শাসকদলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অনাস্থা আনা অব্যাহত পুরুলিয়ায়।
বুধবার তৃণমূল পরিচালিত মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে অনাস্থার আবেদন জানালেন ওই সমিতির সহসভাপতি-সহ তৃণমূল সদস্যদের একাংশ। লিখিত ভাবে এ দিন বিডিও-র কাছে তাঁরা অনাস্থার চিঠি দিয়েছেন। মঙ্গলবার তারা মহকুমাশাসকের কাছেও একই আবেদন জমা করেছেন। সম্প্রতি মানবাজার ২ ব্লকের আঁকরো-বড়কদম গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের দ্বন্দ্বের একই ছবি দেখা গিয়েছেন। ওই পঞ্চায়েতে প্রধান ছিলেন দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি প্রভাস মণ্ডলের পুত্রবধূ রেখা মণ্ডল। পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ রেখাদেবীর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তাঁকে পদচ্যুত করেন।
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে। সমিতির সভাপতি গীতা মাহাতোর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছেন দলীয় সদস্যদেরই একাংশ। এই পঞ্চায়েত সমিতির মোট ১৮ জন্য সদস্যের মধ্যে তৃণমূলেরই ১৬ জন। বাকি দুই সদস্য সিপিএমের। সমিতির সহসভাপতি সীতারাম মুর্মুর অভিযোগ, “সমিতি পরিচালনায় গীতাদেবী কারও পরামর্শ নিতেন না। এমনকী কর্মাধ্যক্ষেরাও বহু প্রকল্প সম্পর্কে অন্ধকারে থাকতেন। সমিতি পরিচালনায় তিনি স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়েছেন। কিন্তু, আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। এলাকার উন্নয়নে আমাদের দেওয়া প্রস্তাব তিনি আমল দিতেন না। এই ঘটনা জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। এই সভাপতিকে আমরা চাই না। বাধ্য হয়ে আমরা ৯ জন তৃণমূল সদস্য সভাপতির বদল চেয়ে অনাস্থার আবেদন জানিয়েছি।” সীতারামবাবুর অভিযোগকে সমর্থন জানিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য রমেশ বাস্কেও বলেন, “অনাস্থা তৃণমূলের দলীয় কোন্দলের জের। বৈঠকে দলের সদস্যরাই গুরুত্ব পেতেন না, আমরা তো বিরোধী সদস্য!”
এই অনাস্থার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি গীতাদেবীর। তবে, তাঁর স্বামী তথা তৃণমূলের জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্য শ্রীপতি মাহাতো গোষ্ঠী কোন্দলের অভিযোগ এনে বলেছেন, “দলে যারা নবাগত, তারাই ঘোঁট পাকাচ্ছে! তবে তাতে খুব একটা সুবিধা হবে না।”
প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানা যাচ্ছে, গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের ক্ষমতাসীন বোর্ডের বিরুদ্ধে আড়াই বছরের আগে অনাস্থা এলেও তা কার্যকরী হবে না। পুরুলিয়ার মহকুমাশাসক (সদর) সৌম্যজিত দেবনাথ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তৃণমূলের জেলা নেতা নবেন্দু মাহালি বলেন, “ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে কোথাও আড়াই বছরের আগে অনাস্থা আনা যাবে না বলে জেলায় ১৬ জানুয়ারি নির্দেশ এসেছে। ফলে, এখনই মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা বদল হচ্ছে না।” যদিও দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠছে, অনাস্থা কার্যকর না হওয়ায় আপাতত ভাঙন হয়তো ঠেকানো গেল। কিন্তু, যাঁরা অনাস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি আরও সভাপতির। সে ক্ষেত্রে কি উন্নয়নের কাছ বাধাপ্রাপ্ত হবে না? তা ছাড়া, অনাস্থা আনার ক্ষেত্রে দলের জেলা নেতৃত্ব বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও দলের একাংশ তা অগ্রাহ্য করছে কী করে? এ সব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
সহসভাপতি সীতারাম মুর্মুর বক্তব্য, আইনি নির্দেশে যদি সভাপতির বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা কার্যকর না হয়, সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মত উপেক্ষা করা হবে। এর বিরুদ্ধেও কোনও আইনি পদক্ষেপ করা যায় কি না, তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দেখবেন।