জয়ী: সাহসিকতার মুখ। নিজস্ব চিত্র
এক জন দ্বাদশ শ্রেণির, অন্য জন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। প্রথম জন সতেরো, অন্য জনের আঠারো। মল্লারপুর থানার শিবপুর গ্রামের এই দুই কিশোরী এখন গ্রামের দুই সাহসিনী। বৃহস্পতিবার সকালে এই দুই কিশোরীর বুদ্ধিমত্তা এবং সাহসিকতায় দুই দুষ্কৃতীকে ধরতে পারল পুলিশ।
মল্লারপুর ধরণীদেবেন হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী অরুণা মুদি জানায়, গ্রামেরই বাসিন্দা, বান্ধবী ঋতুপর্ণা মুদির সঙ্গে সকালে জগিং করতে বেরিয়েছিল। শালবনের জঙ্গল-ঘেরা শিবপুর থেকে শালবাদরার রাস্তা হয়ে ফেরার পথে সকাল ছ’টা নাগাদ দুই যুবক তাদের পথ আটকায়। কাছে থাকা দু’টি মোবাইল এবং গলায় রুপোর চেন ছিনিয়ে নেয়। অরুণার কথায়, ‘‘শুরুতে ঘাব়ড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু, তখনই ওদের সঙ্গে থাকা মোটরবাইকের দিকে চোখ পড়তে বাইকের চাবি খুলে নিয়ে ছুট দিই।’’ দেখাদেখি ছুটতে শুরু করে ঋতুপর্ণাও।
আরও পড়ুন:নিম্নচাপের হাত ধরে দীর্ঘ হচ্ছে বর্ষার ইনিংস
ছুটতে ছুটতে দুই বান্ধবী যখন গ্রামের কাছাকাছি চলে এসেছে, তখন দুষ্কৃতীরা ধরে ফেলে ঋতুপর্ণাকে। অরুণার কথায়, ‘‘ওই দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করি। মিনিট পনেরো এ ভাবে জঙ্গলের মধ্যে লড়াই চালানোর পরে পাশের গ্রামের এক জন তা দেখে ফেলে গ্রামে খবর দেয়।’’ গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমরা না আসা পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে লড়াই করে ওদের আটকে রেখেছিল দুই বীর কন্যা।’’ অরুণার কথায়, লড়াই চলেছিল প্রায় চল্লিশ মিনিট।
এরপরই গোটা ঘটনা জানানো হয় পুলিশকে। পুলিশ গ্রামবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে দুই দুষ্কৃতীকে উদ্ধার করে। পুলিশ জেনেছে, দুই দুষ্কৃতীর নাম হাসিবুর শেখ এবং হাসিবুল শেখ। দু’জনের বাড়ি মহম্মদবাজারে। দুই মেয়ের সাহসিকতা দেখে আপ্লুত এলাকাবাসী। তাঁদের ইচ্ছে, এমন বীর-কন্যাদের স্বীকৃতি জানাক পুলিশ। অরুণার মা সুমিত্রা মুদি বলেন, ‘‘এই সাহসিকতায় গর্বিত।’’ দুই কন্যা জানাচ্ছে, পুলিশ হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে জগিং করছিল তারা। গ্রামের অনেকেই বলছেন, ‘‘যাদের স্বপ্ন পুলিশ হওয়া, তাঁরা দুই দুষ্কৃতীর কাছে হার মানে কী করে!’’