মৃত রবির।—নিজস্ব চিত্র
শ্মশানের এক কোণে বসেছিলেন কিশোরবাবু। পরনে ছেলের ট্র্যাকস্যুট। যা পরে তাঁর বড়ছেলে রবি রাজ্য স্তরের শটপাট প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়ে পদক এনেছিল। রবি গুপ্ত। শটপাটে তুখোড়। পড়াশোনায় মেধাবী। বুধবার সকালে আদ্রার বেনিয়াসোলের শ্মশানে বড়ছেলের শেষকৃত্য করলেন কিশোরবাবু। এখনও ছেলের কথাগুলো কানে ভাসে তাঁর। বললেন, ‘‘ফোনে প্রায়ই রবি বলতো, অনেক কষ্ট করে আমাদের বড় করেছো। আর ক’টা বছর। তোমাকে তার পরে কাজ করতে দেব না।’’
সোমবার দুপুরে জলপাইগুড়ির সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের হস্টেল থেকে উদ্ধার হয় রবির অচৈতন্য দেহ। জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর সহ-আবাসিকেরা। সেখানে চিকিৎসক জানান, রবির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে জলপাইগুড়ি থেকে রবির দেহ নিয়ে আদ্রায় ফেরেন তাঁর বাবা কিশোরবাবু ও জেঠু অশ্বিনীকুমার গুপ্ত। আদ্রার কমলাস্থান এলাকার বাসিন্দা পোশাক ব্যবসায়ী কিশোরকুমার গুপ্তের বড় ছেলে রবি। ছোট ছেলে রাহুল রাঁচির কলেজে পড়ে। তিনি জানান, আদ্রার কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় থেকে ৮২ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে রবি। বছর চারেক আগে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে জলপাইগুড়ি চলে যায়।
শোকার্ত মা ও ভাই।
প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর খবর পেয়ে শ্মশানে এসেছিলেন ইমন রায়, রাহুল সাহু, নিলয় দে-রা। তাঁরা জানান, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে স্কুল স্তরের জাতীয় প্রতিযোগিতায় শটপাট থ্রোতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন রবি। পরে জেলা স্তরের শটপাট প্রতিযোগিতায় প্রথম আর রাজ্যে তৃতীয়ও হন। কিছুদিন ধরে সর্বভারতীয় স্তরের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি এমটেক-এ ভর্তি হওয়ার জন্যও পড়াশোনা করছিলেন। ইমন, রাহুল, নিলয়রা বলেন, ‘‘মনের দিক থেকে যথেষ্ঠ শক্ত ছিল ও। আমদের কোনও সমস্যা হলে রবিই সাহস দিত। ওর মতো একটা শক্ত সমর্থ ছেলে অসুস্থ হয়ে দুম করে মারা যেতে পারে বলে আমাদের মনে হয় না।’’ পরিবারের মতোই রবির সহপাঠীরাও তাঁর মৃত্যুর তদন্ত দাবি করেছেন।
কিশোরবাবু বলেন, ‘‘জলপাইগুড়িতেই আমরা পুলিশকে বলেছি রবির মৃত্যু স্বাভাবিক কোনও কারণে হয়নি। এই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত হওয়া দরকার।” তিনি জানান, সোমবার রবির পরীক্ষা শেষ হয়েছিল। তার দু’দিন আগেই বাড়িতে ফোন করেছিল সে। তখনও কথা বলে তাঁদের মনে হয়েছে ছেলে শারীরিক এবং মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ রয়েছে।
রবির জেঠু অশ্বিনীবাবু বলেন, ‘‘জলপাইগুড়িতে গিয়ে আমরা রবির দেহের কয়েক জায়গায় রক্ত দেখি। আমরা নিশ্চিত এই মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। এর তদন্ত চাই।’’ জলপাইগুড়িতে গিয়ে খুনের মামলা দায়ের করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে এ দিন গুপ্ত পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে।