পিকনিকে ইচ্ছেমতো থার্মোকল

নতুন বছরের প্রথম দিনে ভিড় উপচে পড়ল পুরুলিয়ার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে। কনকনে ঠান্ডার মধ্যেও তল্পিতল্পা বেঁধে পিকনিকে বেড়িয়ে পড়লেন অনেকে। দূর থেকে পর্যটকেরাও এসেছিলেন আনন্দ কুড়োতে। কিন্তু প্রশাসনের প্রকৃতিরক্ষার ডাক শুনলেন ক’জন? ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।বড়দিনের আগে অযোধ্যা পাহাড়-সহ পুরুলিয়া জেলার বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্রে থার্মোকলের জিনিসপত্রের ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রশাসন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৯
Share:

অযোধ্যা পাহাড়ের আপার ড্যামের পাশে থার্মোকলের থালায় খাওয়া।নিজস্ব চিত্র

অবাধে থার্মোকল

Advertisement

বড়দিনের আগে অযোধ্যা পাহাড়-সহ পুরুলিয়া জেলার বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্রে থার্মোকলের জিনিসপত্রের ব্যবহারের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রশাসন। কিন্তু বড়দিনের মতোই এক সপ্তাহ পরে নতুন বছরের প্রথম দিনেও পাহাড় জুড়ে অবাধে থার্মোকলের থালা-বাটির ব্যবহার চোখে পড়েছে।

তবে কিছু লোকজন আবার শালপাতাও ব্যবহার করেছেন। তাঁদেরই কেউ কেউ বলেছেন, ‘‘পাহাড়ের রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়লেও থার্মোকলের ব্যবহারে নজরদারিতে করতে কাউকে দেখা গেল না।’’

Advertisement

এ দিন অবশ্য পাহাড়ের অস্থায়ী দোকানগুলিতে থার্মোকলের থালা বিক্রি করতে দেখা যায়নি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাঁরা থার্মোকলের থালা বিক্রি করছেন না। তবে পিকনিক দলের সদস্যেরা জানিয়েছেন, এখানে থার্মোকলের নিষেধাজ্ঞার কথা তাঁরা জানতে পারেননি বলে নিয়ে এসেছিলেন। ঝালদার বাসিন্দা রাজেশ কুইরী বলেন, ‘‘এখানে থার্মোকল চলবে না বলে আগাম কোনও প্রচার নেই। তা হলে শালপাতাই নিয়ে আসতাম।’’

তবে এর উল্টো ছবিও চোখে পড়েছে ঝালদার নরহরা জলাধার পিকনিক স্পটে। সেখানে অনেকে থার্মোকলের থালা, বাটি ব্যবহার করছেন দেখে, নিজেদের বাড়তি শালপাতা তাঁদের দেন ঝালদার একটি পিকনিট দলের সদস্যেরা। ওই দলের দেবাশিস দত্ত, তাপস কর্মকার, ফুচু বাগদি বলেন, ‘‘অনেকেই থার্মোকলের থালা নিয়ে এসেছেন। বাড়তি শালপাতা ও মাটির বাটি, গ্লাস ওঁদের দিয়েছি।’’ ভবিষ্যতে যাতে তাঁরা থার্মোকল আর ব্যবহার না করেন, সে জন্য অনুরোধও করেছেন।

এই জলাধারে পিকনিকে যাওয়া নয়নকুমার দে, অপর্ণা দে প্রমুখ বলেন, ‘‘আমরাও জানতাম না যে থার্মোকলের ব্যবহার চলে না। শালপাতা পেয়ে থার্মোকল আর ব্যবহার করিনি।’’ ফুটিয়ারিতে যাওয়া একটি দলের সদস্য উজ্জ্বল মোদকও দাবি করেন, তাঁরাও শালপাতাই ব্যবহার করেছেন। তবে এই সচেতনতা যত দ্রুত হয়, ততই মঙ্গল। কিন্তু এ জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের যে আরও সক্রিয়তা দরকার, সে কথা পিকনিক দলের সদস্যেরা বার বার বলেছেন।

শব্দের দাপট

হুড়ার ফুটিয়ারি জালাধারেও এ দিন ছিল চোখে পড়ার মতোই ভিড়। সকাল থেকে বিভিন্ন পার্টি দখল নিয়েছিল জলাধারের তির। তবে সাউন্ড বক্সের তীব্র দাপটে যাঁরা নিরিবিলি ভেবে এখানে পিকনিক সারতে এসেছিলেন, তাঁরা হতাশ হয়েছেন। দেখা গিয়েছে এক একটি দল একাধিক সাউন্ড বক্স লাগিয়ে পিকনিক সারছে। বাঁকুড়া থেকে আসা একটি দলের সদস্যের কথায়, ‘আমাদের কাছাকাছি যে কয়েকটি পিকনিক দলটি ছিল, তাঁরা এত জোরে বক্স বাজাচ্ছিলেন যে নিজেদের মধ্যে কথাও বলা যাচ্ছিল না। চিৎকার করে গলা ধরে গিয়েছে।’’ তাঁদের প্রশ্ন, পিকনিক স্পটে কী এ ভাবে বল্গাহীন ভাবে যথেচ্ছ সাউন্ড বক্সের ব্যবহার চলতে পারে?

এ ছাড়া কোটশিলার মুরগুমা জলাধার, কাশীপুরের কালীদহ জলাধার, বলরামপুরের কুমারী জলাধার, কানহা পাহাড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই। তবে এ দিন পুরুলিয়া শহরের উপকন্ঠে কংসাবতী নদীর বুকে তেমন ভিড় চোখে পড়েনি।

বাঘমুণ্ডির লহরিয়া শিব মন্দির এলাকায় পর্যটকদের বাসের ভিড়।নিজস্ব চিত্র

অযোধ্যা পাহাড়

প্রত্যাশা মতোই এ দিন পাহাড়ের উপরে বা পাহাড়তলিতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতোই। শুধু জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, রাজ্যের অন্য জেলা থেকেও পাহাড়ে পিকনিকে এসেছিলেন মানুষজন। এ দিন যাঁরা একটু বেলার দিকে পাহাড়ে পৌঁছন, তাঁদের জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়েছে। সকাল থেকে এত গাড়ি পাহাড়ে ওঠে যে দুপুরের দিকে অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের আপার ড্যাম থেকে বাঘমুণ্ডির দিকে নামার রাস্তায় বাঁধঘুটু পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার জুড়ে যানজট তৈরি হয়। কলকাতার রাজারহাট থেকে আসা শেখ ফরিদ বা পানাগড় থেকে আসা শেখ টিঙ্কু বলেন, ‘‘এখানকার প্রকৃত খুবই সুন্দর। বছরের প্রথম দিনটা খুবই ভাল কাটল।’’

গড়পঞ্চকোট

বড়দিন থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল নিতুড়িয়ার গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে। বছরের শেষ ও নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রত্যাশার থেকেও বেশি পর্যটক ভিড় জমালেন এখানে। পিকনিক করতে আসা লোকজনও প্রচুর এসেছিলেন। সবার কাছে মন্দিরক্ষেত্রের আকর্ষণ বেশি থাকায়, ভগ্ন হয়ে পড়া পঞ্চরত্নের ওই মন্দিরটির আমূল সংস্কার করেছে প্রশাসন। স্টিলের রেলিং দিয়ে মন্দিরটি ঘিরে দিয়েছে পঞ্চায়েত সমিতি। এতদিন পানীয় জল ও শৌচালয়ের সমস্যা ছিল। সম্প্রতি সেই অভাবও পূরণ হয়েছে। বছরের প্রথম দিনে পিকনিক করতে আসা লোকজন ও পর্যটকদের মধ্যে অনেকেই জানালেন, শৌচালয় ও জলের ব্যবস্থা হওয়ায় এ বার অনেকটাই সুবিধা হয়েছে। মন্দির লাগোয়া এলাকায় পিকনিকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অন্যত্র রান্নাবান্না সেরেছেন লোকজন।

জয়চণ্ডী পাহাড়

হীরক রাজার দেশের শ্যুটিং-র জন্য বিখ্যাত রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড়ের টান পর্যটকদের কাছে বরাবরই রয়েছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে এখানে বেড়াতে আসা লোকজনের কাছে বাড়তি পাওনা হল ‘পর্যটন উৎসব’। এ বার নতুন বছরের প্রথম দিনে দুপুরেও সত্যজিৎ রায় নামাঙ্কিত মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলের উদ্যোক্তারা। তাই পিকনিক সেরে দুপুরের দিকে অনেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন উৎসব প্রাঙ্গণে। সারলেন টুকিটাকি কেনাকাটাও। ইসকনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও ভিড় জমিয়েছিলেন অনেকে।

বড়ন্তি

সাঁতুড়ির এই পর্যটন কেন্দ্রে গত বছরের মতোই এ বারও বছরের প্রথম দিনে ভিড় হয়েছিল। পিকনিকের আসর বসেছিল বড়ন্তি পাহাড় ও পাশের মুরাডি জলাধারের তীরে। তবে জলাধারে স্নান করতে নেমে যাতে কেউ দুর্ঘটনায় না পড়েন, সে জন্য তৎপর ছিল পুলিশের। অবশ্য বড়ন্তিতে যাওয়ার রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে পিকনিক করতে আসা বহু লোকজনকেই অভিযোগ করতে শোনা গিয়েছে। তালবেড়িয়া থেকে বড়ন্তি বা রামচন্দ্রপুর থেকে বড়ন্তি যাওয়ার দু’টি রাস্তাই খানাখন্দে ভরে রয়েছে। ফলে গাড়ি করে সেখানে পৌঁছতে নাজেহাল দশা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের আশ্বাস, দু’টি রাস্তারই সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।

দোলাডাঙা

তিন কিলোমিটীর তফাতে বনপুকুরিয়া নদী ঘাটে পিকনিক দলের ভিড়ে সরগরম থাকলেও দোলাডাঙা বনভোজন প্রাঙ্গণে সোমবার দু’একটির বেশি দলকে দেখা গেল না। তাও পিকনিক করতে নয়। একটুখানি ঘোরাফেরা করে সবাই ডিয়ার পার্কের দিকে ভিড় জমিয়েছেন।

এর ফাঁকে একটি দলকে দেখা গেল নদীতে নৌকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওই দলের সদস্যে কেন্দার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক অনিল মাহাতো, চঞ্চল বিদ বলেন, ‘‘এখানে নিরিবিলি বেড়ানোর সুযোগ পেয়েছি। আমরা ডিয়ার পার্কের কাছে নদী ঘাটে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে ভিড় আর মাইকের উৎপাত দেখে খাওয়া সেরে এখানে পালিয়ে এলাম। অন্তত একটা দিন নিজেদের মতো করে কাটাবো বলে কোলাহল এড়িয়ে এখানে এসেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন