চায়েতের ন’জন সদস্য প্রধানের বিরুদ্ধে দলের ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। সাত দিন আগে ব্লক নেতৃত্ব দু’পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে মিটমাটও করে দিয়েছিলেন। তার পরেই এই ঘটনা।’’
শনিবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে সমস্ত অভিযোগই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন গোপীকান্ত। তাঁর দাবি, ‘‘ঘটনার সময় আমি এলাকাতেই ছিলাম না। খবর পেয়ে ওখানে গিয়ে পাড়ার লোক হিসাবে জয়দেবকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। আমাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে।’’