বিয়ে রুখে পুরস্কার পাচ্ছে যমুনা

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে সম্প্রতি জেলায় চিঠি পাঠিয়ে যমুনাকে ওই পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করার কথা জানানো হয়েছে। শনিবারই বাবা ভীষ্ম মুদির সঙ্গে কলকাতায় গিয়েছে যমুনা। ইতিমধ্যে ওই মঞ্চে পুরস্কার নেওয়ার মহড়াও দিয়েছে সে।

Advertisement

সমীর দত্ত

মানবাজার শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ১৩:০০
Share:

সাহসিনী: যমুনা মুদি। —নিজস্ব চিত্র।

নিজের বিয়ে আটকাতে বাড়ি ছেড়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে একটি আবাসিক কোচিং সেন্টারে গিয়ে আশ্রয় চেয়েছিল মেয়েটি। সেখানে আশ্রয় পেয়েই পুঞ্চার মুদিডি গ্রামের স্কুল ছাত্রী যুমুনা মুদি নিজের বিয়ে আটকে দেয়। পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে পারছে। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে এলাকায় দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠা সেই যমুনার সাহসকে এ বার কুর্নিস জানাচ্ছে সরকার। কাল বৃহস্পতিবার কলকাতায় যমুনাকে ‘ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড’ দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই অনুষ্ঠানে থাকার কথা। পুঞ্চার বিডিও অজয় সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের ব্লকের যমুনা মুদি ‘ব্রেভারি অ্যাওয়ার্ড’-এর জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এতে অন্য মেয়েরাও সাহস পাবে।’’

Advertisement

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে সম্প্রতি জেলায় চিঠি পাঠিয়ে যমুনাকে ওই পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করার কথা জানানো হয়েছে। শনিবারই বাবা ভীষ্ম মুদির সঙ্গে কলকাতায় গিয়েছে যমুনা। ইতিমধ্যে ওই মঞ্চে পুরস্কার নেওয়ার মহড়াও দিয়েছে সে।

ভীষ্ম মুদির দুই মেয়ের মধ্যে যমুনা ছোট। ২০১৫ সালের মে মাসে পুঞ্চা গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী যমুনা তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। সেই সময় তারা বাবা বিয়ের ঠিক করে ফেলেছিলেন। কিন্তু সে আরও পড়তে চায়। বাড়ির লোকেদের বুঝিয়েও সে বিয়ে বন্ধ করতে পারেনি। শেষে বাড়ি থেকে পালিয়ে পুঞ্চা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছে শবর শিশুদের একটি আবাসিক কোচিং সেন্টারে গিয়ে সে আশ্রয় চায়। জানিয়েছিল, সে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু বাড়ির লোকজন তার কথায় গুরুত্ব দিচ্ছে না। কলকাতা পুলিশের কর্মী অরূপ মুখোপাধ্যায় ওই কেন্দ্রটি চালান। তিনি যমুনাকে সেখানে ঠাঁই দেন। পরে প্রশাসনও তার পাশে এসে দাঁড়ায়। নিজের স্কুলের হস্টেলে থেকে সে পড়াশোনা করার সুযোগ পায়।

Advertisement

বাড়ির লোকেরাও নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। যমুনা এখন নবম শ্রেণিতে। বাড়িও যায়। ভীষ্মবাবু বলছেন, ‘‘এলাকায় অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ের চল। সেই কথা ভেবে যমুনার বিয়ের কথা চালাচ্ছিলাম। এখন বুঝতে পারছি ওই সময় আমরা ভুল করতে যাচ্ছিলাম। মেয়ে জেদ ধরেছিল বলে সে আজ পুরস্কার পেতে যাচ্ছে। এটা কম গৌরবের কথা!’’ তিনিই এখন জানাচ্ছেন, মেয়ে যতদূর পড়তে চাইবে, পড়ুক। তাঁরা আর বাধা দেবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন