পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে।—নিজস্ব চিত্র।
তাঁরা বর্তমান প্রজন্ম। ফলে তাঁরা যে বর্তমানের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে বেশি ওয়াকিবহাল, তাতে সন্দেহ কী! তাই বোধহয়, কালো টাকা রুখতে কেন্দ্রের পাঁচশো-হাজারের নোট বাতিলের জেরে আম জনতার দুর্ভোগ, মানুষের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরেও রাজনৈতিক স্বার্থে দলত্যাগ, বুলেট ট্রেনের প্রতিশ্রুতি দিয়েও কোনও আশার আলো না দেখা—এমনই নানা বিষয় উঠে এল কলেজ পড়ুয়াদের যুব সংসদ প্রতিযোগিতায়।
রাজ্য সরকারের সংসদীয় বিষয়ক দফতরের উদ্যোগে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার থেকে জেলার ২০টি কলেজকে নিয়ে শুরু হয়েছে ওই প্রতিযোগিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক প্রিয়নাথ হালদার জানিয়েছেন, কী ভাবে সংসদে ও বিধানসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কাজ করেন, কী ভাবে তাঁরা দেশের বা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার সমস্যা সংসদে বা বিধানসভায় তুলে ধরেন, কী ভাবে আইন প্রণয়ন হয়, এ সব বিষয়ে কলেজ পড়ুয়াদের অবগত করার লক্ষ্যেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। যুব সংসদ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপকরঞ্জন মণ্ডল।
এ দিন বান্দোয়ান কলেজের যুব সংসদের বিরোধী দলনেতা দীপঙ্কর মাহাতো প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন তোলেন, কালো টাকা বিলোপের নামে পুরনো পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট অচল করে দেওয়ায় দেশের মানুষ কতটা অসুবিধেয় পড়লেন, তা কি সরকার একবারও ভেবেছে? সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনও মুখ খোলেননি। কিন্তু, এখানে প্রধানমন্ত্রী সাজা অর্পিতা হালদার চটজলদি উঠে দাঁড়িয়ে জবাব দিলেন, এর ফলে মানুষ সাময়িক অসুবিধেয় পড়েছেন ঠিকই। তবে, এর সুফল মানুষ আগামী দিনে পাবেন। তা ছাড়া জনতার বড় অংশ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। বিরোধী দলনেতার পরের প্রশ্ন, বাজেটে বুলেট ট্রেনের কথা বলা হয়েছিল। বছর ঘুরতে চলল, কোথায় সেই ট্রেন? প্রধানমন্ত্রীর জবাব, ‘‘জাপানের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যেই দেশের মাটিতে বুলেট ট্রেন দেখতে পাব আশা করছি।’’
পুরুলিয়া নিস্তারিণী মহিলা কলেজের ছাত্রীরাও ছিলেন বিধানসভার প্রশ্নোত্তরে। সভা শুরু হবার পরেই বিরোধী নেত্রী মৌ ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকার ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। রাজ্যে শুধু উৎসব আর মেলা চলছে। কর্মসংস্থান হচ্ছে না। যা শুনে অর্থমন্ত্রী মৌমিতা সিংহ মহাপাত্রের জবাব, কর্মী নিয়োগ যদি না-ই হয়, তা হলে উন্নয়নের এত কাজ হচ্ছে কী ভাবে? মুখ্যমন্ত্রী পর্ণশ্রী দে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার কারও ধর্মঘটের অধিকার কাড়ার পক্ষে কখনওই নয়। তবে, রাজ্যে কাজের পরিবেশ বজা্য় রাখতে হবে। বিরোধী বেঞ্চের এক সদস্যা পরিষদীয় মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, এক দলের টিকিটে জিতে জনপ্রতিনিধিরা শাসক দলে যোগ দিচ্ছেন। দলত্যাগ আইন কোথায়। পরিষদীয় মন্ত্রীর জবাব, খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা হবে। সঙ্গে টিপ্পনী: ‘নিশ্চয়ই তাঁরা শাসক দলের উন্নয়নে আকৃষ্ট হয়ে যোগ দিচ্ছেন’।
বিধানসভার কাজকর্মে মুলতুবি প্রস্তাব, উল্লেখ পর্ব, আইন প্রনয়ন পর্ব, জিরো আওয়ার সবই উপস্থাপন করেছেন ছাত্রীরা। নিস্তারিণী কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রাণী দেব বলেন, ‘‘কী ভাবে বিধানসভার কাজকর্ম হয়, তা ছাত্রীদেরও জানা দরকার। এক দিন ওদেরও কেউ এই জায়গায় পৌঁছতে পারে।’’ প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্বে থাকা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক অশোক কুমার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘প্রত্যন্ত এলাকার কলেজ পড়ুয়ারা যে সংসদ বা বিধানসভার কাজকর্ম সম্পর্কে এতটা সচেতন হচ্ছে, তা দেখে ভালো লাগছে।’’
বান্দোয়ান কলেজের পড়ুয়া মৌমিতা দত্ত, দীপাঙ্কনা কর, পুরুলিয়ার নন্দিনী পাল, অনিমা রায়রা জানিয়েছেন, তাঁরা আগামী দিনে সংসদীয় রাজনীতিতে আসতে চান। তবে রাজনীতির অঙ্গন স্বচ্ছ হোক, এটাই তাঁদের চাহিদা।