স্কুলশিক্ষা দফতরের গাফিলতির অভিযোগ রামপুরহাটে

আয়কর নোটিস পাওয়ার আশঙ্কায় শিক্ষকেরা

স্রেফ স্কুলশিক্ষা দফতরের গাফিলতিতে আয়কর দফতরের রোষের মুখে পড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন রামপুরহাট মহকুমার প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি স্কুলশিক্ষক (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক)।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:০৫
Share:

স্রেফ স্কুলশিক্ষা দফতরের গাফিলতিতে আয়কর দফতরের রোষের মুখে পড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন রামপুরহাট মহকুমার প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি স্কুলশিক্ষক (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক)।

Advertisement

অভিযোগ, নির্দিষ্ট সময়ে কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরেও গত ন’মাস ধরে শিক্ষকদের আয়কর রিটার্নের নথি ও টাকা আয়কর দফতরে জমা করেননি স্কুলশিক্ষা দফতরের আধিকারিকেরা। রিটার্ন দাখিল করেও ওই আধিকারিকদের গাফিলতির জেরে যে কোনও দিন তাঁরা আয়কর দফতরের কাছ থেকে নোটিস পেতে পারেন— এমনই আশঙ্কা ওই ভুক্তভোগী শিক্ষকদের।

ইতিমধ্যেই এ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার দাবিতে জেলা ও মহকুমা স্কুলশিক্ষা দফতরে চিঠি দিয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি’ নামে একটি সংগঠন। সেই চিঠির প্রতিলিপি তারা সিউড়িতে জেলা আয়কর দফতর এবং জেলাশাসকের কাছেও জমা দিয়েছে। ওই শিক্ষক সংগঠনের জেলা সাধারণ সম্পাদক অধীরকুমার দাস জানাচ্ছেন, প্রধান শিক্ষকেরা প্রতি মাসে স্কুলের শিক্ষকদের আয়কর প্রদানের তালিকা স্কুলশিক্ষা দফতরে জমা দেন। তার ভিত্তিতে প্রদত্ত আয়করের পরিমাণ দেখে নিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বেতন থেকে কত টাকা কাটা যাবে, তার রিকুইজিশন মহকুমা স্কুলশিক্ষা দফতরে জমা পড়ে। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস অন্তর স্কুলশিক্ষা দফতর ডিডিও হিসাবে শিক্ষকদের প্রদত্ত আয়কর বেতন থেকে কেটে আয়কর দফতরে জমা করবে। অধীরবাবুর অভিযোগ, ‘‘২০১৬– ’১৭ আর্থিক বর্ষে রামপুরহাট মহকুমা স্কুলশিক্ষা দফতর দীর্ঘ ৯ মাস ধরে শিক্ষকদের আয়কর বাবদ প্রদত্ত টাকা আয়কর দফতরের কাছে জমা করেনি।’’

Advertisement

এ দিকে, গোটা ঘটনায় অনিশ্চয়তায় ভুগছেন মহকুমার শিক্ষকদের একটা বড় অংশ। রামপুরহাটের জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনের প্রধান শিক্ষক গৌরচন্দ্র ঘোষ, সাহাপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার সরকার, পাইকর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তাপস চট্টোপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল। এর দ্রুত সমাধান করা দরকার। তা না হলে মহকুমার প্রত্যেক শিক্ষক আয়কর দফতরের কোপের মুখে পড়তেই পারেন।’’ গত ৬ ডিসেম্বর পরিস্থিতির কথা জানিয়ে জেলা আয়কর দফতরকে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষকেরা। যদিও আয়কর দফতর কী পদক্ষেপ করবে, তা এখনও জানা যায়নি। এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি দফতরের আধিকারিকেরা।

এমনটা হল কী করে?

স্পষ্টতই মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তারা। কারও কাছে এ নিয়ে কোনও সদুত্তর নেই। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) রেজাউল হক শুধু বলেন, ‘‘শিক্ষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। সমাধানের জন্য মহকুমা স্কুল পরিদর্শককে নির্দেশ দিচ্ছি।’’ ঘটনার দায় নিতে চাননি মহকুমা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) দেবাশিস রায়চৌধুরীও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আয়কর বিভাগের উকিলের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বিষয়টি যাতে দ্রুত সমাধান করা যায়, তার চেষ্টা চলছে।’’ যদিও এমন জটিলতার নেপথ্যে দেবাশিসবাবুর গাছাড়া মনোভাবকেই দুষছেন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আয়কর দফতরকে অনলাইনে পাঠানো নথিতে মহকুমা স্কুল পরিদর্শকের ডিজিটাল স্বাক্ষর লাগে। গত জুলাইয়ে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পরে সেই ডিজিটাল স্বাক্ষর অনুমোদন নেওয়ার কাজটাই উনি এখনও পর্যন্ত করে উঠতে পারেননি।’’ আর তার জেরে গোটা পদ্ধতিটাই থমকে গিয়েছে বলে ওই শিক্ষকদের অভিযোগ। দেবাশিসবাবুর স্বীকারোক্তি, ‘‘খুব শীঘ্রই আয়কর দফতরের কাছে আমার ডিজিটাল স্বাক্ষর অনুমোদন করে নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন