ফাইল চিত্র।
ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের আটক করে রাখার অভিযোগ উঠেছিল শুক্রবার। শনিবার প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার দাবি করলেন, একটি নির্দিষ্ট দিনে বিভাগে অনুপস্থিতির ঘটনার ভিত্তিতে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের শুক্রবার বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। কোনও ভাবেই তাঁদের আটকে রাখা হয়নি। সেই নির্দিষ্ট দিনে ‘অনুপস্থিতি’র প্রমাণ স্বরূপ বিভাগীয় প্রধান-সহ ইংরেজির মোট ১০ জন অধ্যাপক-অধ্যাপিকার লিখিত বিবৃতিও প্রকাশ করা হয়েছে প্রেস বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে।
বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টা ৫০ মিনিট নাগাদ ইংরেজি বিভাগে পরিদর্শনে যান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সেখানে তখন বিভাগের একজন অধ্যাপক-অধ্যাপিকাও উপস্থিত ছিলেন না। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই ২৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক ডাকেন উপাচার্য। তাতে ইংরেজি বিভাগের প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলেন। বিশ্বভারতীর দাবি, “সব রকম সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিক্ষকই তাঁদের বিভাগে আসেন না এবং এটাই বিশ্ববিদ্যালয় দস্তুর হয়ে উঠেছে। অনুপস্থিতির এই বিষয়টা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য উপাচার্য মিটিং ডেকেছিলেন।”
যদিও শুক্রবার পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অরণি চক্রবর্তী দাবি করেছিলেন, একটি বিশেষ কাগজ উপাচার্যের হাতে তুলে না দেওয়ায় বৈঠকের নামে বিশ্বভারতী ইংরেজির অধ্যাপকদের আটকে রেখেছে। এ দিনের বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রসঙ্গে বিশ্বভারতী জানিয়েছে, “এটা দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার যে ইংরেজি বিভাগের এক জন সহকর্মী পদার্থবিদ্যা বিভাগের তাঁর এক জন সহকর্মীকে মিটিং-এর কারণ বিকৃত করে খবর পাঠান; এবং পদার্থবিদ্যা বিভাগের দুই জন সহকর্মী পুলিশে এই বলে অভিযোগ করেন যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের (ইংরেজি বিভাগের সহকর্মীদের) বেআইনি ভাবে আটক করে রেখেছে।’’
বিশ্বভারতীর বক্তব্য, “একটা ঘরোয়া বিষয়কে দু’জন অধ্যাপক ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে গেলেন! অধ্যাপক অধ্যাপিকাদের সঙ্গে যে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা করার অধিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবশ্যই আছে।’’ ঘটনাচক্রে, এ দিনই পদার্থবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান মানস মাইতিকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গেই দশ জন অধ্যাপক-অধ্যাপিকার লিখিত বয়ানও প্রকাশ করেছে বিশ্বভারতী, যেখানে প্রত্যকেই জানিয়েছেন, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১.৫০-এ তাঁরা বিভাগে ছিলেন না এবং এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।
বিশ্বভারতী ছাত্র-ছাত্রী ঐক্য মঞ্চের পাল্টা প্রশ্ন, “যদি সাধারণ বৈঠকই হয়েছিল, তা হলে পদার্থবিদ্যা বিভাগের দুই অধ্যাপককে ঢুকতে বাধা দেওয়া হল কেন, কেনই বা তালা ঝোলানো হয়েছিল ইংরেজি বিভাগে।’’ অন্যদিকে অল বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গৌতম মাইতি আঠকে রাখার অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে জানান, “আমরা মনে করি উপাচার্যের এ ধরনের পদক্ষেপ চরম বেআইনি, এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধ্বংস করার এক নগ্ন স্বৈরাচারী অপপ্রয়াস। অন্য দিকে, উপাচার্যের এই কাজ ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ীও চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’’