গোল: মেয়েদের সঙ্গে মাঠে নেমেছেন মায়েরা। নিজস্ব চিত্র
ভুল পাসে বল চলে গেল সাইড লাইনের বাইরে।
রেফারির বাঁশি জানিয়ে দিল এ বার থ্রো ইন। সকলের চোখ মাঠের বাইরে। হঠাৎ বাইরের বল মাঠে ফিরল এক মহিলা দর্শকের সজোরে কিকে!
বেশ কয়েক বছর আগের নগরীর বাগানপাড়ার ফুটবল মাঠের এই দৃশ্যটি দাগ কেটে ছিল সেদিনের রেফারি মৃণাল মালের। অজয়পুর হাইস্কুলের শিক্ষক ওই গ্রামের বাসিন্দা মৃণালবাবু জেলা ও রাজ্য স্তরের ফুটবল ও ভলিবলের কোচ ও রেফারি। এবং সেদিনের সেই ঘটনাই আজ ফুটবল নিয়ে মাতিয়েছে গোটা গ্রামকে। মেয়েদের সঙ্গে মাঠে বল নিয়ে টেক্কা দিচ্ছেন মায়েরাও।
গ্রামের আট থেকে আঠারোর মেয়েরা এখন বিকেলে স্কুলের শেষে জার্সি পরে বল নিয়ে মাঠ মুখো হচ্ছে। সঙ্গে কমবয়েসি ছেলেদের একটি দল সংখ্যায় প্রায় একশো কুড়ি জনের মতো। ব্যায়াম, ফুটবল, ভলিবল, দৌড়— এই সব নিয়ে মাঠের ব্যস্ততা এখন তুঙ্গে। প্রশিক্ষণের সঙ্গে আরোও একটি মজার জিনিষ দেখা যাচ্ছে, মেয়েদের সঙ্গে মায়েরাও এ বার ফুটবলে আগ্রহী হয়ে পড়ছেন।
মৃণালবাবু বলেন, ‘‘খেলা চলার সময় অনেক সময় মাঠের বাইরে আলাদা করে মায়েরাও বল কাড়াকাড়ি করতে দেখা যায়। উৎসাহ দিতে ওরাও মেয়েদের সঙ্গে মাঠে নামতে শুরু করেছেন শাড়ির ওপর জার্সি চড়িয়ে কিক করছেন। কখনও নিজের মেয়েদের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে মাঝ মাঠের দখল নিছেন।
মাঠ সংলগ্ন আদিবাসী পাড়া কাটাবনির বালিকা মুর্মু বলেন, “ছোট থেকে খেলা ভালো বাসি। এখন আমার মেয়ে দেবী এগারো ক্লাসের ছাত্রী। আমি ওর সঙ্গে ফুটবল খেলি।” নগরী ডাঙ্গাল পাড়ার বাসিন্দা মাম্পি বাগদি তাঁর দুই ছোট ছেলে সুমন্ত ও কৃষ্ণগোপালের খেলার প্রশিক্ষণ দেখতে এসে আর নিজেকে না সামলাতে না পেরে তিনিও মাঠে নেমে পড়েছেন। লাজুক মুখে তিনি বলেন, “স্বামী কাজলও খেলোয়াড়, আমার ও খেলতে ইচ্ছা করে তাই খেলি।” গেরস্থালীর কাজ সামলে লক্ষ্মী হেমব্রমও খেলার মাঠে বলের পেছনে দৌড়াচ্ছেন।
ফেসবুক আর হোয়াটাস অ্যাপের চ্যাটকে ফেলে সিউড়ি কলেজের ইংরাজীর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী শ্রেয়া রায় আর ক্লাস ইলেভেনের প্রনমি রায় মাঠে দৌড়চ্ছেন। বলছেন, “বিকেলে মাঠে এলে মন ভাল থাকে, তাই আসি।’’ স্থানীয় বাসিন্দা গৌতম রায় বলেন, “স্থানীয় রক্ষাকালী ক্লাব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ২ লক্ষ্য টাকা সাহায্য পেয়েছে। সেটা খেলাধুলোয় কাজে লাগানো হয়েছে। সেই উদ্যোগেই চলছে প্রশিক্ষণ। কেনা হয়েছে ফুটবল, ভলিবল, জার্সী, প্যান্ট জুতো আরও প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র।”
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক বিদ্যাসাগর সাও অবশ্য বলছেন, ‘‘গ্রামের মেয়েরা মাঠে নেমে খেলা ধুলো করলেও সদর সিউড়িতে মেয়েরা খেলাধুলোতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না সেভাবে।
নগরীর মেয়েদের জন্য এ বছর সিনিয়ার ও জুনিয়ার ভলিবল চ্যাম্পিয়ান হয়েছে সিউড়ি সাবডিভিশন। দু’বছর আগে আমাদের তরফে একটা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল ওখানে।”
কারা নামছে মাঠে, কারা নামছে না— এসব কচকচিতে অবশ্য মন নেই নগরীর। রবিবার যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট-রি-পোস্ট নিয়ে ব্যস্ত বেশিরভাগ জনতা, তখন নগরীর আদিবাসী পাড়ায় মেয়েদের একটাই কথা, যার অর্থ “বিকেল হয়েছে তাড়াতাড়ি মাঠে ফুটবল খেলতে যাব।”
অনতিপর মেঘের নীচে বল নিয়ে দৌড়তে দেখা গেল মেয়েদের সঙ্গে মায়েদেরও।