দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিন পালন করছেন অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।
বীরভূমে আবার কেষ্ট-যুগ! জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির কনভেনর (আহ্বায়ক) হলেন অনুব্রত মণ্ডল। সোমবার তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রাঙাবিতানে’ ডেকে পাঠিয়েছিলেন কোর কমিটির সমস্ত সদস্যকে। ছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি অনুব্রতও। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে মমতা ঠিক করে দেন কোর কমিটির আহ্বায়ক হবেন তাঁর স্নেহের কেষ্টই!
গরুপাচার মামলায় অনুব্রত জেলবন্দি হওয়ার পর ২০২২ সালে জেলা সংগঠনের কাজকর্মের দেখভাল এবং পরিচালনার জন্য কোর কমিটি তৈরি করে দেন তৃণমূলের সর্বময়নেত্রী মমতা। জামিনমুক্ত অনুব্রত জেলায় ফেরার পরেও সেই কোর কমিটিই কাজ চালাচ্ছিল। বস্তুত, মমতা বার বার বার্তা দিয়ে এসেছেন, বীরভূমে তাঁর দলের সংগঠনের সমস্ত ভার ওই কোর কমিটির উপরে। প্রথমে ৯ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল সিউড়ির বিকাশ রায়চৌধুরীকে। পরে ওই পদ খালি ছিল। চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব নেন রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। মাস কয়েক আগে ওই কমিটির সম্প্রসারণ হয়। তাতে জায়গা দেওয়া হয় অনুব্রতকেও। এ ছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন অভিজিৎ সিংহ, চন্দ্রনাথ সিংহ, সুদীপ্ত ঘোষ, কাজল শেখ প্রমুখ। তা ছাড়া দুই সাংসদ শতাব্দী রায়, অসিত মালও কোর কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য। তাঁদের উপর জেলা সংগঠন চালানোর ভার পড়েছিল। এ বার সেই ‘গুরুদায়িত্ব’ তুলে দেওয়া হল কেষ্টর হাতেই।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে জেলা সভাপতির পদটাই তুলে দেয় তৃণমূল। পদ অবলুপ্তির ফলে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি থেকে স্রেফ তৃণমূল নেতা হয়ে যান অনুব্রত। বস্তুত, প্রায় ২ বছর পরে বীরভূমে ফেরার পরে অনুব্রতের সঙ্গে কোর কমিটির ‘সংঘাত’ দেখা গিয়েছে। প্রকাশ্যে কেউ না-মানলেও জেলা তৃণমূলের অন্দরের ফিসফাস ছিল, মমতার গড়ে দেওয়া কোর কমিটিকে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দিয়ে ‘অপারেশন বোলপুর’ চালাচ্ছেন অনুব্রত। তার মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। সমান্তরাল ভাবে কেষ্ট তাঁর পারিষদদের নিয়ে ব্লকে ব্লকে কর্মসূচি করে ২০২৬ সালের ভোটের প্রচার করে গিয়েছেন। অন্য দিকে, অনুব্রতের ওই সমস্ত কর্মসূচি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন কোর কমিটির অন্যতম সদস্য তথা বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ।
এর মধ্যে গত মাসে নতুন বিতর্কে জড়ান কেষ্ট। বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোনে গালিগালি করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। দু’জনের কথোপকথনের অডিয়ো ভাইরাল হতেই শোরগোল শুরু হয় (যদিও সেই অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)। তবে অনুব্রতর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। দুটি জামিন অযোগ্য-সহ মোট চারটি ধারায় ‘দোর্দণ্ডপ্রতাপ’ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। তাঁকে নোটিস পাঠিয়ে থানায় তলব করা হয়। কিন্তু তিনি হাজিরা দেননি। জানিয়েছিলেন, অসুস্থ। পরে অবশ্য হাজিরা দেন। পাশাপাশি, ভিডিয়ো বার্তায় পুলিশ-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহলের কাছে ক্ষমা চান কেষ্ট। বীরভূম সফরে গিয়ে সেই কেষ্টর হাতেই ‘বাঁশি’ তুলে দিলেন তৃণমূলনেত্রী।