যতবার মাটি কেঁপে উঠেছে, আমরা ভয়ে শিউরে উঠেছি

ভূমিকম্পের কথা এতদিন শুনেছি। কখনও অনুভবও করেছি। তবে মৃদু। কাগজে, টিভিতে ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের ছবিও দেখেছি। কিন্তু নিজেই সেই বিপর্যয়ের মধ্যে কোনওদিন পড়ে যাব তা ভাবিনি। আর বেড়াতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা হবে তা আমর দুঃস্বপ্নেও ছিল না।

Advertisement

দীপককুমার মণ্ডল

(হুড়া) শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৪৫
Share:

ভূমিকম্পের কথা এতদিন শুনেছি। কখনও অনুভবও করেছি। তবে মৃদু। কাগজে, টিভিতে ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের ছবিও দেখেছি। কিন্তু নিজেই সেই বিপর্যয়ের মধ্যে কোনওদিন পড়ে যাব তা ভাবিনি। আর বেড়াতে গিয়ে এই অভিজ্ঞতা হবে তা আমর দুঃস্বপ্নেও ছিল না।

Advertisement

কিন্তু সেটাই হল। একটি সিমেন্ট কোম্পানির ট্যুরে নেপালে বেড়াতে গিয়েছিলাম। শনিবার বেলায় প্রথম যখন নেপালের মাটি কেঁপে উঠল, তখন আমরা সবাই কাঠমাণ্ডু থেকে সাত কিলোমিটার উপরে নীলকন্ঠ শিব মন্দির দেখতে গিয়েছিলাম। একটি ছোট গাড়িতে করে গিয়েছিলাম। পাহাড়ি রাস্তা। শিব মন্দিরটির অবস্থান কাঠমাণ্ডু থেকে উপরের দিকে। মন্দির থেকে সবে বেরিয়েছি। তখনই মাটি দুলে উঠল। কোনও কিছু বোঝার আগেই কেউ কেউ বলছিল যে, ভূমিকম্প হচ্ছে। তারপরে দেখি পায়ের নীচের মাটি প্রচণ্ড দুলছে। এভাবে কখনও টানা এতক্ষণ ধরে মাটি দুলতে দেখিনি। সে সময় যে কী অনুভূতি হচ্ছিল বোঝাতে পারব না।

খানিকক্ষণ পরে দুলুনি থামল। মন্দির চত্বর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম, কোথাও দেওয়াল ধসে পড়ছে। ধুলোও উড়ছিল। আর কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। একে অপরকে ধরে কোনওক্রমে দাঁড়িয়েছিলাম। যে গাড়িতে গিয়েছিলাম অল্প কিছুটা পথ সেই গাড়িতে করেই ফিরলাম। তারপর গাড়ির চালক বললেন, ‘আর যাব না। রাস্তা পুরো বসে গিয়েছে।’ এই অবস্থায় সেখান থেকে অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে কাঠমাণ্ডুতে হোটেলে ফিরলাম। দেখি হোটেলের দেওয়ালও ফেটে গিয়েছে। চারদিকে শুধু ধ্বংসের ছবি। আমরা যে ঘরে ছিলাম সেই ঘরের টেলিভিশন সেট মাটিতে পড়ে ভেঙে গিয়েছে। ওই সময় কে যেন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললেন। সঙ্গের জিনিসপত্র সব নিয়েও আসতে পারিনি। যতটা পেরেছি সঙ্গে নিয়ে দুপুরের পর বিমানে ওঠার লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। কেন না, দূতাবাস থেকে আমাদের জানানো হয়েছিল, বায়ুসেনার বিমান আমাদের নিয়ে দিল্লি পৌঁছে দেবে। দুপুরের পর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে বিমানে উঠলাম ভোরবেলায়। দিল্লি পৌঁছালাম ভোর পাঁচটা নাগাদ। সেখান থেকে আমাদের বঙ্গভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে শুনেছিলাম আমাদের ট্রেনে করে হাওড়ায় নিয়ে আসা হবে। পরে শুনি মুখ্যমন্ত্রী বিমানে আমাদের কলকাতায় পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছেন। বঙ্গভবন থেকেই দিল্লি বিমানবন্দর, সেখানে পোঁছনোর পরে গাড়িতে করে সরাসরি বাঁকুড়ায় পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়।

Advertisement

শিবমন্দির চত্বরে দাঁড়িয়ে সে দিন যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা কোনও দিন মুছবে না। সে দিন সারাদিন কতবার যে মাটি দুলে উঠেছে বলতে পারব না। যতবার মাটি কেঁপেছে ভয়ে শিউরে উঠেছি।

(সম্প্রতি ফিরে এসেছেন হুড়ার এই ব্যবসায়ী)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন