শামিম শেখ। নিজস্ব চিত্র
তিন বছর আগে খুন হয়েছিল এক স্কুলছাত্র। সেই ঘটনার অন্যতম সাক্ষী, নিহত ছাত্রটির পিসতুতো দাদার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হওয়ায় শোরগোল পড়েছে মহম্মদবাজার থানার সোঁতশাল গ্রামে। থানায় মোট আট জনের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই আট জনের মধ্যে পাঁচ জন ওই স্কুলছাত্র খুনের ঘটনাতেও অভিযুক্ত। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম শামিম শেখ (২০)। বাড়ি সোঁতশালেই।
বুধবার মহম্মদবাজারের লোহাবাজারের কাছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে কাজে যাওয়ার সময় কয়েকজন বাসিন্দা ঝোপের ধারে রক্ত পড়ে থাকতে দেখে। কৌতূহলী হয়ে এগিয়ে যেতেই তাঁরা দেখেন, ঝোপে পড়ে রয়েছে ক্ষতবিক্ষত দেহ। দ্রুত তাঁরা থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধার করে মহম্মদবাজার থানায় নিয়ে যায়। প্রথমে দেহটি সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পরে পুলিশ জানায়, মৃতদেহটি সোঁতশাল গ্রামের বাসিন্দা আসগর আলির ছেলে শামিমের। পরে ময়নাতদন্তের জন্য দেহ সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে থানায় গিয়ে শামিমের দেহ দেখতে না পেয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁর পরিবারের লোকজন। পুলিশ কুকুর নিয়ে এসে তদন্তের দাবিও জানানো হয়। থানার বড়বাবু মাধব মণ্ডলের আশ্বাসে বিক্ষোভ ওঠে।
শামিমের মামা মহম্মদ আসাদুল্লাহ দাবি করেন, তাঁর ভাগ্নেকে খুনই করা হয়েছে। কারণ, তাঁর ছেলে নয়নের খুনের ঘটনার সাক্ষী ছিলেন শামিম। ২০১৫ সালের ১৭ মে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় স্থানীয় কাপাসডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নয়ন শেখ (১৩)। ঘটনার তিন দিন পর ২০ মে পার্শ্ববর্তী সালুকা গ্রামের একটি ক্যানালের ধারে শরবনের ভিতর থেকে নয়নের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করে মহম্মদবাজার থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, নয়নের খুনের ঘটনায় মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তাদের মধ্যে চার জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান। কিন্তু এক জন এখনও পলাতক। ওই ঘটনার পর থেকেই সোঁতশাল গ্রামে নয়নের পরিবার এবং অভিযুক্ত পক্ষের মধ্যে বিবাদ চলে আসছে।
আসাদুল্লাহের অভিযোগ, জামিন পাওয়ার পরেও অভিযুক্তেরা লাগাতার তাঁদের মামলা তোলার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন,‘‘সন্তান হারানোর শোক কী, আমার চেয়ে ভাল আর কেউ জানে না। আমি বাড়িঘর বিক্রি করেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা চালাচ্ছি। দিনের পর দিন অভিযুক্তেরা আমাদের পরিবারের লোকজনকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। পুলিশকে সব জানিয়েছি।’’
পরিবার সূত্রের খবর, শামিমের বাবার দশ চাকার ট্রাক রয়েছে। সেটি মূলত পাথর পরিবহণের কাজে লাগানো হয়। শামিমই ট্রাকটির দেখভাল করতেন। মঙ্গলবার বিকেলে ট্রাকর চালক ও কর্মীদের মজুরি দিতে মহম্মদবাজার ব্লক সদরে গিয়েছিলেন তাঁর ভাগ্নে। আসাদুল্লাহর দাবি, ‘‘বিকেলে শামিম আমাকে ফোন করে বলে, ওর মনে হচ্ছে মুখে কাপড় বেঁধে কয়েকজন ওর পিছু নিয়েছে। আমি ওকে বলি, গ্রামে না ফিরে মহম্মদবাজারেই কোথাও থেকে যেতে। তার পর থেকে আর ভাগ্নের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এ দিন সকালে এল দুঃসংবাদ!’’ পুলিশ-প্রশাসনের উদ্দেশে আসাদুল্লাহের প্রশ্ন, ‘‘দেশে কি আইন নেই? আমরা কি আমাদের কি বাঁচার অধিকার নেই?’’
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, পুরো ঘটনা এখন তদন্ত সাপেক্ষ। এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ কুকুর নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশ কুকুরটি ঝোপের ধারে শোঁকাশুঁকি করে এ দিক, ও দিক কিছুটা ছুটে যায়। তার পর আবার ঝোপের কাছে ফিরে আসে।