আক্রান্ত: হাসপাতালে রাজলক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
মাদক কারবারের রমরমা, অস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি, চুরি, ছিনতাই লেগেই রয়েছে শহরে— এ বার ফের দুষ্কৃতী-তাণ্ডব দেখল জেলা সদর সিউড়ি।
বাড়ির দরজায় মাদকাসক্তদের অভ্যতার প্রতিবাদ করায় আক্রান্ত হলেন এক বধূ। অভিযোগ, মাদকাসক্তেরা চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় টেনে এনে ওই মহিলাকে গাছের ডাল দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। আক্রান্ত হন ওই মহিলার ছেলেও। বুধবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটে সিউড়ির লালকুঠিপাড়ায়। জখম মহিলাকে সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর পরিবারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সিউড়ি থানার পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, লালকুঠি পাড়ায় পৈতৃক ভিটেতে দীর্ঘদিন ধরে থাকেন সিউড়ি জেলা আদালতের হেড ক্লার্ক প্রসাদ মুখোপাধ্যায়। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁরই স্ত্রী রাজলক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, জেলা আদালতের কর্মীর পরিবার এ ভাবে আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলা জজ পার্থসারথি সেন।
প্রসাদবাবু জানান, তাঁদের বাড়ির সামনের গলিতে অনেক দিন ধরে মাদকাসক্তদের উপদ্রব ছিল। মাসখানেক ধরে তা আরও বেড়েছে। অশ্লীল ভাষায় চিৎকার করা থেকে নিজেদের মধ্যে নানা অপরাধ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বচসা লেগেই থাকত। জেলা আদালতের ওই কর্মী বলেন, ‘‘আমার দুই ছেলে কর্মরত। ছোটছেলে কুন্দন জেলা জজের পিএ। বড়ছেলে সোমরাজ বেসরকারি সংস্থার কর্মী। প্রতি দিন সকাল ১০টার পর বাড়িতে একাই থাকে স্ত্রী। বাড়ির সামনে দিনের পর দিন এই অসভ্যতা সহ্য করতে না পেরে মঙ্গলবার প্রতিবাদ করেছিল সে। দুষ্কৃতীরা ওর মুখে অ্যাসিড ছোঁড়ার হুমকি দেয়। বুধবার সকালে মৌখিক ভাবে ঘটনার কথা সিউড়ি থানায় জানাই। কিন্তু তারপরও এমন ঘটল।’’
ঠিক কী ঘটেছিল?
ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য দিনের মতো বুধবার বিকেল ৩টে নাগাদ প্রসাদবাবুর বড় ছেলে সোমরাজ দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন মাদকাসক্তরা জমায়েত হয়েছে তাঁদের বাড়ির দরজার সামনে। কেন মাকে আগের দিন এমন কথা বলেছিল তারা, কেন এ ভাবে দরজা আটকে আসর বসাবে— তা জানতে চাইতেই সোমরাজকে দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করে বলে অভিযোগ। ছেলের চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে বেরতেই দুষ্কৃতীরা চড়াও হয় রাজলক্ষ্মীদেবীর উপরও। অভিযোগ, চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে গাছের ডাল ভেঙে বেধড়ক মারধর করা হয় তাঁকে।
প্রসাদবাবু বলেন, ‘‘তখন আদালতে ছিলাম। খবর পেয়েই তা জানাই জেলা জজকে। তারপরই বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পাড়ার লোকজন না এলে আরও বড় ঘটনা ঘটত।’’ বুধবার রাতে সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি ফিরেছেন রাজলক্ষ্মীদেবী। শরীরে যন্ত্রণা কমেনি তখনও। তিনি বলেন, ‘‘কখনও ভাবতে পারিনি বাড়ির দোরগোড়ায় দুষ্কৃতীদের হাতে মার খেতে হবে।’’
দিনের বেলায় শহরে এমন ঘটনা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শহরবাসীর একাংশের প্রশ্ন, কী করছে পুলিশ? বুধবারই লালকুঠিপাড়া থেকে কিছু সশস্ত্র দুষ্কৃতী আদালতে চত্বরে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। পুলিশের দাবি, ঘটনার অভিযোগ পাওয়ার পরই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। লালকুঠিপাড়া থেকে ধরা হয়েছে ৬ জনকে। ধৃতদের বৃহস্পতিবার সিউড়ি সিজেএম আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠান বিচারক।
শুধু সিউড়িই নয়, মাদক কারবারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে দুবরাজপুরের হেতমপুরেও। জখম হয়েছেন দুই প্রতিবাদী ভাই ভীষ্মব্রত ও সূ্র্যব্রত সরকার। অভিযোগ, প্রতিবাদ করায় মাদক কারবারে জড়িত শিরঞ্জীব বাউড়ি বাঁশ দিয়ে দুই ভাইকে পিটিয়েছে। অভিযুক্তকে ধরেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে খবর, কিছু দিন ধরে হেতমপুর ধামুরিয়া পাড়ায় একটি পুকুরের ধারে অস্থায়ী চালা তুলে মাদকের কারবার চালাচ্ছিল ওই যুবক। সেখানে চলছিল দেদার মদ, গাঁজা, হেরোইন। বাইরে থেকে সমাজবিরোধীরা যাতায়াত করছিল। ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে গত মার্চে একটি গণস্বাক্ষরিত আবেদন পুলিশের কাছে দেন স্থানীয় মানুষ। ভীষ্মব্রতবাবুর অভিযোগ, ‘‘কেন আমরা সেই গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছিলাম, সেই আক্রোশ মেটাতে আমাদের উপর হামলা চালায় ওই যুবক।’’