বক্তব্যে অনড় শিবপুরের চাষিরা

জমি-আন্দোলনই মাথাব্যথা, দাবি

কোনও ক্ষেত্রেই অনুব্রতর কাছে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। শিবপুর মৌজায় ৩০০ একর জমিতে প্রায় ১২০০ চাষির কমবেশি জমি রয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিবপুর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:০৭
Share:

গোলমাল: বোলপুরের শিবপুর মৌজার সাবিরগঞ্জে সভায় যেতে বাধা কংগ্রেস ও সিপিএম নেতাকে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

পঞ্চায়েত ভোটের আগে শিবপুর মৌজায় অনিচ্ছুক জমিদাতা চাষিদের আন্দোলনে তৃণমূলের মাথাব্যথা বাড়ছে বলেই তাতছেন জেলা তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্ব, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের দাবি এমনই। তবে এ বারই প্রথম নয়। এক মাস আগেও চাষিদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে হেনস্থা, হামলার মুখে পড়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যেরা। এবং সেই শিবপুরেই।

Advertisement

এর আগেও শিবপুর মৌজায় চাষিদের একাধিক আন্দোলন হয়েছে। কোনও ক্ষেত্রেই অনুব্রতর কাছে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। শিবপুর মৌজায় ৩০০ একর জমিতে প্রায় ১২০০ চাষির কমবেশি জমি রয়েছে। এই চাষিদের একাংশের দাবি, শিল্প হলে তাঁরা জমি দেবেন। শিল্প না হলে তাদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটে চাষিদের এই আন্দোলন ভোটব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূল জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব। তা থেকেই গলা চড়ছে বলে মনে করছেন বিরোধী দলের নেতারা।

বাম আমলে বোলপুরের শিবপুর মৌজায় শিল্পের নামে ৩০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। সেই সময় আন্দোলনে নেমেছিল বিরোধী দল তৃণমূল। রাজ্যে পালাবদলের পরে এই জমিতে ‘কেমিক্যাল হাব’ তৈরির কথা ঘোষণা করেন তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, এই সিদ্ধান্ত পাল্টে মুখ্যমন্ত্রী এই জমিতে ‘গীতবিতান’ নামক আবাসন প্রকল্প তৈরির কথা ঘোষণা করেন। এরপরে জমিদাতা কৃষকদের একাংশ জমি দিতে রাজি হয়নি। শিল্প হলে জমি দেব, নইলে জমি ফিরিয়ে দিতে হবে এই দাবিতে তাঁরা আন্দোলনেও নামে। জমি ফেরত চেয়ে জেলাশাসক, এমনকী মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও দেন অনিচ্ছুক কৃষকেরা। কিন্তু, এই জমিতে শুরু হয় আবাসন নির্মাণের কাজ। এই সংক্রান্ত বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টে একটি সংস্থার জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জমি কেনাবেচায় স্থগিতাদেশ দেয় আদালত।

Advertisement

এ দিন অনিচ্ছুক জমিদাতা চাষিদের নিয়ে সাবিরগঞ্জে সভা করার কথা ছিল আব্দুল মান্নান ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের। কিন্তু, সভার আগেই চাষিদের সঙ্গে সভার বিরুদ্ধে জড়ো হওয়া তৃণমূল কর্মীদের সংঘর্ষে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার অম্লানকুসুম ঘোষ ও সুবিমল পালের নেতৃত্ব ডিএসপি, সিআই, আটটি থানার ওসি সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় মোতায়েন ছিল। সভাস্থল থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে বোলপুর বাইপাসের জিলাপিতলা মোড়ে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যদের আটকে দেয় পুলিশ। প্রায় দেড় ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে বচসা ও ধস্তাধস্তি করে সভাস্থলে যেতে না পেরে ফিরে যেতে হয় তাঁদের। এ দিকে, উত্তেজনা উপেক্ষা করেই আন্দোলনকারী চাষিরা সভা করেন।

এই শিবপুর মৌজায় ৩০০ একর জমিতে প্রায় ১২০০ চাষির কমবেশি জমি আছে। সাবিরগঞ্জ, নূরপুর, কাশিপুর, রজতপুর প্রভৃতি এলাকার চাষিদের জমি রয়েছে এখানে। শিল্পের নামে জমি অধিগ্রহণ করে আবাসন করার জন্য আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই এলাকার ভোটে তৃণমূলে ভোটব্যাঙ্কে ভাটা পড়ার আশঙ্কা করছেন দলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব। এমনই দাবি বিরোধী দলের নেতৃত্বের।

জমি আন্দোলনকে হাতিয়ার করে প্রচারে নামতে চলেছে বিরোধীরাও। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘শিবপুরের জমি আন্দোলনে দল যে আস্বস্তিতে রয়েছে অনুব্রতর মেজাজ হারিয়ে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দেওয়াই তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে।’’ এ দিন জমিদাতা চাষিদের মধ্যে শেখ হায়দার বলেন, “শিল্প করব বলে জমি নিয়েছে। যদি শিল্প হয় আমরা জমি দেব। না হলে আমাদের জমি আমাদের ফিরিয়ে দিতে হবে।” আরেক চাষি খাদিম খানও বলেন, “আবাসন হলে আমাদের কোনও লাভ নেই। আমরা শিল্পের জন্য জমি দিতে রাজি হয়েছিলাম। সিঙ্গুরের মতো আমাদেরও জমি ফিরিয়ে দেওয়া হোক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন