দুর্ঘটনায় পুলিশের গাড়ি

টহলে বেরিয়ে মৃত তিন

পুলিশকর্মীরা গাড়ির ভিতরেই ছিলেন। সেই সময়ে পিছন থেকে লোহার রড বোঝাই একটি ট্রেলার এসে ধাক্কা মারলে পুলিশ ভ্যানটি উল্টে রাস্তার পাশে খেতে পড়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রেলারটিও উল্টে পড়ে। গাড়ির মধ্যে থাকা আহত কনস্টেবলই ফোন করে থানায় খবর দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আড়শা শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৮
Share:

এএসআই অরূপ চেল ও  কনস্টেবল রামনাথ মাহাতো।  নিজস্ব চিত্র

রাতের জাতীয় সড়কে ট্রেলারের ধাক্কায় মৃত্যু হল কর্তব্যরত দুই পুলিশকর্মী-সহ তিন জনের। শুক্রবার রাতে পুরুলিয়া-জামশেদপুর (৩২ নম্বর) জাতীয় সড়কে আড়শা থানা এলাকার ধানাড়া গ্রামের কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘আড়শা থানার ওই পুলিশকর্মীরা সড়কে টহল দিতে বেরিয়েছিলেন। পিছন থেকে রড বোঝাই একটি ট্রেলার পুলিশের গাড়িতে ধাক্কা মারে।’’ মৃতেরা হলেন এএসআই অরূপ চেল (৪৫), কনস্টেবল রামনাথ মাহাতো (৫৯) এবং চালক সহদেব গড়াত (২৪)। অনিল তামাং নামে আরও এক পুলিশ কনস্টেবল দুর্ঘটনায় জখম হয়েছেন।

Advertisement

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত পৌনে ১২টা নাগাদ রাস্তার ধারে পুলিশের ভ্যানটি দাঁড়িয়েছিল। ফাঁকা রাস্তা। কনকনে শীত। পুলিশকর্মীরা গাড়ির ভিতরেই ছিলেন। সেই সময়ে পিছন থেকে লোহার রড বোঝাই একটি ট্রেলার এসে ধাক্কা মারলে পুলিশ ভ্যানটি উল্টে রাস্তার পাশে খেতে পড়ে যায়। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রেলারটিও উল্টে পড়ে। গাড়ির মধ্যে থাকা আহত কনস্টেবলই ফোন করে থানায় খবর দেন।

কাছাকাছি থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পুলিশ কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। গাড়ির ভিতর থেকে সবাইকে উদ্ধার করে পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক জানান, তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম কনস্টেবলকে ভর্তি করানো হয়। তাঁর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের সালুয়াতে। পরে পরিজনেরা এসে তাঁকে নিয়ে যান।

Advertisement

এএসআই অরূপ চেলের বাড়ি পুরুলিয়া শহরের নডিহা এলাকায়। কনস্টেবল রামনাথ মাহাতো কোটশিলার বেগুনকোদর এবং চালক সহদেব গড়াত আড়শার তুম্বা-ঝালদা গ্রামের বাসিন্দা। এ দিন নডিহা এলাকার অনেক বাসিন্দা পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের মর্গে এসেছিলেন। অরূপের দাদা সঞ্জয় চেল বলেন, ‘‘রাতেই খবরটা পেয়েছিলাম। হাসপাতালে এসে দেখি সব শেষ। বিশ্বাসই করতে পারছি না যে ভাই আর নেই।’’ পড়শি চঞ্চল সেন বলেন, ‘‘খবরটা শোনার পরে অরূপবাবুর স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’’ অরূপবাবুদের দুই ছেলে। বড় ছেলে অনুব্রত এ বছরই সপ্তম শ্রেণিতে উঠেছে। ছোট ছেলে অর্পণ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।

বিশেষ বাঁক না থাকা ফাঁকা রাস্তায় কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পরে ট্রেলারের চালক এবং খালাসি পালিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের খোঁজ চলছে। রড কোথা থেকে আসছিল তা-ও এখনও জানা যায়নি।

শনিবার পদস্থ পুলিশ কর্তারা দুর্ঘটনাস্থল সরজমিন পরিদর্শন করেন। বলরামপুর থেকে আসার পথে জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোও সেখানে যান। এ দিন পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে তিনটি দেহ বেলগুমা পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। তিন জনকেই শেষ শ্রদ্ধা জানান জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পারিজাত বিশ্বাস, বৈভব তিওয়ারি ও পদস্থ পুলিশ কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন