প্রতীকী ছবি।
পরিযায়ী হলেও উপসর্গহীনদের আর যথেচ্ছ পরীক্ষা হবে না বীরভূমে। এখন মানা হবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ, আইসিএমআর এর গাইডলাইন। বীরভূম জেলা প্রশাসন এখন এমনই অবস্থান নিয়েছে।
যে জেলায় আক্রান্তদের প্রায় ৯৫ শতাংশের কোনও উপসর্গ নেই, সেই বীরভূমে উপসর্গ ছাড়া রোগীর করোনা টেস্ট না-হলে প্রকৃত ছবি ধরা পড়বে কী, এই প্রশ্ন উঠেছে। ইতিমধ্যেই জেলায় করোনা সংক্রমণ প্রায় পৌনে দুশো ছুঁয়ে ফেলেছে। দুঃশ্চিন্তার ভরকেন্দ্রে রয়েছেন হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। সেখানে এমন সিদ্ধান্ত কেন? সরাসরি প্রসঙ্গ এড়িয়ে জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর জবাব, ‘‘আইসিএমআরের গাইডলাইন মেনেই কাজ হবে।’’ একই বক্তব্য বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়িরও। তিনি বলছেন, ‘‘‘উপর থেকে যা নির্দেশ আসবে সে ভাবেই কাজ হবে।’’
জেলায় এখনও পর্যন্ত যে সব রোগীর দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে, তাঁদের প্রায় সকলেই পরিযায়ী শ্রমিক। পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে পরিযায়ী শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনগুলি থেকে নামা যাত্রীরা। তবে, সংক্রমিত রাজ্য থেকে ফেরা কোন শ্রমিকদের করোনা টেস্ট হবে তা নিয়ে বারবার স্ট্রাটেজি বদলেছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল, ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরলেই তাঁদের ত্রাণ শিবিরে রেখে লালা রসের নমুনা নিয়ে বাড়িতে ১৪ দিনের নিভৃতবাসে থাকতে বলা হবে। পজেটিভ হলে স্থানান্তরিত করা হচ্ছিল কোভিড হাসপাতালে। কিন্তু, শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনগুলি জেলায় আসার আগেই একবার অবস্থান পাল্টায় রাজ্য প্রশাসন। নির্দেশ দেওয়া হয়, পরিয়ায়ীদের টেস্ট করানোর কড়াকড়ি নেই। কিন্তু, সংক্রমণ বাড়বে দেখে একদিনের মাথায় ফের সিদ্ধান্ত বদল হয়। পরে আবার রাজ্য প্রশাসন জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়, সংক্রমণের চূড়ান্ত অবস্থায় থাকা মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, দিল্লি এবং তামিলনাড়ু এই— পাঁচটি রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক নিভৃতবাসে রাখার। প্রত্যেকের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করার। সেই ভাবেই চলছিল। সেখান থেকে ফের কিছুটা অবস্থান বদল করা হল। এখন ভরসা আইসিএমআরের গাইডলাইন।
পরিযায়ী শ্রমিকেরা আসার সঙ্গে-সঙ্গেই তাঁদের লালারস পরীক্ষা করানো হলে ঠিক ফল মিলবে না। তাই প্রাথমিক ভাবে অন্তত সাত দিন তাঁদের কোয়রান্টিনে (সর্বাধিক করোনা-কবলিত পাঁচটি রাজ্য থেকে এলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়রান্টিন, না হলে বাড়িতেই কোয়রান্টিন) রেখে তবেই পরীক্ষার জন্য লালারস সংগ্রহ করা হবে। সেখানেও উপসর্গের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে সেখানেই। ভিন্ রাজ্য থেকে বিরাট সংখ্যক মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করার পরে সংক্রমণ বেড়েছে। বহু আক্রান্তের খোঁজ মিলছে। তার উপরে আবার বহু টেস্টের রিপোর্ট পাওয়া বাকি। কন্টেনমেন্ট জোন তৈরি হচ্ছে। সেই অবস্থায় যদি টেস্ট করার জন্যও উপসর্গ খোঁজা হয় বা তার আগেই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে উপসর্গহীন করোনা বাহকেরা অন্যদের সংক্রমিত করবেন।
জেলা প্রশাসনের দাবি, আইসিএমআর সব দিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অহেতুক ভয় পেয়ে বা পাইয়ে লাভ নেই। কাদের লালারসের নমুনা পরীক্ষা করতে হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে আইসিএমআর।