মালগাড়ির কাঁপুনিতে ধস দেওয়ালে, চাপা পড়ে মৃত্যু

কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন রেলের এক মহিলা টিকিট পরীক্ষক। লেবেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় রেললাইনে মালগাড়ি যাওয়ায় দাঁড়িয়েছিলেন দেওয়াল ঘেঁষে। হঠাৎই মালগাড়ি যাওয়ার কম্পনে দেওয়াল ধসে পড়ে ওই মহিলা রেলকর্মীর উপরে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। মঙ্গলবার ভোরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রেল শহর আদ্রায়। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত মহিলা কর্মীর নাম পিভিভি লক্ষ্মী (৪৭)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আদ্রা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০০:৫২
Share:

রেলকর্মীর মৃত্যুর পরে দুর্ঘটনাস্থলে ডিআরএম।—নিজস্ব চিত্র।

কাজে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন রেলের এক মহিলা টিকিট পরীক্ষক। লেবেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় রেললাইনে মালগাড়ি যাওয়ায় দাঁড়িয়েছিলেন দেওয়াল ঘেঁষে। হঠাৎই মালগাড়ি যাওয়ার কম্পনে দেওয়াল ধসে পড়ে ওই মহিলা রেলকর্মীর উপরে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। মঙ্গলবার ভোরে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে রেল শহর আদ্রায়। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত মহিলা কর্মীর নাম পিভিভি লক্ষ্মী (৪৭)। তাঁর বাড়ি আদ্রার রেলওয়ে বয়েজ হাইস্কুল সংলগ্ন এলাকায় রেলের আবাসনে। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সাত-আট মাসে আগে তাঁর স্বামী মারা যায়। তাঁদের বছর পনেরোর এক ছেলে রয়েছে। তাকে নিয়েই আদ্রায় রেলের আবাসনে থাকতেন তিনি।

Advertisement

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘ ছুটিতে থাকার পরে সম্প্রতি কাজে যোগ দিয়েছিলেন কর্মাশিয়াল বিভাগের কর্মী লক্ষ্মীদেবী। তিনি টিকিট পরীক্ষকের পদে ছিলেন। এ দিন তাঁর পুরুলিয়া থেকে হাওড়াগামী পুরুলিয়া এক্সপ্রেসে ডিউটি ছিল। তাই ভোরে বাড়ি থেকে তিনি বেড়িয়েছিলেন। রেলওয়ে গার্লস হাইস্কুল মোড় লাগোয়া এলাকায় লেবেল ক্রসিং দিয়ে স্টেশনে যাচ্ছিলেন তিনি। এই রাস্তাটি রেললাইন পেরিয়ে আদ্রার নর্থ সেটলমেন্ট থেকে সাউথ সেটলমেন্ট এলাকায় যাওয়ার অন্যতম রাস্তা। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মালগাড়ি যাচ্ছে দেখে ওই মহিলা দেওয়ালের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ হুড়মুড় করে দেওয়ালের একাংশ তাঁর উপরে ভেঙে পড়ে। ইটে চাপা পড়ে যান তিনি। উপস্থিত লোকজন ও রেল কর্মীরাই তাঁকে উদ্ধার করে আদ্রায় রেলের হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

রেলের দাবি, মালগাড়ি যাওয়ার সময় আশপাশে যে কম্পন হয়, তাতেই লাইনের পাশের ওই দেওয়াল ভেঙে পড়ে। কার্যত এমন দুর্ঘটনা এলাকায় আগে ঘটেনি। রেলকর্মী মহলে তাই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আবার ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে মজদুর সঙ্ঘ-সহ অন্যান্য রেলকর্মী সংগঠনগুলি। তাদের দাবি, ভারী পণ্যবাহী মালগাড়ি যাওয়ার সময়ে রেললাইনে কম্পন হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সেই কম্পনে দেওয়ালের একাংশ ভেঙে যাওয়ার অতীতে কোনও নজির নেই। সেই প্রেক্ষিতে তারা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।

Advertisement

মজদুর সঙ্ঘের আদ্রার নেতা নিখিল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে দেওয়ালটি তৈরি হয়েছিল। তাই তা ভেঙে একজনের প্রাণ গেল। তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’

তবে রেলের এক আধিকারিক জানান, দেওয়ালটি পুরনো হয়ে পড়ায় কম্পন সহ্য করতে পারেনি। খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থলে যান আদ্রার ডিআরএম অনশূল গুপ্তা। কী ভাবে দেওয়ালটি ভেঙে পড়েছে তা সরজমিনে খতিয়ে দেখেন তিনি। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে দেওয়াল তৈরির অভিযোগ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি তিনি। বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘মৃত্যুর ঘটনাটি যথেষ্ট মর্মান্তিক। মালগাড়ির কম্পনে দেওয়াল ভেঙে পড়ার ঘটনা সচরাচর ঘটে না। কেন দেওয়ালটি ভেঙে পড়ল তা খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন