আইএসসিতে ৯৫ শতাংশ, স্বপ্ন ছুঁল সুনীল মারান্ডি

সুনীলের বাবা আলো মারান্ডি বিশ্বভারতী উদ্যানবিভাগে পরিচর্যার কাজ করেন। মা মুনি মারান্ডি কাঁথাস্টিচের শাড়ি, ব্যাগ তৈরি করেন। মা-বাবা দু’জনেই সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। 

Advertisement

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়

বোলপুর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০১:৩৯
Share:

লড়াই: সুনীল মারান্ডি। নিজস্ব চিত্র

ইচ্ছেশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম— এ দু’য়ের তাল-মিলে ধরা দেয় সাফল্য, তা ফের প্রমাণ করল বোলপুর মকরমপুরের সেন্ট টেরেসা’স স্কুলের আদিবাসী জনজাতি সম্প্রদায়ের ছাত্র সুনীল মারান্ডি। আইসিএসই (দশম) পরীক্ষায় ৬৫% নম্বর পাওয়া সুনীল, আইএসসি (দ্বাদশ) পরীক্ষায় ৯৫% নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হল। মাঝে মাত্র দু’টো বছর। এই দু’বছরে শুধু পড়াশোনাই করে গিয়েছে, ফল মিলেছে তারই। খুশির হাওয়া বইছে স্কুলে। অধ্যক্ষা, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী থেকে শুরু করে সহপাঠী—খুশি প্রত্যেকেই।

Advertisement

সুনীলের বাবা আলো মারান্ডি বিশ্বভারতী উদ্যানবিভাগে পরিচর্যার কাজ করেন। মা মুনি মারান্ডি কাঁথাস্টিচের শাড়ি, ব্যাগ তৈরি করেন। মা-বাবা দু’জনেই সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন।

বাড়ি শ্যামবাটির লালবাঁধে। দিন আনা দিন খাওয়া সংসার। সেখান থেকে তাঁদের ছেলে আইএসসি পরীক্ষায় ৯৫% নম্বর নিয়ে পাশ করেছেন ভাবতে স্বপ্নের মতো লাগছে তাঁদের। তাঁরা বললেন, ‘‘আমরা পড়াশোনা করতে পারিনি। সব সময় চেয়েছি ছেলে পড়ুক, মানুষ হোক। সুনীল সেই ইচ্ছেপূরণ করে দেখিয়ে দিল।’’

Advertisement

এল কেজি থেকেই সুনীল এই স্কুলের ছাত্র। মঙ্গলবার সুনীল জানাল, প্রথমে সব কিছু খুব কঠিন লাগতো। তার পরে শিক্ষকরা ভাল করে সব শেখাতে লাগলেন। আইসিএসই পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল করতে পারেনি সে। আইএসসি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতেই হবে, এ রকম একটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল মনে মনেই। ‘‘এক সময় পড়াশোনা করাটা নেশার মতো হয়ে গেল। স্কুলের বাইরে আর কোথাও টিউশন পর্যন্ত পড়িনি। স্কুলে গিয়ে পড়েছি। বাকি সময়েও ঘরে বসে পড়ে গিয়েছি’’— বলছে সুনীল।

কিন্তু, ৯৫% নম্বরেরর কথা শুরুতেই বিশ্বাস হয়নি সুনীলের। তার কথায়, ‘‘চেষ্টা করেছিলাম খুব ভাল রেজাল্ট করার। শেষ দিকে অনেকটা পড়েছি।’’ বিষয়ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বর ইংরেজি ৯০, বাংলা ৯০, সমাজবিজ্ঞানে ১০০, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ১০০। মোট ৪০০ নম্বরের মধ্যে ৩৮০। ভবিষ্যতে ইংরেজি নিয়ে পড়ে অধ্যাপক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বভারতীতে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন।

সেন্ট টেরেসা’স স্কুলের অধ্যক্ষা সিস্টার জেসি বলেন, ‘‘স্কুলের ১৮০০ পড়ুয়ার মধ্যে প্রায় ৫০০ জন আদিবাসী জনজাতির। সুনীল নজির তৈরি করলো।’’ শ্রেণি-শিক্ষিকা অদিতি সেনের কথায়, ‘‘শুধু মাত্র আদিবাসী জনজাতির পড়ুয়াদের জন্যই আলাদা করে রাতে ক্লাস, বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। সুনীল প্রথম থেকেই ভীষণ বাধ্য ছেলে ছিল। পরিশ্রম করেছে, তার ফলও পেয়েছে।’’ তাতে সায় দিচ্ছে সহপাঠীরাও। বলছে, ‘‘সুনীল আদিবাসী জনজাতির হয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করলো। শুধু আদিবাসী জনজাতি বলে নয়, প্রত্যেক পড়ুয়া অনুপ্রাণিত হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন