আর ক’দিন পঞ্চায়েতে, প্রশ্ন মাড়গ্রামে

রামপুরহাট শহর থেকে মাড়গ্রামের দূরত্ব চার মাইল। শহর লাগোয়া গ্রাম হওয়ার জন্য গ্রামে আধুনিক জীবনের ছোঁওয়া অনেক দিন আগেই লেগেছে। কিন্তু সেই আধুনিকতাকে ঘিরে যে নাগরিক জীবন মাড়গ্রামের বাসিন্দারা তা থেকে আজও বঞ্চিত। সেই বঞ্চনার জায়গা থেকেই দাবি উঠেছে মাড়গ্রামকে পুরসভা করার।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০০
Share:

ঝাঁ চকচকে রামপুরহাট ২ ব্লক অফিস। মাড়গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

রামপুরহাট শহর থেকে মাড়গ্রামের দূরত্ব চার মাইল। শহর লাগোয়া গ্রাম হওয়ার জন্য গ্রামে আধুনিক জীবনের ছোঁওয়া অনেক দিন আগেই লেগেছে। কিন্তু সেই আধুনিকতাকে ঘিরে যে নাগরিক জীবন মাড়গ্রামের বাসিন্দারা তা থেকে আজও বঞ্চিত। সেই বঞ্চনার জায়গা থেকেই দাবি উঠেছে মাড়গ্রামকে পুরসভা করার।

Advertisement

জনবসতি, বাসস্থান, ভৌগোলিক পরিমণ্ডল, পরিবেশ, সামাজিক অবস্থা, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উল্লেখ করে একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্য সচিব, পুর দফতর, জেলা প্রশাসনের সর্বস্তরে মাড়গ্রামকে পুরসভা গড়ে তোলার দাবিতে আবেদন জানিয়ে আসছে এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর দাবি, বছর খানেক আগে কয়েক হাজার পোস্ট কার্ডের মাধ্যমে রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, সদুত্তর মেলেনি কোথাও!

কার্যত নেতিবাচক উত্তর শুনতে শুনতে এখন চাপা ক্ষোভ জমেছে মাড়গ্রামে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নলহাটি শহর আগে নলহাটি ‘এ’ ও ‘বি’ এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত ছিল। ২০০১ সালে অপেক্ষাকৃত কম জনসংখ্যা নিয়ে নলহাটিতে মাত্র ১৬টি ওয়ার্ড নিয়ে পুরসভা গঠিত হয়েছে। আবার ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য সরকার রাজ্যে যে ছ’টি নতুন পুরসভা গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে মল্লারপুর ১ ও ২ দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে মল্লারপুর পুরসভা এবং তারাপীঠ ও সংলগ্ন গ্রাম নিয়ে তারাপীঠ পুরসভার নাম ঘোষিত হয়েছে। অথচ সে তালিকায় নেই মাড়গ্রাম!

Advertisement

এলাকার আক্ষেপ, মাড়গ্রামে যেহেতু সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের বাস বেশি, সেই জন্য মাড়গ্রামকে উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে রাখা হয়েছে। মাড়গ্রাম হাইস্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক, এলাকার বাসিন্দা মারফত্‌ সেখ বলেন, “এত বড় একটা গ্রামকে দু’টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বেধে দিয়ে কার্যত মাড়গ্রামের উন্নয়নকে স্তব্ধ করে রাখা হয়েছে। কেন একটা গ্রামকে দুটো পঞ্চায়েতে ভাগ করে দিয়ে, একটা গ্রামের মধ্যে বিভেদ রেখা টানা হবে? আমরা চাই মাড়গ্রামকে পুরসভা করা হোক।” মাড়গ্রামের বাসিন্দা তথা কংগ্রেস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র জেলা সভাপতি আইনজীবী মিলটন রসিদ বলেন, “মাড়গ্রামকে পুরসভা করার জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে এসেছি। রাজ্যপালের কাছে এলাকাবাসীর দাবি, হাজার খানেক পোস্টকার্ডের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সে দাবি আজও মেটেনি।”

