বিরোধী ভাঙিয়ে অনাস্থায় জয়ী

ফের অনাস্থা পুরুলিয়ার পঞ্চায়েতে। এ বার সিপিএম ও বিজেপির সদস্যদের নিজেদের দিকে টেনে নিতুড়িয়া ব্লকের রায়বাঁধ পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধানকে অপসারিত করল তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আড়শা ও নিতুড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৬ ০১:৫২
Share:

ফের অনাস্থা পুরুলিয়ার পঞ্চায়েতে। এ বার সিপিএম ও বিজেপির সদস্যদের নিজেদের দিকে টেনে নিতুড়িয়া ব্লকের রায়বাঁধ পঞ্চায়েতের বিজেপির প্রধানকে অপসারিত করল তৃণমূল। বুধবার ওই পঞ্চায়েতের অনাস্থার তলবি সভায় অপসারিত হয়েছেন বিজেপির প্রধান অনল মুর্মু।

Advertisement

এই পঞ্চায়েতটি দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির সঙ্গে জোট করে চালাচ্ছে তৃণমূল। গত পঞ্চায়েতে নির্বাচন ১১টি আসনের মধ্যে সিপিএম, বিজেপি পেয়েছিল চারটি করে আসন। তৃণমূল পায় তিনটি। পরে তৃণমূল বিজেপি-কে সমর্থন করায় পঞ্চায়েতের প্রধান হন অনল মুর্মু। তবে এ বার বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই রায়বাঁধ পঞ্চায়েত পুরোপুরি নিজেদের দখলে আনার পরিকল্পনা শুরু করে শাসকদল। ভোটের আগেই বিজেপি-র এক সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। ফল ঘোষণার কিছুদিন পরে তৃণমূলে যান সিপিএমের দুই সদস্যও। ফলে এই পঞ্চায়েতে শাসকদলের আসন বেড়ে দাঁড়ায় ছয়ে।

পঞ্চায়েতে একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরেই বিজেপি-র প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন তৃণমূলের ছয় সদস্য। এ দিন অনাস্থার তলবিসভা ডেকেছিল প্রশাসন। পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, সভায় তৃণমূলের ছ’জন এলেও বিজেপি ও সিপিএমের কোন সদস্যই উপস্থিত হয়নি। ১১ সদস্যের পঞ্চায়েতে অর্ধেকের বেশি উপস্থিত হয়ে অনাস্থার পক্ষে মত দেওয়ায় প্রধান অপসারিত হয়েছেন। প্রথমে সমর্থন করলেও পরে তাঁদেরই দলীয় সদস্যকে ভাঙিয়ে পঞ্চায়েত দখল করার শাসকদলের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ বিজেপি। দলের নেতা সুভাষ মণ্ডল বলেন, ‘‘তৃণমূল রাজ্য জুড়েই বিরোধী সদস্যদের ভাঙিয়ে একক ভাবে পঞ্চায়েতে দখলের রাজনীতি শুরু করেছে। আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে এর জবাব পাবে তারা।’’ যদিও রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির বক্তব্য, ‘‘স্থানীয় ভাবে প্রথমে বিজেপিকে সমর্থন করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দলীয় লাইন অনুযায়ী বিজেপি- সঙ্গে কোনও ভাবেই পঞ্চায়েতে থাকা যাবে না। তাই রায়বাঁধে অনাস্থা আনা হয়েছে।’’

Advertisement

রায়বাঁধ দখলে এসেছি ঠিকই। কিন্তু, আড়শা গ্রাম পঞ্চায়েতে সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনের মদতে তৃণমূল ক্ষমতা আগলে রেখেছে বলে একযোগে অভিযোগ তুলেছে বাম ও কংগ্রেস। মঙ্গলবার আড়শার বিডিও-র কাছে এই অভিযোগ নিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছে দুই দল।

আড়শা পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৭, যার মধ্যে তৃণমূল ৫, সিপিএম ৬, কংগ্রেস ৪ এবং নির্দলদের দু’টি। নির্দলের ২টি আসনের মধ্যে একটি ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার। বামের সমর্থনে এত দিন এই পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। মোর্চা তৃণমূলকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু এই বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেস সমঝোতা হওয়ায় তারা এক যোগে তৃণমূলের প্রধান ও উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে। পঞ্চায়েতের কংগ্রেস সদস্য প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘গত ১৫ জুন পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থার সভা ডাকা হয়। কিন্তু, সভা শুরু হওয়ার পরে কিছু বহিরাগত সভা ভন্ডুল করে দেয়। কাগজপত্র ছিঁড়ে দেওয়া হয়।’’ সিপিএম সদস্য সন্তোষী সিংহ জানান, সিপিএমের ছয়, কংগ্রেসের তিন এবং এক জন নির্দল—এই ১০ জন সদস্য অনাস্থা এনেছিলেন। ১৬ জুন ছিল উপপ্রধানের উপরে আনা অনাস্থার বৈঠক। সে সভা নির্বিঘ্নেই হয়েছিল। তাঁর দাবি, ১০ জন সদস্য অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও প্রশাসন আজও সেই সভার ফলাফল জানায়নি।

আড়শা ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি পুলকেশ কুমার বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে, ওই পঞ্চায়েতে তৃণমূল সংখ্যালঘু। কিন্তু, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। একটা সভা ভন্ডুল করে দেওয়া হল। অন্য সভায় উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা পাশ হওয়া সত্ত্বেও সভার ফল সরকারি ভাবে জানানো হয়নি।’’ তাঁর প্রশ্ন, সংখ্যালঘু হওয়ার পরও কী ভাবে প্রধান এখনও ক্ষমতায় থাকেন? প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া সত্ত্বেও তারা টালবাহানা করছে। এই সুযোগে পঞ্চায়েতের নানা প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়ের আশঙ্কা করছেন সিপিএম ও কংগ্রেসের সদস্যেরা।

এই পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান ধীরেন মাঝি জানান, তিনিই এখনও প্রধানের পদে বহাল আছেন। তাই তিনিই পঞ্চায়েতের কাজকর্ম চালাচ্ছেন। তৃণমূলের আড়শা ব্লকের সভাপতি আনন্দ মাহাতো বলেন, ‘‘এটা প্রশাসনিক বিষয়। প্রশাসনই অনাস্থার বিশয়ে বলতে পারবে।’’ আড়শার বিডিও দিব্যেন্দু গোস্বামী বলেন, ‘‘ওই পঞ্চায়েতে কিছু জটিলতা রয়েছে। অনাস্থা নিয়ে একটি মামলাও হয়েছে। তবে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে নির্দেশ চেয়েছি। দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে আশা করছি।’’

বিরোধীদের অবশ্য হুঁশিয়ারি, প্রশাসন সঠিক পদক্ষেপ না করলে তাঁরা পথ অবরোধে নামবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন