বৌমাকে বাঁচাতে গিয়ে ছেলের ছুরিতে আহত শম্ভুনাথ লোহার। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।
দারিদ্র নিয়ে অশান্তির জেরে ছুরি দিয়ে স্ত্রীর গলার নলি কেটে দিল এক যুবক।
ঝগড়া থামাতে আসা নিজের বাবার হাতে সে ছুরি মারে। সামনে পড়শি এক বধূকে পেয়ে তাঁকেও কোপ মারে। শনিবার সকালে নিজের দুই ছেলের সামনেই এই কাণ্ড ঘটিয়ে চম্পট দেয় ওই যুবক। বাঁকুড়া শহরের মল্লেশ্বরপল্লির ঘটনা।
মৃত বধূর নাম সীমা লোহার (৩৫)। তাঁর শ্বশুর শম্ভুনাথ লোহার ও পড়শি কল্পনা চক্রবর্তীকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। দুপুরে বাঁকুড়া সদর থানায় সীমাদেবীর বাবা ওন্দার বুলানপুরের বাসিন্দা শিবপ্রসাদ লোহার জামাই তারকনাথ লোহারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন। পুলিশ জানিয়েছে, তার খোঁজ চলছে।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, তারকনাথ পেশায় দর্জি। আগে সে বাঁকুড়া শহরের একটি দোকানে কাজ করত। তার স্ত্রী সীমা একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে রান্নার কাজ করতেন। তাঁদের দু’টি ছেলে রয়েছে। বড় অভিজিৎ ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া আর ছোটছেলে তুষারের বয়স তিন বছর।
গত কয়েকমাস কাজ ছেড়ে একটি সেলাই মেশিন কিনে তারকনাথ বাড়িতেই জামা-কাপড় তৈরির কাজ শুরু করে। কিন্তু তার ব্যবসা একদমই চলছিল না। তাই স্বামীকে ফের দোকানের কাজে ফিরে যেতে বলেন সীমা। কিন্তু তারকনাথের তাতে আপত্তি ছিল। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া লেগে ছিল।
শম্ভুনাথবাবু জানান, এ দিন সকাল থেকেই টাকা-পয়সা নিয়ে ছেলে আর বৌমার মধ্যে বচসা বাধে। রাগ করে সীমা বাপের বাড়ি চলে যাবে বলে শাসানি দেয় স্বামীকে। তাঁর কথায়, “চটে গিয়ে একটি ধারালো ছুরি নিয়ে সব্জি কাটায় ব্যস্ত সীমার পেটে ও গলায় আঘাত করে তারক। তখন আমি মুড়ি খাচ্ছিলাম। বৌমাকে মারতে দেখে মুড়ির থালা ফেলে ওদের ছাড়াতে যাই। তখন তারক পাগলের মতো আমার বাঁ হাতের কনুইয়ে ছুরির কোপ মারে। চিৎকার শুনে পাশের বাড়ির কল্পনা ছুটে আসে। সামনে পেয়ে তাঁর পিঠে ছুরি বসিয়ে দেয় তারক। মুহূর্তের মধ্যে সব ঘটে যায়।”
তিনি জানান, ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে ছটফট করতে করতে মারা যান সীমা। তাঁর দুই ছেলেই তখন সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। এলাকায় গিয়ে দেখা যায় দুই ছেলে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। বড়ছেলে অভিজিৎ বলে, “রোজকার মতোই টাকা-পয়সা নিয়ে বাবা-মা’র ঝগড়া চলছিল। কিন্তু বাবা হঠাৎ রেগে গিয়ে কোথা থেকে ছুরি এনে মাকে মেরে দিল! কত রক্ত! চোখের সামনে মা মারা গেল।”
শম্ভুনাথবাবুর আক্ষেপ, “বৌমাকে চোখের সামনে অসহায়ের মতো মরতে দেখলাম। কিছু করতে পারলাম না। স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ায় যে এমন হতে পারে তা কল্পনাও করতে পারিনি।”
স্থানীয় বাসিন্দা অভিজিৎ মণ্ডল জানান, ঘটনার খবর পেয়ে তাঁরা যখন ওই বাড়িতে ছুটে যান, ততক্ষণে সীমা মারা গিয়েছেন।
ত্রিসীমানার মধ্যে তারককে দেখতে পাওয়া যায়নি।