মিলটন রসিদের অভিযোগ, এর জন্য এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে বিধায়কের সদর্থক পদক্ষেপ না করার জন্যই মাড়গ্রাম যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরে পড়ে আছে। এলাকাবাসীর একাংশের ক্ষোভ হাঁসন কেন্দ্রের ছ’বারের বিধায়ক অসিত মালও এ ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেননি। ঘটনা হল, মাড়গ্রামের বাসিন্দা অসিত মাল ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূম জেলার একমাত্র কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন। ২০১৪ সালের ২১ জুলাই তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁরই শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এই মাড়গ্রাম।

একনজরে

• পঞ্চায়েত: ২

• সংসদ: ২২

• জনসংখ্যা: ২৯,৯২১

• হাইস্কুল: ৪

• প্রাথমিক স্কুল: ১৮

• শিশুশিক্ষা কেন্দ্র: ১

সেই এলাকাকে পুরসভা গড়ে তুলতে অসিতবাবু কী করেছেন? ছ’ বারের বিধায়কের জবাব, “পুরসভার দাবি এলাকাবাসীর অনেক দিনের। বিরোধী রাজনীতির দলে থাকার সময় বাম আমলে একাধিক বার বিধানসভায় মাড়গ্রামকে পুরসভা গড়ে তোলার দাবি রেখেছি। এখন সরকারকে এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলব।” মাড়গ্রামের বধূ তথা বর্ধমানের তৃণমূল সাংসদ এবং রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, মাড়গ্রামের বাসিন্দা নুরে আলম চৌধুরীর স্ত্রী সঙ্ঘমিতা চৌধুরীরও মানছেন, “মাড়গ্রাম তো একটা গ্রাম নয়, ভৌগোলিক পরিবেশ, বাসস্থান, জনবসতি অনুযায়ী মাড়গ্রামকে অবশ্যই পুরসভা করা উচিত।”

রামপুরহাট থানার অধীন থাকা মাড়গ্রাম এবং তার সংলগ্ন এলাকা, আশির দশকে মাড়গ্রাম থানায় পরিণত হয়। সেই সময় মাড়গ্রামের ভিতর ভাড়াবাড়িতে মাড়গ্রাম থানার কাজ চলত। ২০০১ সালের পরে ব্লক অফিসের লাগোয়া এলাকায় মাড়গ্রাম থানার নিজস্ব ভবন গড়ে ওঠে। গ্রামের ভিতর ব্লক অফিসের কার্যালয়, থানার নিজস্ব ভবন গড়ে ওঠার পরে মাড়গ্রামে ব্লক অফিসের সহযোগী অফিসগুলি দীর্ঘ দিন গড়ে ওঠেনি। এলাকায় একমাত্র ডাকঘর। দীর্ঘদিন থেকে মাড়গ্রামের ডাকঘর একজন মাত্র কর্মী নিয়ে ভাড়া বাড়িতে চলত। এখনও সে ডাকঘর সাব পোস্ট অফিস হয়নি। ডাকঘরের নিজস্ব ভবনও হয়নি। বর্তমানে গ্রামের লাইব্রেরিতে ডাকঘর চলছে।

মাড়গ্রামের খেঁদাপাড়ার বাসিন্দা সাধন প্রামাণিক, মাহিপাড়ার বাসিন্দা নেয়ামত হোসেন, সরকার পাড়ার বাসিন্দা মজুবর রহমান সরকাররা জানান, “এত বড় এলাকা অথচ সাব পোস্ট অফিস আজও নেই। এর জন্য রামপুরহাট ছুটতে হয়।” এলাকার বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং রামপুরহাট পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি জাকির হোসেন মাড়গ্রামে ব্লক অফিস ও অন্যান্য অফিস স্থাপনের দাবিতে দীর্ঘ দিন আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, “মাড়গ্রামকে পুরসভা গড়ে তোলার দাবিও দীর্ঘ দিনের।”

এলাকার প্রায় সব মহলই মাড়গ্রামকে পুরসভা হিসেবে ঘোষণার দাবি তুললেও, রামপুরহাট ২ ব্লকের বিডিও সৌমনা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করছেন তাঁর কাছে এখনও কেউ মাড়গ্রামকে পুরসভা গড়ে তোলার আবেদন জানায়নি। এর পরেও তিনি বলছেন, “আবেদন এলে তা শীর্ষমহলের নজরে আনা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন