West Bengal Lockdown

দীপাবলির রাত যেন

করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় জোটবন্ধ হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার রাত ঠিক ন’টায় ন’মিনিটের জন্য ঘর অন্ধকার করে মোমবাতি, প্রদীপ, টর্চ, মোবাইলের ফ্ল্যাস লাইট জ্বালাতে বলেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০১:৫০
Share:

আঁধারে-আলো: বান্দোয়ানের ভসমকাটা গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

কে বলবে দেশ এখন সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে! রবিবার রাত ন’টা বাজতেই ‘ঘরবন্দি’ দুই জেলায় যেন নেেম এল দীপাবলির রাত।

Advertisement

অন্ধকার ঘরের জানলা, বারান্দা, ছাদ থেকে জ্বলে উঠল মোমবাতি, প্রদীপ। ঝলসে উঠল মোবাইলের ফ্ল্যাস লাইট। বাজল কাঁসর-ঘণ্টা, সঙ্গে উলু ধ্বনি। সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল বাজির শব্দ। তুবড়ি, রংমশাল, রকেট থেকে ফানুস— কিছুই বাদ গেল না। পুরুলিয়া থেকে আদ্রা, ঝালদা থেকে বান্দোয়ান, বাঁকুড়া থেকে বিষ্ণুপুর, বড়জোড়া থেকে খাতড়া— সর্বত্রই এক ছবি। তবে কোথাও কোথাও বাড়িতে আলোও জ্বলতে দেখা যায়।

করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় জোটবন্ধ হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার রাত ঠিক ন’টায় ন’মিনিটের জন্য ঘর অন্ধকার করে মোমবাতি, প্রদীপ, টর্চ, মোবাইলের ফ্ল্যাস লাইট জ্বালাতে বলেছিলেন। যদিও এ ভাবে আলো জ্বালিয়ে ওই মারণ রোগ কত দূর ঠেকানো গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

Advertisement

পুরুলিয়া জেলা সিপিএম যেমন গত কয়েক দিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালাচ্ছিল— ‘আমরা মোমবাতি জ্বালাব না’। কর্মীদের রাত ৯টায় বাড়ির আলো বন্ধ না করা ও মোমবাতি না জ্বালাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। অন্য দিকে, বিজেপি দলের সমস্ত স্তরের নেতা-কর্মীদের জানিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে রাত ৯টা থেকে ন’মিনিট বাড়ির আলো নিভিয়ে মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালাতেই হবে।

সিপিএমের পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধা ফেসবুকে কোভিড ১৯ মোকাবিলায় দেশে কতগুলি হাসপাতাল তৈরি হয়েছে, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কী পদক্ষেপ করছেন, এই সব প্রশ্ন তুলে জানিয়েছেন, তিনি মোমবাতি জ্বালাবেন না। তাঁর দাবি, মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ওই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তবে সিপিএমের অভিযোগকে উড়িয়ে বিজেপির পুরুলিয়ার সাধারণ সম্পাদক কমলাকান্ত হাঁসদা বলেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সবাইকে একজোট হয়ে লড়াইয়ে সামিল করতেই ওই ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী।”

জনতা-কার্ফুর দিন ২২ মার্চ, বিকেল ৫টায় প্রধানমন্ত্রী বারান্দা বা দরজায় দাঁড়িয়ে হাততালি দিতে কিংবা থালা-বাসন, ঘণ্টা বাজাতে বলেছিলেন। যদিও বাস্তবে অনেকে দল বেঁধে পথে নেমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি নিষেধ উড়িয়ে দেন। তাতে জনতা-কার্ফুর তৎপর্যও নষ্ট হয় বলে অভিযোগ। তাই এ বার মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালতে গিয়ে কেউ যাতে লকডাউন না ভাঙেন, সে ব্যাপারে কর্মীদের সজাগ করেছিলেন বাঁকুড়ার জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।

এ দিন সকাল থেকেই দলের কর্মীদের ফোন করে বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র নির্দেশ দেন, কোনও ভাবেই বাড়ির বাইরে বেরনো যাবে না। সবাইকে মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালাতে হবে নিজের বাড়িতে। তিনি বলেছিলেন, “লকডাউনের নিয়ম ভাঙা যাবে না।’’

এ দিকে এসইউসি-সহ কয়েকটি বামপন্থী রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রীর ডাকে মোমবাতি জ্বালানোর প্রতিবাদ জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন। সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে এই ধরনের কর্মসূচির যুক্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও বিজেপির চিকিৎসক সাংসদ সুভাষ সরকার একটি ভিডিও বার্তায় দাবি করেন, ‘‘মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়াতেই এই উদ্যোগ। তাতে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ে।’’

দু’তরফের মতাদর্শগত বিরোধের মাঝেই মোমবাতি ও প্রদীপ কেনা নিয়ে বাজারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। রবিবার ঝালদার কয়েকটি দোকানে মোমবাতি কেনার জন্য ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেলেও পুরুলিয়া শহর, আদ্রা, রঘুনাথপুর, বান্দোয়ানের বিক্রেতারো জানাচ্ছেন, মোমবাতি কিনতে ক্রেতা এসেছিলেন হাতে গোনা।

ঝালদার মুদি দোকানি বিমল কেডিয়া বলেন, ‘‘এ দিন মোমবাতি কিনতে অনেকেই দোকানে এসেছিলেন। পঞ্চাশ প্যাকেট মোমবাতি বিক্রি করেছি।’’ ঝালদার বানমিয়া গ্রামের মহেন্দ্র কুমার জানান, তিনি নিজের পরিবার ও পড়শিদের জন্য পাঁচ প্যাকেট মোমবাতি কিনেছেন। তবে পুরুলিয়া শহরের নেপাল পান্ডে, সলিল কুণ্ডু, সুজয় বাউরি, কাশীপুরের বৈদ্যনাথ কৈবর্ত্যেরা জানাচ্ছেন, দীপাবলির সময়ে বেঁচে যাওয়া মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালাবেন তাঁরা।

দীপাবলিতে অবিক্রিত প্রদীপ ও মোমবাতির সম্ভার ঝুড়িতে সাজিয়ে বিক্রি করতে দেখা গিয়েছে বাঁকুড়ার কিছু ব্যবসায়ীকে। বাঁকুড়ার চকবাজারে দশকর্মার দোকানি গৌর দে, দুলাল কারক বলেন, “লকডাউনের জন্য দোকান বন্ধ। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় দীপাবলিতে বিক্রি না হওয়া মোমবাতি ও প্রদীপ বিক্রির একটা সুযোগ আমরা পেয়েছি। তাই এটাকে হাতছাড়া করিনি।” বিষ্ণুপুর বা খাতড়ায় সে ভাবে বেচাকেনা তেমন দেখা যায়নি।

বাঁকুড়ার স্কুলডাঙার বাসিন্দা রাজেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এতে করোনাভাইরাস রোখা যাবে কি না জানি না। তবে লকডাউনে ঘরে বসে বসে সকলেই একপ্রকার অবসাদে ভুগছেন। এই পরিস্থিতিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে একটু মনোরঞ্জনও যদি হয়, তাতে ক্ষতি কী!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন