স্বজনহারা: কান্নায় ভেঙেছেন পরিজন। (ইনসেট) মৃত ২ ছাত্র। নিজস্ব চিত্র
একটি স্কুটিতে তিন পড়ুয়া। পুলিশ জানায়, কেউ-ই পড়েনি হেলমেট। সোমবার মুরারই-রঘুনাথগঞ্জ সড়ক ধরে দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল তারা। সামনের ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়ে মুখোমুখি পড়ে যায় উল্টোদিক থেকে আসা বাসের। প্রচণ্ড জোরে সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় স্কুটির চালকের। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মৃত্যু হয় গুরুতর জখম আরও এক ছাত্রের। অন্য জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
কয়েক মাস আগে বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে জেলায় দুর্ঘটনা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে জেলায় দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে তাঁর হিসেবের সঙ্গে মেলেনি পুলিশ সুপারের তথ্য। জাতীয় সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় বিশেষত রাতের দিকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ তার আগেও দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন মোটরবাইক, গাড়ির মত্ত চালক বা ট্রাক চালাতে গিয়ে ধরা পড়া লাইসেন্স-বিহীন খালাসিদের বিরুদ্ধে।
সে দিনের বৈঠকে তিনি প্রশ্ন তোলেন, জেলার ব্যস্ত রাস্তায় নজর রাখতে টহলদারি গাড়ি, ওয়াচ টাওয়ার, জোরালো আলো, এলইডি বোর্ডে ‘সেভ ড্রাইড সেভ লাইফ’-এর বার্তা লেখার কথা বারবার বলা স্বত্বেও তা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন কতটা তৎপর হয়েছে? মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভের মুখে পড়ে জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানান, পুলিশ এ বার থেকে আরও বেশি সতর্ক হবে।
জেলাবাসীর একাংশের অভিযোগ, কিন্তু তার পরেও দুর্ঘটনায় মৃত্যু রোখা যায়নি। সে জন্য সওয়ারিদের সচেতনতার অভাবকেও অনেক ক্ষেত্রে দায়ী করেছেন তাঁরা। এ বছরের প্রথম দিনই বিনোদপুর থেকে একটি মোটরবাইকে প্রতাপপুরে যেতে গিয়ে একই ভাবে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল চার তরুণের। তাদের কারও হেলমেট ছিল না। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ওভারটেক করতে গিয়েই ঘটে সেই দুর্ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ পাইকরে পড়তে যাচ্ছিল তিন ছাত্র। ভাগাইল গ্রামের কাছে ঘটে দুর্ঘটনা। তার জেরে ওই রাস্তায় কিছুক্ষণ যান চলাচল বন্ধ থাকে। পাইকর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।
এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা জানান, মুরারইয়ের দিক থেকে একটি বাস রঘুনাথগঞ্জের দিকে যাচ্ছিল। উল্টোদিক থেকে আসছিল ওই তিন ছাত্র। ওভারটেক করতে গিয়ে সজোরে বাসে ধাক্কা মারে স্কুটিটি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ‘‘প্রচণ্ড আওয়াজ শুনে রাস্তায় তাকিয়ে দেখি স্কুটিটা এক পাশে পড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে তিন জন।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাসীরা আহতদের উদ্ধার করে পাইকর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলেই দানেসুর রহমান মিঞা (১৭) নামে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়। অন্য দু’জনকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। রামপুরহাট নিয়ে যাওয়ার পথে জুবাইদ খান (১৭) নামে আরেক ছাত্রের মৃত্যু হয়। সাইদুল ইসলাম নামে অন্য ছাত্রকে প্রথমে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। পরে পাঠানো হয় কলকাতায়।
এমন ঘটনায় মিত্রপুর কাজিপাড়ায় নামে শোকের ছায়া। হতাহতেরা ওই পাড়ারই বাসিন্দা। পড়শিরা জানান, তিন জন ভাল বন্ধু ছিল। জুবাইদ খান কলা বিভাগে উমরপুর গাইডেন্স অ্যাকাডেমিতে পড়াশোনা করত। অন্য দু’জন মিত্রপুর অঞ্চল হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
জুবাইদের বাবা এহেসান খান বলেন, ‘‘রাজমিস্ত্রির কাজ করে অনেক কষ্টে ছেলেকে হোস্টেলে রেখে পড়াতাম। কয়েক দিন আগে বাড়ি ফিরেছিল। আজ সকাল সাড়ে পাঁচটায় পড়তে যাবে বলে বের হয়। কিছুক্ষণ পরেই দুর্ঘটনার খবর পাই। হেলমেট থাকলে ওরা বেঁচে যেত। মাথায় আঘাত বেশি ছিল।’’ দানেসুরের দাদা হাফিজুর রহমান মিঞা বলেন, ‘‘এক বছর আগে স্কুটিটা কিনে দিয়েছিলাম। ওটা না থাকলে ভাই আজ আমাদের কাছেই থাকত।’’
পুলিশ স্কুটি ও বাস পাইকর থানায় নিয়ে যায়। বাসের চালক ও খালাসি পলাতক।