টোটো চালকের মারে হাত ভাঙল যাত্রীর

রিকশা বা টোটো চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে ঝামেলা বাঁকুড়া শহরে নতুন কিছু নয়। এত দিন বচসা বা অল্পবিস্তর ঠেলাঠেলির মধ্যেই ব্যাপারটা আটকে থাকত। কিন্তু এ বারে এক যাত্রীকে মারধর করে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল টোটো চালকের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির সামনে টোটো থেকে নামার পরে ওই টোটো চালক তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেছেন দীনেশ খাণ্ডেলবাল নামে বাঁকুড়া শহরের নতুনগঞ্জ এলাকায় এক বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৬
Share:

নিজের চোট দেখাচ্ছেন দীনেশ।—নিজস্ব চিত্র।

রিকশা বা টোটো চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের ভাড়া নিয়ে ঝামেলা বাঁকুড়া শহরে নতুন কিছু নয়। এত দিন বচসা বা অল্পবিস্তর ঠেলাঠেলির মধ্যেই ব্যাপারটা আটকে থাকত। কিন্তু এ বারে এক যাত্রীকে মারধর করে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠল টোটো চালকের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির সামনে টোটো থেকে নামার পরে ওই টোটো চালক তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ করেছেন দীনেশ খাণ্ডেলবাল নামে বাঁকুড়া শহরের নতুনগঞ্জ এলাকায় এক বাসিন্দা।

Advertisement

দীনেশ খান্ডেলবাল পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর দাবি, ওই দিন সকালে পড়শি তাপস সেনের টোটো ভাড়া করে মা এবং স্ত্রীকে নতুনগঞ্জ থেকে ইঁদারাগড়ামোড় এলাকায় ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। ডাক্তারখানায় ভিড় দেখে চালককে ভাড়া মিটিয়ে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাপসবাবু তাঁদের জানান, তিনি অপেক্ষা করবেন।

ওই ব্যবসায়ীর দাবি, প্রায় আধ ঘণ্টা পরে ডাক্তার দেখিয়ে বেরোন তাঁরা। ওই টোটোতে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু ভাড়া মেটানোর সময় ঝামেলা বাধে। দীনেশবাবুর দাবি, টোটো চালক যাতায়াত এবং ডাক্তারখানার সামনে অপেক্ষা বাবদ মোট আড়াইশো টাকা ভাড়া চান। কিন্তু তিনি বাড়তি ভাড়া দিতে অস্বীকার করেন। টোটো ইউনিয়নের বেঁধে দেওয়া তালিকা অনুসারে ভাড়ার হিসাব করতে বলেন। এর পরেই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। সেই বচসা অচিরেই গড়ায় হাতাহাতিতে। দীনেশবাবু বলেন, ‘‘ওই টোটো চালক আমাকে মাটিতে ফেলে লাথি, ঘুঁষি মারতে শুরু করে। পরে বাড়ি থেকে লোকজন বেরিয়ে এসে আমায় বাঁচায়।’’ মারের চোটে তাঁর বাঁ হাতের কব্জির হাড় ভেঙে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন দীনেশবাবু। স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁর হাতে প্লাস্টার করে দেন। রাতেই বাঁকুড়া সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

Advertisement

অভিযুক্ত টোটো চালক তাপস সেন ঘটনার পর থেকেই ঘর ছাড়া। দীনেশবাবুর কাকা মহেশ খান্ডেলবালের আক্ষেপ, “এই শহরে ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে রিকশা বা টোটো চালকদের বচসা নতুন কিছু নয়। তবে এত দিন মারধরের ঘটনা ঘটেনি। দীনেশের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটল, তাতে শহরের সমস্ত যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল এ বার।” প্রশাসন যাতে এই অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ করে সেই দাবি তুলেছেন তিনি।

অভিযুক্ত টোটো চালকের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন ছিল বন্ধ। তবে ঘটনার নিন্দা করেছেন বাঁকুড়া জেলা ই-রিকশা ইউনিয়নের সভাপতি সিন্টু রজক। তিনি বলেন, “ভাড়া নিয়ে দরাদরি হতেই পারে। কিন্তু যাত্রীকে চালক মারধর করবেন, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।” তিনি আরও বলেন, “তাপস আমাদের জানিয়েছেন, ওই যাত্রীই প্রথমে তাঁকে ঠেলাঠেলি করেন। তাতেই সে উত্তেজিত হয়ে এমন কাণ্ড করে ফেলেছে। কিন্তু প্রথম দোষ যারই হোক না কেন, এক জন যাত্রীকে মেরে হাত ভেঙে ফেলার ঘটনাকে আমরা কোনও যুক্তিতেই সমর্থন করব না।”

এ দিনের ঘটনার পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরের রিকশা ও টোটোর ভাড়া বেঁধে দেওয়ার দাবি তুলেছেন যাত্রীদের একাংশ। তবে রিকশার ক্ষেত্রে এখনও কোনও সুনির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা না থাকলেও টোটো চালকদের সংগঠনের তরফে রুট ভিত্তিক ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান সিন্টুবাবু। তিনি জানিয়েছেন, শহরের রুটে যাত্রীরা টোটোতে উঠলেই ১০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। তবে কেউ যদি টোটো রিজার্ভ করে নেন, সে ক্ষেত্রে কোনও নির্দিষ্ট ভাড়া থাকে না। এই প্রসঙ্গে বাঁকুড়া সদর মহকুমাশাসক অসীমকুমার বালাও বলেন, “রিকশা ভাড়া সুনির্দিষ্ট করার প্রক্রিয়া চলছে। টোটোর ইউনিয়নই রুটের ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে।”

যাত্রীকে মারধরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ যাতে কড়া ব্যবস্থা নেয়, বাঁকুড়া সদর থানাকে সে নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানান এসডিও। পুলিশ জানিয়েছে, জখম যাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। অভিযুক্ত টোটো চালকের খোঁজ চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement