আজ, শুক্রবার আম্রকুঞ্জে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন। তার আগে চলছে প্রস্তুতি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
পড়ুয়াদের অনুপস্থিতি এবং আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীর ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিতির মধ্যে দিয়েই আজ, শুক্রবার আয়োজিত হতে চলেছে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠান। যে উদ্দেশ্যে সমাবর্তন আয়োজিত হয়, অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীদের যে অংশ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর অথবা গবেষণা স্তরে ডিগ্রি লাভ করেন, তাঁদের মানপত্র প্রদান এ বার করোনা পরিস্থিতির কারণে এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সেই প্রধান উদ্দেশ্যই অচরিতার্থ থেকে যাচ্ছে।
এ বছর সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনে বিশেষ গোপনীয়তাও রাখছে বিশ্বভারতী। সমাবর্তনের ২৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্তও অনুষ্ঠানের সূচি কিংবা অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি বিশ্বভারতীর তরফ থেকে। চিরায়ত প্রথা অনুযায়ী দীক্ষান্ত ভাষণ কে দেবেন, তা-ও জানা যায়নি। সমাবর্তন স্থলে সংবাদমাধ্যম ও সাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে নিজেদের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, শুক্রবার বিশ্বভারতীর আম্রকুঞ্জে রাজ্যপাল ও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে এবং বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে সকাল ৯.৩০ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আয়োজিত হবে ২০২০ সালের সমাবর্তন অনুষ্ঠান। প্রত্যেক ভবনের অধ্যক্ষেরাই তাঁদের ভবনের সমস্ত পড়ুয়ার হয়ে উপস্থিত অতিথিদের হাত থেকে স্মারক হিসেবে ছাতিম পাতা গ্রহণ করবেন বলেও সূত্রের খবর।
গত ২৪ ডিসেম্বর পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের সমাবর্তন অনুষ্ঠানেও এই একই পন্থা নেওয়া হয়েছিল। সমাবর্তন মঞ্চে ‘সপ্তপর্ণী’ গ্রহণ থেকে বাদ পড়াই নয়, পুরো অনুষ্ঠানেই কোনও পড়ুয়ার উপস্থিতি থাকছে না। শুধুমাত্র, সঙ্গীতভবনের পক্ষ থেকে যাঁরা অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন এবং এনসিসি ও এনএসএস-এর স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে যে পড়ুয়ারা থাকবেন, তাঁরাই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ পাবেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্বভারতীর সমস্ত অধিকর্তা, সমস্ত ভবনের অধ্যক্ষ, সমস্ত অধ্যাপক-অধ্যাপিকা এবং বিশেষ কিছু আধিকারিকেই উপস্থিত থাকবেন এই অনুষ্ঠানে।
তবে সমাবর্তন ঘিরে এই গোপনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, “সমাবর্তন অনুষ্ঠান পড়ুয়াদের কাছে মিলন মেলার মতো। সেখানে পড়ুয়ারা না থাকলে সমাবর্তন বিষয়টাই অর্থহীন হয়ে পড়ে। সমাবর্তন এমন একটি অনুষ্ঠান যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। সেখানে এমন অহেতুক গোপনতারও কোনও কারণ নেই। তবে, এখন বিশ্বভারতীর কোনও ঘটনাতেই আমি আর বিস্মিত হই না।’’
আম্রকুঞ্জে আল্পনা। নিজস্ব চিত্র।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যাচ্ছে, খুব কম সংখ্যক অতিথি নিয়ে সমস্ত করোনা বিধি মেনেই আয়োজিত হবে সমাবর্তন। আম্রকুঞ্জের জহর বেদির সামনের অংশে চিরাচরিত প্রথা মেনে আল্পনা দেওয়ার কাজ প্রায় শেষ। জহর বেদিকে কেন্দ্র করে প্যান্ডেল তৈরির কাজও চলছে জোর কদমে। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে সমাবর্তনকে ঘিরে যে রাজনীতির অভিযোগ উঠেছিল, রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে এই সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে সেই পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেদিকেও কড়া নজর রাখা হচ্ছে। বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে প্রথা অনুযায়ী যে দেশিকোত্তম, অবন-গগন ও রথীন্দ্র পুরস্কার দেওয়া হয়, তা-ও এবছর দেওয়া হবে না বলেই জানিয়েছেন এক আধিকারিক।
সব মিলিয়ে এক অভূতপূর্ব সমাবর্তনের সাক্ষী আজ থাকতে চলেছে শান্তিনিকেতন।