নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর নবনির্মিত মন্দির। —নিজস্ব চিত্র।
একসময় গ্রাম্য বিবাদের জেরে, রাজনৈতিক হানাহানিতে তেতে থাকত যে গ্রাম, সেই গ্রামই এ বার উঠে আসছে জেলার পর্যটন-মানচিত্রে।
নিত্যানন্দ মহাপ্রভু জন্মেছিলেন যে গ্রামে, ময়ূরেশ্বর থানার সেই বীরচন্দ্রপুর গ্রামটিতে পর্যটন কেন্দ্রের পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা পরিষদ। সম্প্রতি চৈতন্যদেবের পার্ষদ নিত্যানন্দের জন্মোত্সব উপলক্ষে নব নির্মিত মন্দিরে মহাপ্রবেশ তথা অভিষেক অনুষ্ঠানে গিয়ে সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী বলেন, “নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর নতুন মন্দিরটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়েছে। আমরা প্রশাসনিক ভাবে বীরচন্দ্রপুরকে পর্যটনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সব রকমের চেষ্টা শুরু করেছি।”
রামপুরহাট- সাঁইথিয়া সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে এই গ্রামটি বছর কুড়ি আগে পর্যন্ত তপ্ত থাকত রাজনৈতিক কোন্দলে। ওই গ্রামেই জন্মেছিলেন চৈতন্যদেবের পার্ষদ নিত্যানন্দ। তাঁর সূতিকাগারকে ঘিরে একটি আশ্রম-সহ এলাকাটিতে এই পর্যটনের পরিকল্পনা। প্রাচীন ওই আশ্রমকে বলা হয় ‘এক-চক্রাধাম’। নিত্যানন্দের অগণিত ভক্ত বহুকাল ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা সময়ে এসে জড় হয়েছেন ওই আশ্রমে। তবু এতকাল, নিত্যানন্দের জন্মস্থান তেমন ভাবে পরিচিতি পাইনি। তবে এবার পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য ভাবে বীরচন্দ্রপুরকে তুলে ধরা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিকাশবাবু।
ইতিমধ্যেই কর্ণাটক ও ওড়িশার স্থাপত্য শিল্পের আদলে মন্দিরের সংস্কার এগিয়েছে। ওড়িশার ৪১ জন পাথর খোদাই শিল্পী গত দেড় বছর বীরচন্দ্রপুরে থেকে মন্দিরের ভাস্কর্য তৈরির কাজ করেছেন। ১৬০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট নতুন মন্দিরটিতে রয়েছে ন’টি চূড়া। পাশাপাশি ওই মন্দিরের গর্ভ গৃহে রাজস্থানের মার্বেল শিল্পীরা শ্বেত পাথরের নানা ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। এক পর্যটক বলেন, “খুবই আকর্ষণীয় মন্দিরটি। পর্যটনের আদর্শ জায়গা হয়ে উঠতেই পারে। তবে বাইরে থেকে মানুষ গিয়ে থাকতে পারে, সেই ব্যবস্থাও থাকা দরকার।”
ইতিমধ্যেই মানুষের আর্থিক সহায়তায় মন্দির প্রাঙ্গনে সংস্কৃতি অঙ্গন ও স্থায়ী ঐতিহাসিক সংগ্রহশালা গড়ে তোলার কাজ চলছে। সংগ্রহশালায় থাকবে শ্রী চৈতন্য এবং নিত্যানন্দের সামগ্রী। পাণ্ডুলিপি, পুঁথি সহ বৈষ্ণব সাহিত্যের যাবতীয় উপকরণ। বৈষ্ণব সাহিত্য নিয়ে কাজ করা গবেষকেরা সব রকমের তথ্য পাবেন ওই সংগ্রহশালায়। অধ্যক্ষ জীবশরণ দাস বলেন, “ওই মন্দির প্রাঙ্গনে গড়ে তোলা হচ্ছে নিত্যানন্দ রিসার্চ ইন্সটিটিউট। শুধু ধর্মীয় কাজই নয়, সমাজের নানা সেবা মূলক কাজও হয়ে আসছে এই প্রতিষ্ঠানে।”