মঙ্গলবার বিষ্ণুপুরের হাজরা পাড়ায়

বক্স-চকলেটে কানে ঝিঁ ঝিঁ

‘ট্রেলারে’ই চমকে গেল পাড়া। ‘পিকচার’ শুরু হলে কী হবে, তা নিয়ে আতঙ্ক শুরু হয়ে গিয়েছে তামাম শহরে। বিষ্ণুপুরে কালীপুজোর ভাসান পর্ব সবে শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

পুলিশের সামনেই তারস্বরে বাডছে সাউন্ডবক্স ও মাইক। —নিজস্ব চিত্র।

‘ট্রেলারে’ই চমকে গেল পাড়া। ‘পিকচার’ শুরু হলে কী হবে, তা নিয়ে আতঙ্ক শুরু হয়ে গিয়েছে তামাম শহরে।

Advertisement

বিষ্ণুপুরে কালীপুজোর ভাসান পর্ব সবে শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। আর এ দিনই বিষ্ণুপুরের হাজরাপাড়ার একটি কালীপুজো কমিটির ভাসানে শব্দাসুর মাত্রা ছাড়াল। নিষিদ্ধ শব্দবাজিও দেদার ফাটল বলে অভিযোগ। কিন্তু শোভাযাত্রায় গুটিকয় পুলিশ থাকলেও তাঁদের সে সব আটকাতে দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ। পুলিশের এই হাত গুটিয়ে থাকা মনোভাব দেখেই বিষ্ণুপুরবাসীর আতঙ্ক, আজ বুধবার শহরের অন্য পুজো কমিটিগুলি ভাসানে বের হলে, অবস্থা কী হবে!

কালীপুজোর আগে এই এলাকাতেই এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) শব্দবাজি ও মাইক বাজানো নিয়ে সচেতন করতে পথে নেমেছিলেন। কিন্তু তা যে অনেকে কানে তোলেননি, এ দিন বিকেলেই তা মালুম হল। বিসর্জনের শোভাযাত্রায় কয়েকটি বড় সাউন্ড বক্স চো ছিলই, সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি মাইক। গাঁক গাঁক শব্দে গানের গুঁতোর সঙ্গে বিকট শব্দে ফাটতে থাকে চকলেট, আলু বোম।

Advertisement

সঙ্কীর্ণ অলি-গলি ধরে উদ্দাম নৃত্য করতে করতে হাজরা পাড়ার ওই পুজো কমিটির লোকজন কার্যত পথ আটকে রাখলেন বেশ কিছুক্ষণ। এর জেরে এলাকায় যানজট তৈরি হয়। তেমনই আবার প্রচণ্ড শব্দে কাঁপতে থাকে এলাকার ঘর-বাড়ি। শব্দের দৌরাত্ম্য থেকে বাঁচতে বাড়ির ভিতরে দরজা বন্ধ করে কান চাপা দিয়ে বসে থাকেন অনেকে। কিন্তু তাতে স্বস্তি পাওয়া যায়নি।

এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, পুজোর আগে পুলিশ খুব প্রচার চালালো। পুজোর সময় থেকে দীপাবলিতেও রাস্তায় পুলিশ টহল দিল। তাতে শব্দের দাপাদাপি কমেছিল। কিন্তু বিসর্জনের শুরুতেই একটি পুজো কমিটি যা দেখিয়ে দিল, তাতে আর পুলিশের প্রশংসা করা চলে না।

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সবে বিসর্জন পর্ব শুরু হয়েছে। ভাইফোঁটার পরের দিন থেকে টানা কয়েক দিন ধরে বিসর্জন-পর্ব চলবে। তখনও পুলিশ হাত গুঁটিয়ে থাকলে পুরবাসী তো বধির হয়ে যাবে।

বাজল দেদার নিষিদ্ধ শব্দবাজিও।

বস্তুত ভাসানের সময় পুলিশের আসল পরীক্ষা বলে আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন এই শহরের দীর্ঘদিনের বাসিন্দারা। যদিও ভাসানের সময়েও আগাগোড়া সক্রিয় থাকার আশ্বাস দিয়েছিল বিষ্ণুপুর পুলিশ। তবে এ দিন হাজরাপাড়ার কালীভাসানে শব্দবাজি বা সাউন্ডবক্স রুখতে পুলিশকে কোনও ভূমিকা নিতে না দেখে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। ভাসানের আগামী দিনগুলিতে যাতে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নেয় সেই দাবিও উঠছে। চেষ্টা করেও পুজো কমিটির বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ দিনের ঘটনার কথা শুনে কড়া পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন বিষ্ণুপুরের এসডিপিও লাল্টু হালদার। তিনি বলেন, “পুজো কমিটিগুলিকে আগেই বলা হয়েছিল ভাসানে শব্দ বিধি মেনে চলতে হবে। হাজরা পাড়ার ভাসানে নিয়ম ভাঙা হয়ছে বলে কোনও অভিযোগ অবশ্য পাইনি। আমি সোনামুখীতে রয়েছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি কী হয়েছে।”

অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সামনের বছর ওই পুজো কমিটির প্রশাসনিক অনুমতি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও। শব্দাসুর রুখতে ভাসানগুলির উপর নজর রাখতে তিনি বিষ্ণুপুর থানাকে নির্দেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন