তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের বেশ কিছু কাজে আপত্তি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন তিনি। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই দলেরই ওই উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন তৃণমূল সদস্যেরা। কিন্তু, তলবি সভার আগেই পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন সাহাপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়।
সোমবার তিনি প্রধান এবং রামপুরহাট ২ বিডিও-র কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। কেন ইস্তফা? বিপ্লববাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘‘আমি কোনও দিন কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকিনি। ব্যক্তিগত কারণে উপপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিলাম।’’ বিপ্লববাবু মুখে কিছু না বললেও জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দলের নিষেধ উপেক্ষা করে তিনি পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। তার জেরেই উপপ্রধানের ভূমিকায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ হয়। তাই রাতারাতি বিপ্লববাবুর বিরুদ্ধে দলের নির্দেশে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন পঞ্চায়েতের ১৪ জন তৃণমূল সদস্য। আগামী ১৫ মার্চ তলবি সভা হওয়ার দিন ধার্য করেছিল ব্লক প্রশাসন।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফলের নিরিখে ২০ আসনের সাহাপুর পঞ্চায়তে দলগত অবস্থান ছিল— তৃণমূল ৮, ফরওয়ার্ড ব্লক ৬,কংগ্রেস ৩, সিপিএম ২ এবং বিজেপি ১। কংগ্রেসের সমর্থনে প্রধান হন ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রশান্ত মণ্ডল। উপপ্রধান হন তারাপীঠ সংসদ থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। এক বছর পরে বিপ্লববাবু-সহ কংগ্রেসের তিন সদস্যই তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূলের আনা অনাস্থায় প্রশান্তবাবু পদচ্যূত হন। নতুন প্রধান হন তৃণমূলের ভূবনচন্দ্র মণ্ডল। আর বিপ্লববাবু উপপ্রধান পদেই থেকে যান। গত বছর ফব-র চার সদস্য যোগ দেওয়ায় ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূলের আরও শক্তিবৃদ্ধি হয়।
তারাপীঠ শ্মশান এলাকায় পর্ষদের নানা রকম কাজকর্মে শ্মশানের পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে— এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছেন বিজেপি-র জেলা সাধারণ সম্পাদক শুভাশিস চৌধুরী। তার কিছু দিনের মধ্যে বিপ্লবাবুও পর্ষদের কাজে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। বিপ্লববাবুর দাবি, পর্ষদ তারাপীঠে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করলেও শ্মশানের গাছ কেটে, মহাপুরুষদের সমাধি বেদী ভেঙে দেওয়ায় ঐতিহ্য হারাচ্ছে শ্মশান এলাকা। আর ওই সমস্ত কাজের ব্যাপারে তাঁকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। বিপ্লববাবুর দাবি ছিল, ‘‘আমি পঞ্চায়েতের সদস্য হওয়ায় এলাকার লোকজন আমার কাছে জবাব চাইছেন। তাই আদালতের দ্বারস্থ হলাম।’’
মামলার শুনানিতে গত শুক্রবারই পর্ষদকে তারাপীঠ শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লির জন্য প্রয়োজনীয় নির্মাণ ছাড়া অন্য কোনও নির্মাণ আগামী তিন সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ। পাশাপাশি পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে কী কী কাজ সেখানে করা হচ্ছে, কাজের নকশাই বা কী— তা সবিস্তারে হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
দলেরই উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা কেন? পঞ্চায়েত প্রধান ভূবনচন্দ্রের সাফ কথা, ‘‘তারাপীঠে পর্ষদ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করছে। শ্মশানেও পরিবেশ আদালতের নির্দেশে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। বিপ্লববাবু সে সব কিছু না দেখেই অন্যের দ্বারা পরিচালিত হয়ে আদালতে মামলা করেছেন। তাই ওঁর বিরুদ্ধে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে অনাস্থা আনা হয়েছে।’’ অনাস্থা সভার আগেই উপপ্রধান পদত্যাগ করায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত প্রশাসনই নেবে বলে জানান প্রধান। বিপ্লববাবু এ দিনও অবশ্য দাবি করেন, ‘‘পর্ষদ তারাপীঠে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে, এ কথা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। কিন্তু, তার পরেও বলতে দ্বিধা নেই যে, তৃণমূলের উপপ্রধান হয়েও তারাপীঠের উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রে আমার সঙ্গে আলোচনাই করা হয়নি।’’