পুরুলিয়া আবগারি দফতরের সামনে। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের মধ্যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রভৃতির কাছেই মদের দোকান খোলার লাইসেন্স দেওয়া হল কোন যুক্তিতে তা জানতে শনিবার আবগারি দফতরে গিয়েছিলেন পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার নদিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। শনিবার দফতর ছুটি ছিল। সোমবার ফের শহরে মিছিল করে আবগারি দফতরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, ওই মদের দোকান গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করতে হবে।
জাতীয় ও রাজ্য সড়কের নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে মদের দোকান রাখা যাবে না বলে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। তার পরেই একটি মদের দোকান সরে নদিয়াড়া গ্রামের কাছে নদিয়াড়া-চন্দনকেয়ারি রাস্তার পাশে চালু হয়। খোলার পরেই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ সেখানে ভাংচুর চালান। তার পরে দোকানটি বন্ধই ছিল। সম্প্রতি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বলে একটি সাইনবোর্ড দোকানে টাঙানো দেখে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রবিবার গ্রামে মদ বোঝাই একটি গাড়ি আটক করেন স্থানীয় কিছু মহিলা। অভিযোগ ওঠে, বন্ধ দোকান থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে অবৈধ ঠেকে মদ পাঠানো হচ্ছে। পুলিশ গিয়ে গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করে থানায় নিয়ে যায়।
এ দিন অফিস খোলার পরে গ্রাম থেকে কয়েকশো মহিলা শহরে এসে মিছিল করে আবগারি দফতরে পৌঁছন। তাঁদের বেশির ভাগেরই হাতে ছিল লাঠি, ঝাঁটা আর প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা— গ্রাম থেকে মদের দোকান উচ্ছেদ করতে হবে। বিক্ষোভ দেখে কর্মীরা দফতরের মূল দরজা বন্ধ করে দেন। দরজার উপরেই ঝাঁটা দিয়ে আঘাত করতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে কয়েকজন প্রতিনিধি পরে জেলা আবগারি দফতরের আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অভিযোগ জানান। জেলা আবগারি দফতরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ সেন বলেন, ‘‘ওই গ্রামের মহিলারা মদের দোকান নিয়ে কিছু আপত্তির কথা জানিয়েছেন। দোকানটি বৈধ। তবে তাঁদের অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা হবে। বিধি লঙ্ঘন করে লাইসেন্স দেওয়া হয়ে থাকলে দোকান সরাতে বলা হবে।’’
অন্য দিকে, এ দিন মদের দোকানদারদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও জেলা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সংগঠনের পক্ষে গোলাপচাঁদ জয়সওয়াল জানান, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ও আবগারি দফতরে তাঁদের বক্তব্য জানানো হয়েছে। বৈধ দোকানে ভাংচুর ও হুমকির কথা বলে নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। গোলাপচাঁদ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই দোকান স্থানান্তরিত করেছি। কারও কোনও বক্তব্য থাকলে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। জেলার মন্ত্রী, প্রশাসনের প্রতিনিধি, আমাদের প্রতিনিধি ও যাঁদের আপত্তি থাকবে তাঁরা সবাই মিলে বলে কথাবার্তা হোক। সেখানে সমাধান না হলে না হয় আন্দোলন করবেন। কারও পরিবারে অসুবিধা হলে আমরাও সমব্যথী। কিন্তু আমরা তো আইন মেনেই ব্যবসা করছি। ভাঙচুর হবে কেন?’’
প্রশাসন তাঁদের দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছে বলে গোলাপচাঁদের দাবি।