বাঁকুড়া কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক

পরিচালন কমিটি ভেঙে জেলাশাসককে দায়িত্ব

বন্ড কিনতে গিয়ে ব্রোকারের উপরে অন্ধ বিশ্বাস করার পরিণামে ১৫ কোটি টাকা চোট খেয়েছে বাঁকুড়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক (বিডিসিসিবি)।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২২
Share:

বন্ড কিনতে গিয়ে ব্রোকারের উপরে অন্ধ বিশ্বাস করার পরিণামে ১৫ কোটি টাকা চোট খেয়েছে বাঁকুড়া জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক (বিডিসিসিবি)। এই খবর প্রকাশিত হতেই সাধারণ গ্রাহকদের এক বড় অংশের আস্থা টলে গিয়েছিল ব্যাঙ্কের তৃণমূল পরিচালন কমিটির উপর থেকে। তা আঁচ করে এ বার সেই গোটা কমিটিই ভেঙে দিল রাজ্য সমবায় দফতর।

Advertisement

সম্প্রতি রাজ্য সমবায় দফতরের তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করে বাঁকুড়ার জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুকে জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের স্পেশাল অফিসার বা বিশেষ আধিকারিকের দায়িত্বে দেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়া জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার অফ কো-অপারেটিভ সার্ভিসেস (এআরসিএস) দেবসুন্দর মাইতি বলেন, “বিশেষ অফিসার নিয়োগ করা মানেই ওই ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটির আর কোনও অস্তিত্ব থাকে না। ব্যাঙ্কের যাবতীয় সিদ্ধান্ত এ বার নেবেন বিশেষ আধিকারিকই।’’

মৌমিতাদেবী বলেন, “সমবায় দফতরের চিঠি পেয়েছি। আমাকে বিডিসিসি ব্যাঙ্কের বিশেষ অফিসারের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে। শীঘ্রই দায়িত্ব নেব। এ বিষয়ে ব্যাঙ্কের সিইও-র সঙ্গে আলোচনা করব।’’

Advertisement

বিরোধীদের অবশ্য দাবি, নিছক ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের ভুল বা গাফিলতিতে নয়, বরং ১৫ কোটি টাকা চোট হওয়ার ঘটনায় দুর্নীতির ছায়া দেখা গিয়েছে বলেই তৃণমূলের পরিচালন কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যদিও এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ওই ব্যাঙ্কের আধিকারিকেরা। ব্যাঙ্ক পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান, জেলা তৃণমূল নেতা জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুক্রবার অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

২০১৫ সালে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বন্ড কেনার সিদ্ধান্ত নেন বিডিসিসি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। সেই মোতাবেক দেবাঞ্জন রায় নামে এক ব্রোকারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১৫ কোটি টাকা আরটিজিএস করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। টাকার পরিবর্তে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বন্ডের কিছু নথিপত্র বিডিসিসিবি কর্তৃপক্ষ হাতে পান। চলতি বছর জানুয়ারিতে সেই নথি ভাঙিয়ে টাকা তোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যান গিয়ে বিডিসিসিবি-র আধিকারিকেরা জানতে পারেন, সব নথিপত্রই জাল! বছরের গোড়ায় এই ঘটনা ঘটলেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দায়ের করেন চলতি জুলাইয়ে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ব্রোকার দমদমের যোগীপাড়া রোদের বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত সিআইডি-কে হস্তান্তর করেছে। দেবাঞ্জন পলাতক।

প্রায় ৯৪ বছরের এই সমবায় ব্যাঙ্কের গ্রাহক সংখ্যা লক্ষাধিক। বিডিসিসিবি-র পরিচালন কমিটির বিরুদ্ধে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা। তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ সমবায় বাঁচাও’ সংগঠন। কোনও রকম দুর্নীতির অভিযোগ অবশ্য প্রথম থেকেই অস্বীকার করেছে পরিচালন কমিটির চেয়ারম্যান জয়দীপবাব। বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে উঠে আসার পরে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়। অনেকেই জমা টাকা তুলে নেওয়া শুরু করেন।

তবে, পরিচালন কমিটি ভেঙে দিয়ে জেলাশাসককে ওই ব্যাঙ্কের স্পেশ্যাল অফিসারের দায়িত্ব দেওয়ায় গ্রাহকেরা স্বস্তি পেয়েছেন। বাঁকুড়ার বাসিন্দা মদন তন্তুবায়, সুশান্ত নন্দীদের মতো গ্রাহকেরা বলেন, “আমরা খুবই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তবে জেলাশাসককে বিশেষ আধিকারিকের দায়িত্ব দেওয়ায় কিছুটা ভরসা ফিরেছে আমাদের।’’

জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন অধিকর্তা তথা জেলা সিপিএম নেতা প্রতীপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “শুধু সাধারণ মানুষের কাছেই নয়, এই ঘটনা প্রমাণ করল, ওই ব্যাঙ্কের শাসকদলের পরিচালন কমিটি রাজ্য সরকারের কাছেও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। সেই কারণেই বোর্ড ভেঙে জেলাশাসককে বিশেষ আধিকারিকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’

তবে, এখানেই থমকে গেলে চলবে না। গোটা ঘটনাটি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “খুঁজে বের করতে হবে সাধারণ মানুষের ওই ১৫ কোটি টাকা কাদের পকেটে ঢুকেছে। যত দিন পর্যন্ত দোষী ব্যক্তিরা ধরা না পড়ছে, তত দিন আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন