স্টেশন থেকে দূরে রেলযাত্রীদের জন্য চলছে রান্না।নিজস্ব চিত্র।
মোগলাই বা চাইনিজ নয়, নিখাদ ডাঁটা-চচ্চড়ি, পোস্তর বড়া, চারাপোনা পাতে দিয়েই ট্রেন যাত্রীদের মন কাড়তে শুরু করেছে পুরুলিয়ার একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা। কিন্তু রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশনের (আইআরসিটিসি) সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ আদ্রার ওই গোষ্ঠী বারবার চেয়েও রেলের কাছ থেকে রান্নাঘর পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে কতদিন ট্রেনযাত্রীদের রান্না করা বাঙালি খানা জোগানো যাবে, তা নিয়েই সংশয়ে রয়েছেন মনোরমা নামের ওই গোষ্ঠীর সদস্যেরা।
জেলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী দফতরের আধিকারিক অমল আচার্য বলেন, ‘‘খাবারের মান কেমন, ফুড লাইসেন্স রয়েছে কি না, কোথাও খাবার সরবরাহের অভিজ্ঞতা রয়েছে কি না— এ রকম নানা শর্ত দেখে আমাদের একটি গোষ্ঠীকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রকল্পের সূচনার আগেই আমরা আদ্রা স্টেশন বা সংলগ্ন এলাকায় ‘বেস কিচেন’ করার জন্য জমি বা ঘর চেয়ে রেলের কাছে আবেদন জানালেও তা পেলাম না। দূর থেকে রান্না করা খাবার ট্রেনযাত্রীদের সময়মতো এনে দেওয়ার ঝক্কি তে কম নয়।’’
তিনি জানান, রান্নাঘরের সমস্যা অবিলম্বে না মিটলে এই গোষ্ঠী যে আর পরিষেবা দিতে পারবে না, তা প্রাথমিক ভাবে আইআরসিটিসিকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। আদ্রার ডিআরএম অনশূল গুপ্ত বলেন, ‘‘সমস্যার কথা শুনেছি। যাতে দ্রুত সমাধান করা যায়, সে জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।’’
লম্বা সফরে অনেক যাত্রীরই এখন পছন্দের তালিকায় ঘরোয়া খাবার। তাই রেলমন্ত্রক বিভিন্ন প্রদেশের স্বনির্ভর দলকে রেলের ই-ক্যাটারিংয়ের সঙ্গে যুক্ত করছে। পূর্বাঞ্চলের মধ্যে একমাত্র পুরুলিয়ার মনোরমা নামের ওই গোষ্ঠী সেই দায়িত্ব পায়। আদ্রা স্টেশনে বিভিন্ন ট্রেনের যাত্রীদের হাতে-হাতে প্যাকেট করা খাবার দিতে শুরু করেন গোষ্ঠীর মহিলারা। ওই গোষ্ঠীর দাবি, তাঁরা অন্যান্য জনপ্রিয় ঘরানার খাবার তৈরি করতে পারলেও যাত্রীরা ঘরোয়া বাঙালি খাবারই পছন্দ করছেন। চাহিদাও বেশ বেড়েছে। কিন্তু তাঁরা রান্না করেন আদ্রা স্টেশন থেকে কমবেশি এক কিলোমিটার দূরে বেনিয়াশোলে একটি ভাড়া বাড়িতে।
রান্নার দায়িত্বে থাকা ওই গোষ্ঠীর সদস্য শিখা নাথ বলেন, ‘‘যাত্রীদের কাছ থেকে অর্ডার পাওয়ার পরে ট্রেনের সময় ধরে রান্না করতে হয়। তারপরে প্যাকেট করতে হয়। আবার ট্রেন অনেক সময় দেরিও করে। এ সব সমস্যার জন্য স্টেশনের কাছে রান্নাঘর পাওয়া গেলে সুবিধা হতো।’’
তাঁরা জানাচ্ছেন, রান্নাঘরের ভাড়া প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। দফায় দফায় টোটো ভাড়া করে স্টেশনে খাবার বয়ে নিয়ে যাওয়ার খরচও কম নয়। রেল থেকে রান্নার জায়গা তাদের দিলে ওই খরচ বাঁচত। পাশাপাশি স্টেশনেও তাঁরা যাত্রীদের খাবার বিক্রি করতে পারতেন। গোষ্ঠীর সদস্যদের দাবি, এ দিকে, জিনিসপত্র কিনতেও কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
স্টেশন থেকে দূরে রান্নাঘর হওয়ায় সব মিলিয়ে ক্ষতিই হচ্ছে তাঁদের। তাই তাঁদের অনেকে মনে করছেন, কাজ বন্ধ রাখবেন তাঁরা।
পুরুলিয়ার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতোর আশ্বাস, ‘‘কেবলমাত্র রান্নাঘরের অভাবে ওঁদের রান্না বন্ধ হয়ে যাবে, তা হতে পারে না। আমি এই সমস্যার কথা রেলকে জানিয়ে সমাধানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।’’