নিবেদিতা থেকে রোমা রল্যাঁ, মেলায় প্রদর্শনী

১৮৪৩ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক করেন, দীক্ষিত ব্রাহ্মদের নিয়ে একটি মেলা করবেন। নিজের আত্মজীবনীতে লিখছেনও সে স্মৃতি। ‘‘পরস্পরের এমন সৌহার্দ্য দেখিলাম, তখন আমার মনে বড়ই আহ্লাদ হইল। আমি মনে করিলাম যে, নগরের বাহিরে প্রশস্ত ক্ষেত্রে ইঁহাদের প্রতি পৌষমাসে একটা মেলা হইলে ভাল হয়।’’

Advertisement

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:৪৭
Share:

স্মরণ: পৌষমেলায় রবীন্দ্রভবনের প্রদর্শনী। নিজস্ব চিত্র

কেমন ছিল প্রথম যুগের মেলা?

Advertisement

ইতিহাস বলছে, এ মেলা শুরুর গল্প শান্তিনিকেতনে নয়। কলকাতার কাছেই গোরিটির বাগানে।

১৮৪৩ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক করেন, দীক্ষিত ব্রাহ্মদের নিয়ে একটি মেলা করবেন। নিজের আত্মজীবনীতে লিখছেনও সে স্মৃতি। ‘‘পরস্পরের এমন সৌহার্দ্য দেখিলাম, তখন আমার মনে বড়ই আহ্লাদ হইল। আমি মনে করিলাম যে, নগরের বাহিরে প্রশস্ত ক্ষেত্রে ইঁহাদের প্রতি পৌষমাসে একটা মেলা হইলে ভাল হয়।’’ ১৮৪৫-এর ৭ পৌষ, সে মেলা বসল গোরিটির বাগানে। সে মেলার ১৭ বছর পরে বোলপুরে জনবিরল প্রান্তরের মধ্যে দুটি নিঃসঙ্গ ছাতিম গাছের তলায় মহর্ষি সন্ধান পেলেন তাঁর শান্তিনিকেতনের। রায়পুরের জমিদারের কাছ থেকে সে শান্তির আশ্রয় মৌরসী স্বত্বে কিনেও নিলেন তিনি।
ট্রাস্টডিডে লিখলেন, ‘‘ধর্মভাব উদ্দীপনের জন্য ট্রাস্ট্রীগণ বর্ষে বর্ষে একটি মেলা বসাবার চেষ্টা ও উদ্যোগ করিবেন।’’ শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা প্রথম বসল ১৮৯৪ সালের ৭ পৌষ, মন্দিরের পাশের মাঠে ও ছাতিমতলার ছায়ায়।

Advertisement

সেই স্রষ্টা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম দ্বিশতবর্ষে তাঁকে স্মরণ করতে উদ্যোগী হয়েছে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন। ‘মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর: দ্বিশতবর্ষে ফিরে দেখা’— শীর্ষক প্রদর্শনীতে শান্তিনিকেতনের নানা রকম দলিলের দেখা পাওয়া গেল। যা আকৃষ্ট করেছে পর্যটকদের। ১৯০৫ সালে মহর্ষির প্রয়াণের আগে তিনি নিজের হাতে সই করে ‘পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি’ শান্তিনিকেতন আশ্রমের পরিচর্যার জন্য পুত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে করে দেন। সেই দলিলও চাক্ষুস করার সুযোগ পেয়েছেন পর্যটকেরা। দলিল ছাড়াও মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর পরিবার, তদানীন্তন আশ্রম, শান্তিনিকেতন গৃহ, উপাসনা গৃহ, ছাতিমতলার দুষ্প্রাপ্য কিছু ছবি স্থান পেয়েছে এই প্রদর্শনীর ন’টি প্যানেলে।

শুধু মহর্ষি নন। ফরাসি সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনস্ক চিন্তাবিদ রোমা রল্যাঁর সঙ্গে কবিগুরুর সম্পর্কের অনুধাবনে ওই একই প্রদর্শনীতেই তৈরি হয়েছে ‘রবীন্দ্রনাথ ও রোমা রল্যাঁ: সম্পর্কের স্মৃতি’। ‘Song Offerings’ এর জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর ঠিক দু’বছর পরে ১৯১৫ সালে রোমা রল্যাঁ ‘জ্যঁ ক্রিস্তফ’ গ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পান। তাঁদের মধ্যে অনবদ্য একটি বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯১৯ সাল থেকে তাঁদের মধ্যে শুরু হয় পত্র বিনিময়। ১৯২৬ সালে ফ্যাসিবাদের সমর্থক ইতালির মুসোলিনির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎ রোমা রল্যাঁকে হতাশ করে, কারণ তিনি ছিলেন ফ্যাসিবাদ বিরোধী। পরে কালিদাস নাগের সহায়তায় বন্ধুত্ব আবার সুদৃঢ় হয়। তাঁদের এই বন্ধুত্বেরই নিদর্শন ফুটে উঠেছে প্রদর্শনীতে।

সার্ধশতবর্ষে ভগিনী নিবেদিতাকে স্মরণ করতে তাঁর সঙ্গে কবিগুরুর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নিয়ে ‘রবীন্দ্রনাথ ও নিবেদিতা: সার্ধশতবর্ষের আলোকে’ শীর্ষক প্যানেল করা হয়েছে। ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ভগিনী নিবেদিতার সম্পর্ক, কবিগুরুর সঙ্গে তাঁর কেদারনাথ-বদ্রীনাথ-শিলাইদহ ভ্রমণ, বিদেশিনি হয়েও ভারতকে ভালবেসে সেবাধর্ম গ্রহণ— প্রতিটি বিষয়ের নিখুঁত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে প্যানেল দু’টিতে।

বিশ্বভারতীর উদ্ভাবনী শিক্ষা অধিকর্তা সবুজকলি সেন জানান, সার্ধশতবর্ষে নিবেদিতা এবং রোম্যাঁ রোলাঁকে রবীন্দ্রভবনের শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হয়েছে। বিদেশি হয়েও যে ভাবে তাঁরা ভারতকে ভালবেসেছেন, তা স্মরণীয়। সাধারণ মানুষদের কাছেও বিষয়টি পৌঁছনো দরকার। সেই জন্যই এই প্রয়াস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন