Pregnant Migrant Labour

ঘরে ফেরার আনন্দেও বিষাদে সুনালী

এই পরিস্থিতিতে আগামী ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলার শুনানি রয়েছে। সে দিকেই তাকিয়ে সুনালী ও সুইটির পরিবার।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়  , রিন্টু পাঁজা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৪২
Share:

পাইকরের বাড়িতে জননী সুরক্ষা কার্ড হাতে সুনালী। ছবি: রিন্টু পাঁজা।

বাড়িতে ফিরলেন বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা পরিযায়ী শ্রমিক সুনালী খাতুন। তবে, ফেরেনি স্বস্তি। কারণ সুনালীর স্বামী দানিশ শেখ এখনও বাংলাদেশে আটকে। তাই ৩৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা সুনালী বুধবার রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পাইকরের দর্জিপাড়ায়, নিজের বাড়িতে ফিরেছেন ঠিকই। তবে, স্বগৃহে ফেরার আনন্দের সঙ্গী বিষাদও।

পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, ভাষার আঞ্চলিক টানের জন্য দিল্লিতে আধার কার্ড করার সময় সোনালি বিবি হয়ে যান সুনালী খাতুন। পরিবার জানাচ্ছে, বিয়ের পরে খাতুন কেটে বিবি করা হয়নি। ছ’মাস পরে দেশে ফিরেও নিজের বাড়িতে পা রাখতে পারেননি পরিযায়ী শ্রমিক সুনালী। এ দিন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে বললেন, ‘‘বাড়ি ফিরছি ভাল লাগছে, আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু, স্বামী এখনও দেশে ফেরেনি। স্বামী দেশে ফিরে বাচ্চার মুখ দেখুক এটাই চাই।’’ দানিশের মতোই বাংলাদেশে এখনও রয়ে গিয়েছেন সুনালীদের এলাকারই বাসিন্দা সুইটি বিবি এবং তাঁর দুই নাবালক সন্তান। তাঁদের পরিবারও উদ্বেগে।

এই পরিস্থিতিতে আগামী ১২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলার শুনানি রয়েছে। সে দিকেই তাকিয়ে সুনালী ও সুইটির পরিবার। সুনালী বলেন, ‘‘আমার স্বামী তো বাংলাদেশি নয়। তাও ওকে আমার মতো বাংলা কথা বলার জন্য বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ সুনালীর মা জ্যোৎস্না বিবি বলেন, ‘‘ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেছে, তাই আনন্দ হচ্ছে। কিন্তু, মেয়ের এখন একটাই দুঃখ। জামাই এখনও দেশে ফেরেনি।’’

গত জুন মাসে দিল্লিতে কর্মরত সুনালী-সহ ছ’জনকে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে দিল্লি পুলিশ। অসম সীমান্ত দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়। ২২ অগস্ট থেকে তাঁরা সে দেশের সংশোধনাগারে বন্দি ছিলেন। সম্প্রতি জামিন পান। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট সুনালী ও তাঁর ছেলেকে ফেরানোর নির্দেশ দেয়। বাকি চার জনকে ফেরানোর জন্য আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই পরিবার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ দিন দুপুরে পাইকরের গ্রামের বাড়িতে সুনালী ও তাঁর ছেলে ফিরতেই আত্মীয়স্বজন ও পড়শিরা তাঁদের দেখতে ভিড় করেন। বাবা ভদু শেখ মেয়েকে কাছে টেনে নেন। সুনালীর হাতে স্বাস্থ্য দফতর থেকে দেওয়া জননী সুরক্ষার কার্ড ধরিয়ে দেওয়া হয়। দানিশ, সুইটিও তাঁর দুই ছেলেকে দেশে ফেরানোর জন্য আইনি লড়াই চলছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ, পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ছ’মাস পরে সুনালী তাঁর আট বছরের ছেলেকে নিয়ে গত শুক্রবার রাতে মালদহের মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে দেশে ফেরেন। শনিবার দুপুরে সুনালীকে রামপুরহাট মেডিক্যালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করানো হয়। ছেলেও একই কেবিনে ভর্তি ছিল। চিকিৎসকেরা সুনালী ও তাঁর ছেলের বিভিন্ন পরীক্ষা করেন। মেডিক্যাল বুলেটিনে জানা যায়, সুনালী হাইপো থাইরয়েডিজম, মূত্রনালির সংক্রমণ এবং মাঝারি রক্তাল্পতায় ভুগছেন। অতিরিক্ত মেডিক্যাল সুপার, স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, অ্যানাস্থেটিস্ট, নার্সিং সুপারদের নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড হয়।

বুধবার সকালে মেডিক্যাল বোর্ড সুনালী ও তাঁর ছেলেকে পরীক্ষা করে স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল আছেন বলে জানান। এর পরেই দু’জনকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। দুপুরে অ্যাম্বুল্যান্সে ছেলেকে নিয়ে সুনালী পাইকরে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। সঙ্গী ছিলেন সুনালীর মা জোৎস্না বিবি ও মেয়ে আনিশা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন