ঘটনা ১: মুখ্যমন্ত্রীর মামার বাড়ি কুশুম্বা। সম্প্রতি ওই গ্রাম এবং আশপাশের এলাকা ঝড়ে তছনছ হয়ে গিয়েছিল। ২৪ ঘণ্টাতেও এলাকায় পৌঁছননি দফতরের কর্মীরা।
ঘটনা ২: সর্পাঘাতে মৃত্যু হয় মুরারইয়ের করঞ্জি গ্রামের প্রৌঢ়া মাকসুদা বিবির। দু’ বছর কেটে গেলেও তাঁর পরিবার ক্ষতিপূরণের একটা টাকাও পাননি।
দু’টি ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দিকে। আর যার নেপথ্যে ওই দফতরের বেহাল পরিকাঠামোকেই দুষছে জেলা প্রশাসনের কর্তারা। অথচ খরা কিংবা বন্যা, ঝড় কিংবা আগুন— শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব সময়েই এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার কথা ওই দফতরেরই। কিন্তু, দীর্ঘ দিন বহু শূন্য পদে নিয়োগ না হওয়ায় রীতিমতো ধুঁকছে এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর। অভিযোগ, দফতরের এমন বেহাল দশার কোপ পড়ছে জেলাবাসীর উপরে। বিপর্যয়ের সময়ে কর্মীদের দেখা মিলছে না। আবার ক্ষতিগ্রস্তেরা ক্ষতিপূরণের প্রাপ্য টাকাও পাচ্ছেন না।
দফতর সূত্রের খবর, জেলার ১৯টি ব্লকের মধ্যে ৭টিতেই কোনও ব্লক আধিকারিক নেই। রামপুরহাট মহকুমার রামপুরহাট-১, ময়ূরেশ্বর-১, নলহাটি-১ এবং মুরারই-২, সিউড়ি মহকুমার রাজনগর, মহম্মদবাজার, এবং বোলপুর মহকুমার বোলপুর-শ্রীনিকেতন ব্লক— চিত্রটা সর্বত্রই এক। দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ‘চলছে’ আধিকারিক ছাড়াই। এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে, বোলপুর মহকুমায় মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিকের পদটিই খালি রয়েছে! এ দিকে, হিসেব মতো ব্লক স্তরে ওই দফতরে চার জন এবং মহকুমা স্তরে পাঁচ জন করে কর্মী থাকার কথা। অথচ বীরভূমে অধিকাংশ ব্লক এবং মহকুমা স্তরে কোথাও দু’জন কোথাও এক জন করে কর্মী আছে।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক রামাশিস প্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘গত এক বছর ধরে এই দফতরে আছি। কর্মীর অভাবে বেশ কিছু জায়গায় সমস্যা যে হচ্ছে, এতে অস্বীকার করার কিছু নেই। জেলায় ৭টি ব্লকে কোনও আধিকারিক নেই। বোলপুরের মহকুমা আধিকারিকের পদ শূন্য হয়ে পড়ে আছে। পরিস্থিতিটা বুঝতেই পারছেন।’’ রামাশিসবাবু জানাচ্ছেন, যে সমস্ত ব্লকে আধিকারিক নেই, সেখানে অন্য ব্লক থেকে এক জন আধিকারিক সপ্তাহে এক দিন-দু’ দিন ওই সমস্ত ব্লকে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। কিন্তু, যেখানে কর্মীর অভাবে নিজের ব্লকের কাজ সামালাতেই এক এক জন ব্লক আধিকারিককে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে অন্য ব্লকের বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে তাঁদের অসুবিধার সীমা থাকছে না। যা প্রকারন্তরে মেনেও নিয়েছেন জেলা আধিকারিক। তবে, তাঁর দাবি, পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দফতরে শূন্য পদগুলিতে নিয়োগের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছেন।
এ দিকে, জেলায় মুরারই ২ ব্লক ভীষণই বন্যাপ্রবণ এলাকা বলে পরিচিত। এ ছাড়া রামপুরহাট ১ ব্লকের খরুণ, বড়শাল, আয়াষ— এই তিন পঞ্চায়েত, ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের কানাচি, তালোয়া, মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েত এলাকাও বন্যাপ্রবণ। কিন্তু, এই সমস্ত ব্লকে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক না থাকায় ক্ষতিগ্রস্তেরা দীর্ঘ দিন থেকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মুরারই ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএম-এর আলি রেজা বলেন, ‘‘এলাকায় আধিকারিক না থাকায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ত্রাণের কাজে বিঘ্ন ঘটছে। সম্প্রতি ঝড়ে এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। লাগাতার চেয়েও ব্লকে কোনও আধিকারিক না থাকায় ত্রাণের কাজ দেখভাল করার কাজে অনভিজ্ঞতার জন্য তারপোলিন পাওয়া গেল না। এই ভরা বর্ষায় কী যে হবে, কিছু ভেবে পাচ্ছি না!’’ তাঁর নালিশ, ব্লক বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক নিয়োগের জন্য জেলা প্রশাসনের উন্নয়ন মূলক বৈঠকে একাধিক বার বলা হলেও ছবিটা পাল্টায়নি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে প্রতিক্রিয়া মেলেনি জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর। পরে তিনি দাবি করেন, ‘‘দফতরের কর্মীর শূন্য পদগুলি আর খালি নেই। ক’দিন আগেই পাবলিক সার্ভিস কমিশন পরীক্ষায় পাশ করে আসা পনেরো জনকে ওই দফতরে নিয়োগ করা হয়েছে। ব্লক আধিকারিকদের নিয়োগের বিষয়টি বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর দেখছে।’’