বিমা এজেন্টের অস্বাভাবিক মৃত্যু

নিজের ঘরেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক বিমা কোম্পানির এজেন্টের। রবিবার সকালে নলহাটির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম স্বরাজ মিত্ররায় (৪৩)। খাটের পায়ার সঙ্গে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁর দেহ মিলেছে। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নলহাটি শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:২৫
Share:

নিজের ঘরেই অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক বিমা কোম্পানির এজেন্টের।

Advertisement

রবিবার সকালে নলহাটির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম স্বরাজ মিত্ররায় (৪৩)। খাটের পায়ার সঙ্গে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁর দেহ মিলেছে। পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদ থেকে ওই যুবক আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন। তবে, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর ঠিক কারণ বলা সম্ভব নয়। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

এ দিকে, স্বরাজের মৃত্যুর ঘটনায় এ দিন নলহাটি শহরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। মহকুমার নানা প্রান্তের বিমা এজেন্ট এবং রামপুরহাট শাখার আধিকারিকেরা মৃতদেহ দেখার জন্য ভিড় করেন। ময়না-তদন্তের পরে রামপুরহাটের ডাকবাংলা পাড়ায় অবস্থিত ওই বিমা সংস্থার শাখায় মৃতদেহ নিয়ে আসা হয়। তবে, যে অবস্থায় স্বরাজের দেহটি উদ্ধার হয়েছে, তা দেখে একে মৃতের পরিজনদের অনেকেই আত্মহত্যা বলে মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরে স্ত্রীর সঙ্গে স্বরাজের পারিবারিক ঝামেলা চলছিল।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত ১৬ বছর ধরে ওই বিমা সংস্থার এজেন্ট হিসাবে কাজ করছিলেন স্বরাজ। বছর দশেক ধরে নলহাটির ডাকবাংলা পাড়ায় পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। গত মঙ্গলবারই চার বছরের একমাত্র মেয়ের জন্মদিন ধুমধাম করে পালনও করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী পূজা জানান, শনিবার রাতে বাজার করে বাড়ি ফেরার পরে তাঁর স্বামী মদ্যপান করেছিলেন। রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে একা আলাদা ঘরে শুতে যান। মেয়েকে নিয়ে আলাদা ঘরে শুয়েছিলেন পূজা। তিনি আরও বলেন, ‘‘ঘরটা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। সকাল ৭টা বাজলেও ঘুম থেকে উঠছে না দেখে ওঁর মোবাইলে ফোন করি। কিন্ত ফোন বেজে গেলেও কোনও সাড়া মেলেনি। তখন ভয় পেয়ে বার কয়েক ধাক্কা মেরে দরজা খুলি।”

পূজার দাবি, দরজা খুলতেই তিনি দেখেন স্বরাজ লুঙ্গি পড়ে খালি গায়ে খাটের পাশে মেঝেতে বসে রয়েছেন। মুখ নীচু, জিভ বেরিয়ে আছে। আরও কাছে যেতেই পূজাদেবী দেখতে পান, শোওয়ার স্টিলের খাটের পায়ার সঙ্গে গলায় ওড়নার ফাঁস জড়ানো। পূজা বলেন, ‘‘ওঁর গায়ে হাত দিয়েই বুঝতে পারি, গা ঠান্ডা হয়ে আছে। আমি ঘাবড়ে গিয়ে ওঁর গলার ফাঁস খুলে দিই। চিৎকার করে কেঁদে উঠি।’’ তাঁর ওই চিৎকারেই পাশের ঘরে শুয়ে থাকা মেয়ের ঘুম ভেঙে যায়। আসেন বাড়িওয়ালা। পাড়া প্রতিবেশীরা জড়ো হলে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

স্বরাজের পিসতুতো দাদা তরুণকান্তি দাস জানান, শনিবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ ফোনে পাঁচ মিনিট ধরে ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। স্বরাজের কথায় তখন কোনও রকম অস্বাভাবিক কিছু বোঝা যায়নি। স্বরাজের সহকর্মী, রামপুরহাটের বাসিন্দা অরিন্দম চট্টোরাজ বলেন, ‘‘শনিবার রাতেও অফিসের রক্তদান শিবির নিয়ে ওঁর সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল। আমিও ওঁর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু দেখতে পাইনি।’’ এ দিন স্বরাজের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তাঁর ভাই অভিজিৎ বলেন, ‘‘আমি তারাপীঠে কাজ করি। দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়ি এসেছি। তবে, যে ভাবে মৃত্যু হয়েছে, তা সন্দেহজনক ঠেকছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন