জখম: চৌমণ্ডলপুরে গুলি-বোমায় আহতরা ভর্তি রয়েছেন বোলপুর হাসপাতালে। ছবি: নিজস্ব চিত্র
কেউ বলছেন এলাকা দখল। কেউ বলছেন প্রতিরোধ। কারণ যাই-ই হোক রাজনৈতিক সংঘাতে ফের অশান্ত পাড়ুই।
এলাকা দখলের লড়াইয়ে, বিজেপি-তৃণমূলের দু’পক্ষের বোমাগুলির লড়াইয়ে সোমবার রাতে তেতে উঠে পাড়ুই থানার চৌমণ্ডলপুর গ্রাম। ঘটনায় তিনজন আহত হয়ে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁরা সকলেই নিজেদের তৃণমূলের কর্মী বলে দাবি করেছেন। অশান্তি থামাতে এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী রয়েছে। লিখিত অভিযোগ না হলেও তৃণমূলের দাবি, সোমবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ এলাকা দখলের লক্ষ্যে অতর্কিতে আক্রমণ করে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। সোমবার রাতে চৌমণ্ডলপুরে মধ্যে একটি বৈঠক চলছিল। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ সশস্ত্র লোক ঢুকে পড়ে অতর্কিতে আক্রমণ করে। ইট ছুড়তে থাকে তারা। চলে বোমাবাজি। দেশি বন্দুক থেকে গুলিও শুরু হয়। অন্ধকারে বোমার ঝলকানি দেখে পড়শি গ্রামেও হল্লা শুরু হয়। আকস্মিকতা কাটিয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা পালাবার চেষ্টা করে। কিন্তু কারও কারও গায়ে বোমার সপ্লিন্টার, ইটের টুকরো লাগতে থাকে। ঘটনার প্রায় আধঘণ্টা পরে গ্রামের বাইরে ক্যাম্প থেকে পুলিশ আসে। কাছের থানাগুলি থেকেও বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পড়ে।
বোলপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শেখ জাহঙ্গির আলম, শেখ হাফিজুল ও আজিজুলদের দাবি, সোমবার তৃণমূলের বৈঠক চলছিল গ্রামে। তখনই চৌমণ্ডলপুর, মাখড়া, বেলপাতা-সহ ছাতারবান্দি থেকে বেশ কিছু দুষ্কৃতী এসে আক্রমণ করে। এক ঘন্টা ধরে তাণ্ডব চলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাধারণ বাসিন্দাদের অবশ্য দাবি, সংঘর্ষ মোটেই একতরফা নয়। দু’পক্ষই পরস্পরকে লক্ষ্য করে বোমা-গুলি ছুঁড়েছে। গ্রামের বিভিন্ন কোণে এবং পিছনের মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছে দুষ্কৃতীরা। এ দিন সকালেও পরিস্থিতি থমথমে ছিল।
হঠাৎ কেন পাড়ুই ফিরল পাড়ুইয়ে?
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে ইলামবাজার ব্লকের পাড়ুই থানা এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম বিজেপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসাবে গড়ে উঠেছিল। এলাকাবাসীর দাবি, ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সংঘাতের জেরে তৃণমূলের বেশ কিছু লোকজন বিজেপির ছত্রছায়ায় আসে। সেই সময় গ্রাম দখলকে কেন্দ্র করে বিজেপি-তৃণমূল দু’পক্ষের লড়াই লেগেই থাকত। বেশ কয়েকটি খুনের ঘটনা ঘটে। একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ তুলেছে। রাজনৈতিক চাপানউতোরে কার্যত উন্নয়ন থমকে গিয়েছিল। পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে গত বিধানসভা নির্বচনের আগে থেকে। যাঁদের নেতৃত্বে বিজেপি এলাকায় মাথা তুলেছিল, তাঁদের অনেকেই ফের তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এলাকা ফের শান্ত হতে শুরু করে।
পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সাফল্যের পরে। ফের নতুন করে কোমর বাঁধা শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর একটা অংশ বিজেপিতেই থেকে গিয়েছিল বলে দাবি বিজেপির। গত দশ তারিখ এলাকায় বিজয় মিছিল করে বিজেপি। তারপর থেকেই উত্তপ্ত হতে শুরু করে এলাকা। দিন চারেক আগে আগে হাঁসড়া গ্রামে ও মাখাড়া গ্রামে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছিল। উত্তেজনা এড়াতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু উত্তেজনার পারদ চড়ছেই। সোমবার রাতের ঘটনা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। জেলাপরিষদের তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ তথা ইলামবাজার ব্লকের সভাপতি জাফারুল ইসলাম বলেন, ‘‘যে কায়দায় গত ১৪ সালে বিজেপি এলাকা দখলের চেষ্টা করে মানুষের শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছিল। ফের সেই এক চেষ্টা শুরু করেছে বিজেপি।’’ বিজেপির জেলা সম্পাদক প্রিয়ব্রত সিংহের দাবি, ‘‘এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ। ওই গ্রামে আমাদের লোকেরাই আক্রান্ত। সোমবার রাতে ওই গ্রামে আক্রমণে গিয়েছিল শাসকদলের দুষ্কৃতীরাই। গ্রামের মানুষ সেটা প্রতিহত করেছে। তা করতে গিয়েই দু’একজনের সামান্য লেগে থাকতে পারে।’’ পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।