শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা সঠিক নিয়ম মেনে বাড়ি ভাড়ার টাকা তুলছেন কি না, তা জানতে উদ্যোগী হল বাঁকুড়া জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর।
বুধবারই এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে। নির্দেশিকায় সমস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন এবং তাঁদের স্বামী বা স্ত্রী রোজগার করেন কি না, সেই সংক্রান্ত বিশদে তথ্য জানাতে বলা হয়েছে।
দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, বছরে দু’দফায় স্কুল শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা সরকারের তরফে বাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা পেয়ে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়া বাবদ পরিবার পিছু সর্বোচ্চ ছ’হাজার টাকা পেতে পারেন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর বা সরকারি চাকুরেরা। কিন্তু সরকারি চাকুরে স্বামী ও স্ত্রী একই বাড়িতে থাকলে দু’জনে আলাদা করে ভাড়ার টাকা তুলতে পারবেন না। যে কোনও এক জন টাকা নেবেন। ব্যতিক্রম রয়েছে শুধুমাত্র স্বামী-স্ত্রী যদি নির্দিষ্ট দূরত্বে আলাদা আলাদা বাড়িতে থাকেন, সে ক্ষেত্রে দু’জনেই বাড়ি ভাড়া নিতে পারেন। যদিও অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই সরকারি চাকুরে হয়ে এক ছাদের তলায় থাকলেও আলাদা আলাদা ভাবে নিজেদের প্রাপ্য বাড়ি ভাড়া তোলেন। এতে অপব্যয় হচ্ছে সরকারি টাকার।
বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পঙ্কজকুমার সরকার বলেন, “সঠিক নিয়ম মেনে শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা বাড়ি ভাড়া তুলছেন কি না, তা জানতেই রাজ্যের নির্দেশে এই পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা।”
ঘটনা হল, নিয়ম মাফিক প্রতি বছরই জুলাই ও জানুয়ারি মাসে শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের বাড়ি ভাড়া তোলার তথ্য জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরে জানানোর কথা। তা হলে এ বার আলাদা করে নির্দেশিকা জারি করা হল কেন? জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “কে কত বাড়ি ভাড়া তুলছেন, তা জানানোর নিয়ম থাকলেও এত দিন বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হতো না। অনেকেই তথ্য জানাতেন না এত দিন। তবে সরকারি টাকার অপব্যয় রুখতে এ বার তাও নজর রাখা হচ্ছে।’’
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৬ জানুয়ারি খাতড়া মহকুমা, ১৭ জানুয়ারি বিষ্ণুপুর ও ১৮ জানুয়ারি বাঁকুড়া সদর মহকুমার সমস্ত মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, জুনিয়র হাইস্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের ওই তথ্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলার শিক্ষকদের একাংশের ক্ষোভ, “সমস্ত সরকারি কর্মীরাই বাড়ি ভাড়া পেয়ে থাকেন। কেবল শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই এই তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে কেন?” তথ্য জানানোর সময়সীমা বাড়ানোরও দাবি উঠছে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি এবং এবিটিএ-র তরফে। তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি গৌতম দাস বলেন, “তথ্য জানানোর সময়সীমা বড্ড কম। আরও একটু যাতে বাড়ানো হয়, জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আমরা এ নিয়ে কথা বলব।” এবিটিএ-র জেলা সহ-সম্পাদক আশিস পান্ডে বলেন, “দুম করে এই ধরনের একটি নির্দেশিকা এসে পড়ায় আমরা বিভ্রান্ত। নির্দেশিকা জারি করার আগে শিক্ষকদের আগাম জানিয়ে রাখা উচিত ছিল।”