বার্তা দেবেন মমতা, আশায় পাথর শিল্প

বীরভূমে পাথর শিল্পাঞ্চলে অচলাবস্থা কাটাতে সমাধানসূত্র খুঁজবে মন্ত্রিগোষ্ঠী (গ্রুপ অফ মিনিস্টারর্স) ও বিভিন্ন দফতরের  সচিবদের নিয়ে গঠিত দু’টি পৃথক কমিটি— গত জানুয়ারি মাসে জয়দেবের মঞ্চ থেকে জেলার পাথর শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে জড়িতদের এমনই আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০০:০০
Share:

সাজগোজ: বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর জন্য গীতাঞ্জলির পিছনে তৈরি হচ্ছে হেলিপ্যাড। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

বীরভূমে পাথর শিল্পাঞ্চলে অচলাবস্থা কাটাতে সমাধানসূত্র খুঁজবে মন্ত্রিগোষ্ঠী (গ্রুপ অফ মিনিস্টারর্স) ও বিভিন্ন দফতরের সচিবদের নিয়ে গঠিত দু’টি পৃথক কমিটি— গত জানুয়ারি মাসে জয়দেবের মঞ্চ থেকে জেলার পাথর শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে জড়িতদের এমনই আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

দু’মাস পেরনোর পরও কি তার কোনও সমাধানসূত্র মিলল, বুধবার গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে সে কথাই জানতে চান ‘পাথর শিল্পাঞ্চল বাঁচাও কমিটি’র নেতারা।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী কাল সন্ধেয় বর্ধমান থেকে বোলপুরে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী। জানুয়ারিতে তিনি জেলা সফরে এলেও তেমন ভাবে প্রশাসনিক বৈঠক হয়নি। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে জেলায় উন্নয়নের হাল-হকিকত কী অবস্থায় রয়েছে, তা যাচাই করে দেখতেই বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে পাথর শিল্পাঞ্চলের অচলাবস্থা নিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানানো এবং মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনার ডাক পেয়েছেন ‘পাথর শিল্পাঞ্চল বাঁচাও কমিটি’র জেলা সভাপতি নাজির হোসেন মল্লিক, সহ-সভাপতি আসগর আলি এবং সম্পাদক কমল খান। তাঁদের কথায়, ‘‘আশা করছি মুখ্যমন্ত্রী ভাল কিছু খবর জানাবেন। আমাদের বক্তব্য কী হবে তা নিয়ে আজ রামপুরহাটে বৈঠক হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শোনার পর তা সবাইকে জানাতে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে ফের বৈঠক ডাকা হয়েছে।’’

Advertisement

পরিবেশ আদালতের ছাড়পত্র ও ‘ই-অকশন’-এর ভিত্তিতে লিজ না মেলায় বীরভূমের রাজগ্রাম, নলহাটি, রামপুরহাট, শালবাদরা, পাঁচামী, তালবাঁধ তথা মহম্মদবাজার মিলিয়ে পাথর শিল্পাঞ্চলের ২১৭টি খাদানের মধ্যে খাতায়-কলমে মাত্র ৬টি খাদান থেকে পাথর উত্তোলনের ছাড়পত্র রয়েছে। বাকিগুলি সরকারি ভাবে বন্ধ। বন্ধ থাকার কথা ১ হাজার ১৬৭টি পাথর ভাঙার কলেরও (ক্রাসার)।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, আগে খাদান থেকে পাথর তোলার অনুমোদন পেতে আবেদন করতে হত জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে। তার পর রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের অনুমোদন সাপেক্ষে ‘পারমিট’ মিলত। কিন্তু গত বছর জানুয়ারিতে পরিবেশ আদালত নির্দেশ দেয়— বালি, পাথর, মোরাম তুলতে গেলে পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র লাগবে। ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই প্রশাসনিক তরফে আরও একটি নির্দেশ জারি করা হয়। তাতে বলা হয়েছিল— সরকারি শর্ত পূরণ করে ‘ই-অকশন’ প্রক্রিয়ায় সামিল হতে হবে। তার ভিত্তিতেই মিলবে পাথর খাদানের লিজ।

কিন্তু বীরভূমের ক্ষেত্রে জটিলতা কাটাতে প্রধান অন্তরায় জেলার পাথর খাদানগুলির প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমিতে থাকা। খনিজ সম্পদে সরকারের অধিকার থাকলেও, ব্যক্তিগত জমি খাদানের জন্য নিলামে তোলার ক্ষেত্রে আইনগত বাধা রয়েছে। সে সব শর্ত পূরণ না হওয়ায় এরপরই
নোটিস জারি করে বেশিরভাগ পাথর খাদান বন্ধের নির্দেশ দেয় বীরভূম জেলা প্রশাসন।

পরিস্থিতি বদলে জেলায় ‘বন্ধ’ পাথর শিল্পাঞ্চলে অচলাবস্থা কাটাতে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে ছিল পাথর শিল্পাঞ্চল বাঁচাও কমিটি। গত ২৯ ডিসেম্বর জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে কমিটির নেতাদের হঁশিয়ারি ছিল— ‘১০ জানুয়ারির মধ্যে অচলাবস্থা কাটলে ভাল, না হলে জেলাজুড়ে পুরো বন্ধ থাকবে পাথর শিল্পাঞ্চল।’ জয়দেবে আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর সুর নরম করেন পাথর ব্যবসায়ীরা।

প্রশাসনের অন্দরমহলে শোনা গিয়েছে, কাগজ-কলেমে পাথর শিল্পাঞ্চল বন্ধ থাকলেও, বাস্তব পরিস্থিতি আলাদা। নিষেধাজ্ঞা না মেনেই কাজ চলছে ‘বন্ধ’ অনেক খাদানেই। কয়েক লক্ষ মানুষের রুজিরুটি যে হেতু জড়িয়ে,শিল্পাঞ্চল বন্ধের জন্য শক্তিপ্রয়োগ করলে তাই কয়েক লক্ষ মানুষ কর্মহীন হতে পারেন। তাতে ছড়াতে পারে উত্তেজনা। এই আশঙ্কায় কড়া পদক্ষেপ করতে চায়নি প্রশাসন। ঘুরপথে পাথর পরিবহণের সঙ্গে জড়িতদের কাছ থেকে জরিমানা করা হয়েছে। পাথর শিল্পাঞ্চল বাঁচাও কমিটির দাবি— কয়েকটি খাদান আড়ালে চলছে বলে প্রশাসনের জরিমানার কোপে পড়ে বিপন্ন পরিবহণ ব্যবসাও। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘কী ভাবে পাথর শিল্পাঞ্চল নিয়ে ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান সরকার সমধানসূত্র বের করেছে? শুধু ঝাড়খণ্ডেই ১৭০টি পাথরখাদান লিজ দেওয়া হয়েছে। সেই পথে কেন হাঁটছে না পশ্চিমবঙ্গের সরকার।’’

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়দেবের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরই জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা ঝাড়খণ্ডে গিয়েছিলেন। সেখানে ব্যাক্তিগত মালিকানাধীন জমি কী ভাবে লিজ দেওয়া হচ্ছে, সে সব তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্ট ও জেলার সমস্যা মেটাতে কোন পথে হাঁটা উচিত, জেলাশাসকের মাধ্যমে সেই বার্তা রাজ্য সরকারের কাছে গিয়েছে। মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করা হয়। এর পর সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে।

কমল খান, নাজির হোসেন মল্লিকরা বলছেন, ‘‘আমরাও সেটাই চাই। মুখ্যমন্ত্রীই রাজ্যের শেষ কথা। দেখি তিনি কী বলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন