চলছে আলোচনা। —নিজস্ব চিত্র।
বছরের আর পাঁচটা দিনের থেকে এ পাঠ আলাদা।
প্রায় পাঁচশো পড়ুয়াকে প্রোজেক্টরের মাধ্যমে টুকরো টুকরো ছবিতে দেখানো হল, কী ভাবে দুর্ঘটনা হয়। তার জন্যে পথচারী থেকে শুরু করে চালকের অসতর্কতা কতটা দায়ী। আর তার সংশোধনই বা কী ভাবে করা যেতে পারে।
সোমবার পুরুলিয়ার বোরো হাইস্কুলে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের উদ্যোগে দেওয়া হয় পথ চলার সেই পাঠ। শুরুতে সুরটা বেঁধে দেন খোদ পুলিশ সুপার। রূপেশ কুমারের কথায়, ‘‘গোটা বিশ্বে দু্র্ঘটনায় সব থেকে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ব্যতিক্রম নয় পুরুলিয়াও।’’ ২০১৪ সালে পুরুলিয়ায় দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৫ সালে ১৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ২০১৬ সালে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৬২। পুলিশ সুপারের কথায়, ‘‘সচেতনতা তৈরির মধ্যে দিয়েই একমাত্র দুর্ঘটনার সংখ্যা কমানো যেতে পারে।’’
এ দিন ক্লাস নেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পারিজাত বিশ্বাস। তিনি জানান, বেশির ভাগই মোটরবাইক দুর্ঘটনা সংক্রান্ত। হেলমেট ব্যবহার করলে এবং একটু সতর্ক ভাবে গাড়ি চালালে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। পুলিশ কর্তাদের পর্যবেক্ষণ, আগের তুলনায় রাস্তা ভাল হওয়ায় সব ধরনের যান গতিতে চলে। তার ফলেই বাড়ছে দুর্ঘটনা। তাঁদের মতে, দু’টি যানবাহনের মধ্যে ধাক্কায় যত না দুর্ঘটনা হয়, তার থেকে বেশি দুর্ঘটনা হয় একক ভাবে। একই কথা মোটরবাইকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
প্রোজেক্টরের মাধ্যমে ওই পাঠের প্রতি পড়ুয়াদের আকর্ষণ ছিল টানটান। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক কাশীপুরের সিআই সত্যরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন স্কুলে এই ধরনের পাঠ দেওয়া হচ্ছে।’’ কিন্তু, কেন পড়ুয়াদের এই পাঠ?
পুলিশ কর্তাদের মত, স্কুলের পড়ুয়ারা মোটরবাইক বা গাড়ি চালায় না বটে, কিন্তু বাইরে বেরোনোর সময় বাড়ির বড়দের সতর্ক করে দিতে পারে। আর এটাই ওদের শেখার উপযুক্ত সময়। কেননা ভবিষ্যত নাগরিক তারাই।
পুলিশের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বোরে হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিসকুমার দে। তাঁর কথায়, ‘‘সিলেবাসের বাইরে এই পাঠ ছেলেমেয়েদের জীবনে খুব কাজে লাগবে। যে হারে দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাতে পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়ম জানা আবশ্যক।’’
এ দিনের ওই স্কুলে উপস্থিত ছিলেন ডিএসপি (হেড কোয়ার্টার) কল্যাণ সিংহরায়, মানবাজার ২ ব্লকের বিডিও নির্মল চট্টোপাধ্যায়, বিএমওএইচ কৌশিক ঢালি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গীতা মাহাতো, মানবাজারের সিআই সুবীর কর্মকার-সহ পদস্থ পুলিশ কর্তারা।