সিদ্ধান্ত জেলা তৃণমূলের বৈঠকে

অন্তর্ঘাতের ভূতেই বহিষ্কৃত তিন নেতা

সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা ভোটে ‘অন্তর্ঘাত’-এর অভিযোগ তুলে তিন নেতাকে দল থেকেই বহিষ্কার করলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি সংস্কৃতি অঙ্গনে দলের জেলা কমিটির বর্ধিত বৈঠকে ওই কথা ঘোষণা করেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

Advertisement

মহেন্দ্র জেনা

বোলপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০১:২৫
Share:

মঞ্চে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। নিজস্ব চিত্র।

সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা ভোটে ‘অন্তর্ঘাত’-এর অভিযোগ তুলে তিন নেতাকে দল থেকেই বহিষ্কার করলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার বোলপুরের গীতাঞ্জলি সংস্কৃতি অঙ্গনে দলের জেলা কমিটির বর্ধিত বৈঠকে ওই কথা ঘোষণা করেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রের খবর ওই তিন নেতা হলেন— জেলা সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান রামপুরহাটের নুরুল ইসলাম ওরফে টম, জেলা কমিটির দুই সদস্য মহম্মদ গিয়াসউদ্দিন এবং কুদরতে খোদা। স্বাভাবিক ভাবে তিন জনের কেউই দলবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা মানতে চাননি। দ্বিতীয় ইনিংসে দু’শোরও বেশি আসন নিয়ে জিতে আসার পরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিস্কার করে দিয়েছিলেন বেশ কিছু আসনে হার হল কেন, তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। সেই মর্মে নির্দেশও দেন জেলা নেতৃত্বকে। এ দিনের ওই সিদ্ধান্ত তারই ফলশ্রুতি বলে মনে করছেন জেলা রাজনীতির রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।

এ দিকে বহিষ্কারের খবরে বিষ্মিত ওই তিন নেতা। তৃণমূলের জেলা কমিটির সদ্য বহিষ্কৃত সদস্য মহম্মদ গিয়াসউদ্দিন দাবি করেছেন, নলহাটি ২ ব্লকে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা তিনিই। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘দলের হয়ে বিধানসভা ভোট করতে গিয়ে প্রবল খেটেছি। হাঁটাহাঁটির চোটে হাঁটুর ব্যাথায় এখনও ভুগছি। অথচ শুনছি আমি নাকি দলের হয়ে ভোট করাইনি। সে জন্য দল বিরোধী কার্যকলাপে বহিস্কার করা হয়েছে।”

Advertisement

মহম্মদ গিয়াসউদ্দিনের আবার ক্ষোভ, ‘‘বহিস্কারের আগে কোনও রকম ব্যাখ্যা চাওয়া হয়নি।’’ তিনি যোগ করেেন, ‘‘আমি চাঁদু (মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ), বিকাশ (জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী), মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলব। সর্বোপরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করেছি সুতরাং তাঁকে ভোট দেওয়ার অধিকার কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’’

তৃণমূলেরই একটি সূত্রের খবর, জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি পদ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সিউড়ি মহকুমার নুরুল ইসলাম এবং রামপুরহাট মহকুমার নুরুল ইসলাম (টম) এর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই রয়েছে। টমের বরাবরের দাবি, সংখ্যালঘু সেলের প্রদেশ নেতৃত্ব হাজি নুরুল ইসলাম তাঁকে সংখ্যালঘু সেলের বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দায়িত্ব দিয়েছেন। সিউড়ির নুরুল ইসলামের আবার দাবি, তিনি-ই জেলা সভাপতি। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, অনুব্রতর নির্দেশে সিউড়ির নুরুলই সংখ্যালঘু সেলের দায়িত্ব পালন করছেন। অনেকের মতে, ইতিমধ্যে টমের বিরুদ্ধে জোট প্রার্থীর হয়ে ভোট করানোর অভিযোগ ওঠায় তা বিপক্ষে গিয়েছে।

জেলা কমিটির সদ্য বহিষ্কৃত সদস্য খুদরতে খোদা বলেন, “এই বয়সে আমার কোনও মন্তব্য বা ক্ষোভ নেই। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলাম, আছি থাকব।’’

বস্তুত, ভোটের আগে জেলা সভাপতি অনুব্রত হুঙ্কার ছেড়েছিলেন, জেলার ১১টি আসনের মধ্যে সবক’টিতেই তৃণমূলের প্রার্থীরা জিতবেন। হয়েছে ৯-২। নানুর এবং হাঁসন কেন্দ্র হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। হাঁসন কেন্দ্রটি অবশ্য এর আগে কংগ্রেসের দখলে ছিল। কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মাল দলবদলের পর ওই কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে আসে।

জেলা তৃণমূলের একটি সূত্রের মত, হাঁসন নিয়ে অনুব্রতর খুব একটা গাত্রদাহ না হলেও, গত বারে জেতা নানুরের হারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। স্বভাবতই এ দিনের বৈঠকে নানুর নিয়ে উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কৌতূহল ছিল। বৈঠকে দেখা গিয়েছে নানুরের প্রার্থী গদাধর হাজরাকেও।

তবে নানুর নিয়ে অনুব্রতকে খুব কড়া কথা বলতে শোনা যায়নি। কেন? তৃণমূলেরই একটি সূত্রের মত, নানুরে হারের পিছনে অন্যতম ভূমিকা রয়েছে দলেরই দাপুটে নেতা কাজল শেখের। কিন্তু এর আগে একাধিক বার কাজলকে বহিস্কারের কথা ঘোষণা করেছেন অনুব্রত। তারপরেও নানুরে কার্যত রাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কাজল।

এক নেতার কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে কাজলকে আর নতুন করে বহিস্কারের সুযোগ জেলা সভাপতির হাতে ছিল না।’’

তবে কিছুটা নানুরে দলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যকে এক হাত নিয়েছেন অনুব্রত। দলেরই একাংশ জানিয়েছেন, এ দিন জেলা সভাপতি নানুরের ব্লক সভাপতিকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু পদ আঁকড়ে থাকলে চলবে না। দল করতে হলে ভাল ভাবে করতে হবে। নইলে দল করার আরও অনেক লোক রয়েছেন। অনুব্রতর মন্তব্য সম্পর্কে সুব্রতবাবু পাল্টা কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

বিধানসভা ভোটে আর যে সব নেতাকর্মী অন্তর্ঘাতে জড়িত ছিলেন, তদন্ত করে জেলা সভাপতি অনুব্রত তাঁদেরও সরিয়ে দেওয়ার ভার দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্লক এবং অঞ্চল সভাপতিদের। দুর্নীতি রোধেও কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছেন অনুব্রত। কর্মীদের উদ্দেশে জানান, দুর্নীতির দায়ে শীঘ্রই তিন জন প্রধান জেলে যেতে চলেছেন। এঁরা কোন তিন জন, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি।

(তথ্য সহায়তা: অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন