দু’জন ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলল পুরুলিয়ায়। পুরুলিয়া শহরের নিমটাঁড় এলাকায় এক যুবকের রক্তে এবং শহরের রাঘবপুর এলাকার দেড় বছরের একটি শিশুর শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে দু’জনকে সম্প্রতি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
পরিবার সূত্রে খবর, প্রথমে পরীক্ষায় তাদের এনএস১ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘অ্যালাইজা টেস্ট করানো হয়েছিল। তাতেও ডেঙ্গি পজিটিভ হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তবে দু’জনকে চিকিৎসার পরে ছাড়া হয়েছে।’’ রবিবার তিনি ওই যুবকের বাড়িতে যান। তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি জানান, এর আগে পুরুলিয়ায় এই মরসুমে দু’জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। তবে তাঁরা বাইরে কাজ করতেন। সেখানে ডেঙ্গিতে অসুস্থ হয়ে পুরুলিয়ায় এসেছিলেন। এই যুবক অবশ্য পুরুলিয়াতেই থাকেন। কী ভাবে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলেন, তা দেখা হচ্ছে। শহরের নিমটাঁড়ের বাসিন্দা ওই যুবকের বাবা যুবকের নেপাল পরামানিকও বলেন, ‘‘কী ভাবে ছেলের ডেঙ্গি হল, বুঝতে পারছি না। তবে পরিবারের আর কারও
জ্বর হয়নি।’’
এলাকার কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘বছর পাঁচেক আগে এই এলাকায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছিল। ফলে ওই যুবক সুস্থ হলেও বিষয়টিকে লঘু করে দেখা উচিত নয়।’’ ঘটনাটি নজরে আসতেই তিনি জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসনের কাছে পদক্ষেপ চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন।
এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন ও পুরসভা। গত বৃহস্পতিবার কালীপুজোর দিনে ওই যুবক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক। শহরের ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে খবর পেয়ে এ দিনই জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলবাবু ও পুরসভার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে স্থানীয় কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস ও উপপুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডল উপস্থিত ছিলেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতর দেখছে। পুরসভাকে সচেতনতার প্রচার করা-সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
উপপুরপ্রধান বৈদ্যনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘এ দিন আমাদের সঙ্গে জেলাশাসকের বৈঠক হয়েছে। ডেঙ্গি রুখতে প্রয়োজনীয় প্রচার-সহ নর্দমা বা নিকাশি নালা সাফাইয়ে পুরসভা শীঘ্রই নামছে। শহরে মাইকে সচেতনতার প্রচারও করা হবে।’’
কয়েকদিন আগেই পুরুলিয়া শহরের দেশবন্ধু রোড এলাকার আশু সহিস লেনের বাসিন্দা এক কিশোরের মৃত্যু হয়। ওই কিশোরের পরিবার দাবি করেছিলেন, দু’দিন জ্বরে ছেলেটির মৃত্যু হয়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়েছিলেন। চিকিৎসা করার ন্যূনতম সুযোগ তাঁরা পাননি। সেই কিশোরের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি এখনও। তারই মধ্যে শহরে ডেঙ্গি রোগী ধরা পড়ায় তটস্থ বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, পুরসভা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সাফাইয়ে নামুক। সেই সঙ্গে জনে জনে ডেঙ্গির বিপদ সম্পর্কে মানুষজনকে বোঝাতে নামুক।