রামপুরহাট মহকুমাশাসকের কার্যালয় এ ভাবেই ঘিরে রাখলেন তৃণমূল কর্মীরা। সোমবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
সোমবার থেকে নলহাটি পুরভোটের মনোনয়ন পর্ব শুরু হল। আর ঠিক সে দিন থেকেই ২১ শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভাকে সামনে রেখে রামপুরহাট মহকুমাশাসকের কার্যালয়কে অবরুদ্ধ করে রাখলেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। বাম-কংগ্রেস এবং বিজেপির মিলিত অভিযোগ, বিরোধীরা যাতে মনোনয়ন তোলা-জমা করতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করতেই পরিকল্পনা করে জমায়েত করেছে শাসকদল। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দেওয়ার মতো প্রার্থী নেই বুঝে আগেভাগেই নাটক শুরু করে দিয়েছে বিরোধীরা।
ঘটনা হল, ঠিক যে সময় থেকে মনোনয়ন পর্ব শুরু হওয়ার কথা, সেই সকাল দশটা থেকেই একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা শুরু করে তৃণমূল। সভা চলে মনোনয়ন পর্ব যতক্ষণ, ঠিক ততক্ষণই। বিকেল তিনটে পর্যন্ত। বিরোধীদের অভিযোগ, সবটাই হয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের চোখের সামনেই। বারবার বলার পরেও তৃণমূল সমর্থকদের সরাতে কোনও পদক্ষেপই নেয়নি তারা। যার নিট ফল, এ দিন সাকুল্যে তিনটি মনোনয়ন পত্র তোলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে নলহাটির পুরভোট শান্তিপূর্ণ করতে সোমবার সন্ধ্যায় রামপুরহাটের মহকুমাশাসকের অফিসে সর্বদলীয় বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ছিলেন নলহাটি পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার তথা রামপুরহাট মহকুমাশাসক সুপ্রিয় দাস, রামপুরহাট এসডিপিও ধৃতিমান সরকার, রামপুরহাট থানার আইসি, নলহাটি থানার অফিসার ইন-চার্জ। বৈঠকে তৃণমূলের তরফে ছিলেন বিধায়ক মইনুদ্দিন শামস, রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্য, নলহাটি ১ ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষ, ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায়, বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস চৌধুরী এবং কংগ্রেসের প্রতিনিধি। বিজেপির শুভাশিস চৌধুরী মনোনয়নপত্র দাখিলে ১৪৪ ধারা প্রয়োগের দাবি তোলেন। এ ব্যাপারে মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘প্রয়োজনে তা প্রয়োগ করা হবে। তবে এখনই সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’’
এ দিন সকালে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা গেল, ২১ শে জুলাইয়ের প্রস্তুতি ঘিরে সাজ সাজ রব। পুলিশের সামনেই তৃণমূল কর্মীরা লাঠি, পাইপের সঙ্গে দলীয় পতাকা বেঁধে সকাল দশটা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত নিজেদের দাপটও দেখায়। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা মনোনয়ন তুলতে এলে গোলমালের আশঙ্কা ছিলই। এ নিয়ে বীরভূম জেলা বামফ্রন্ট কমিটির পক্ষে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মণ আগেই দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নে নিরাপত্তার দাবি তুলে রামপুরহাটের মহকুমাশাসক এবং রামপুরহাট মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের কাছে প্রশাসনিক সহযোগিতার আবেদন করেছিলেন। তারপরেও কাজের কাজ না হওয়ায় ক্ষুব্ধ জেলা বামফ্রন্ট।
তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিকে সকাল দশটা থেকে রামপুরহাট মহকুমার আটটি ব্লকের কয়েক’শো তৃণমূল কর্মী মহকুমা প্রশাসনিক কার্যালয়ের সামনে সমবেত হতে থাকেন। রামপুরহাট মহকুমা পর্যবেক্ষক ত্রিদিব ভট্টাচার্যের নির্দেশেই জমায়েত বলেও জানা গিয়েছে। জমায়েতে থাকা অধিকাংশের হাতে ছোট ছোট প্লাস্টিকের পাইপের সঙ্গে তৃণমূলের পতাকা বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দলের নির্দেশ মতো এ দিন মহকুমার প্রতিটি পঞ্চায়েত থেকে ২৫ জনের দল উপস্থিত ছিল। রামপুরহাট টাউন থেকে শুরু করে মহকুমার প্রতিটি ব্লকস্তরের নেতৃত্ব থেকে পঞ্চায়েত স্তরের নেতৃত্ব, জেলা পরিষদের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয়নে বাধা দিতেই এই জমায়েত তা মানতে চাননি ত্রিদিববাবু। তিনি বলেন, ‘‘২১ শে জুলাইয়ের কর্মসূচি হিসেবে সোমবার থেকে শুরু করে ২০ জুলাই পর্যন্ত রামপুরহাট মহকুমা প্রশাসনিক ভবনের সামনে দলীয় কর্মসূচি হিসেবে পথসভার ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই কর্মসূচিতে দলের কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।’’ যোগ করছেন, ‘‘বিরোধীরা মনোনয়ন দাখিল করতে পারবে বুঝেই তৃণমূল কর্মীদের নামে অপপ্রচার করছেন।’’