প্রতীকী ছবি।
পায়ের কাছে পড়ে একটি দড়ির টুকরো। আর সেটাকেই জ্যান্ত সাপ বলে বিশ্বাস করছিলেন রামপুরহাট মহকুমা এলাকার এক যুবক!
পরিজন এবং তার আশপাশের লোকজন বোঝানো সত্বেও কিছুতেই ওই যুবককে তাঁর বিশ্বাস থেকে টলানো যায়নি। ঠিক যেমন টিভি দেখতে বসলেই নানুর এলাকার এক গৃহবধূর কেবলই মনে হয়, কেউ কোনও সাঙ্কেতিক বার্তা পাঠাতে চাইছে টিভিতে। এবং সেটা ক্ষতিকর। না এক্ষেত্রেও বধূর বিশ্বাস থেকে সরাতে পারেননি তাঁর পরিজনেরা। এখনও না।
এমনিতে অন্যান্য আচরণ স্বাভাবিক মনে হলেও আর পাঁচজন মনোরোগীর সঙ্গে এঁদের গুলিয়ে ফেলা ভুল হবে। উভয়েই স্কিৎজোফ্রেনিয়া নামক এক মারাত্মক মানসিক ব্যাধির শিকার। যাঁরা এ রোগে আক্রান্ত তাঁরা তো বটেই তাঁদের পরিবার পরিজনেরা অত্যন্ত অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েন। আজ ২৪ মে বিশ্ব স্কিৎজোফ্রেনিয়া দিবস। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোট ১০০ জন মনোরোগীর ১-২ শতাংশ এই রোগের শিকার। কিন্তু মুশকিল হল রোগটি নিয়ে তেমন স্বচ্ছ ধারণা নেই সিংহভাগ মানুষের। এমনকী মনরোগের মধ্যে স্কিৎজোফ্রেনিয়াকে আলাদা করে চিহ্নিত করাও রীতিমত কঠিন কাজ।
জেলা স্বাস্থ্যদফতর এই রোগ নিয়ে কী প্রচার বা সচেতনতা গড়ে তুলতে কোনও কর্মসূচি নিয়েছে?
জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘না তেমন কোনও কর্মসূচি নেই। জেলায় এই মুহূর্তে কত রোগী আছে বা তাঁদের জন্য ঠিক কী পরামর্শ সিউড়ি জেলা হাসপতালে দু’জন মনোরগের চিকিৎসক রয়েছেন তাঁরাই সেটা বলতে পারবেন।’’
কী লক্ষণ এই রোগের?
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কাল্পনিক দৃশ্য দেখা বা আওয়াজ শুনতে পাওয়া অথবা মনে অদ্ভুত ধারণা জন্মে যাওয়া এই রোগের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। যার সঙ্গে এগুলো হচ্ছে তিনি সবকিছু সত্যি মনে করেন। এ ছাড়া অযৌক্তিক এবং অস্বাভাবিক চিন্তা ভাবনা এবং কথাবার্তা, সন্দেহপ্রবণ মন, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা এবং লোকসঙ্গ এড়িয়ে চলার মতো কাজ করে থাকেন আক্রান্তরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত, সঠিক সময় চিকিৎসা না শুরু হলে ব্যক্তি আরও হিংস্র হয়ে উঠতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ১৫ বছর থেকে ৩০ বছর বয়সের ছেলে বা মেয়ে দু’জনেরই এই রোগ হতে পারে।
সিউড়ি জেলা হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এই রোগ মূলত জিন ঘটিত। বাবা মা এর থেকেই সন্তানের মধ্যে এই রোগ আসে। অথবা নিজেদের অত্মীয় স্বজন বা এক বর্ণ বা পরিবারের মধ্যে বিয়ে হলে রোগের সম্ভবানা বেশি থাকে।’’
তিনি জানাচ্ছেন, স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যেও রোগীদের অবস্থা অনুযায়ী ভাগ করা হয়। সম্পূর্ণভাবে এই রোগ সারানো সম্ভব নয়, তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারে রোগী। তবে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে সেই সুযোগ থাকে না।