হাত বাড়িয়ে। জয়ের খবর পেয়ে মুনমুন সেন। ছবি: অভিজিত্ সিংহ।
বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজের বাইরে সবুজ আবিরে মাখা মাথাগুলো তখন জয়ী প্রার্থীকে দেখতে চাইছেন। ঘনঘন স্লোগান উঠছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেই প্রার্থীর নাম। চড়া রোদ মাথায় নিয়ে ভিড়টা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। কোথায় প্রার্থী শ্রীমতী দেব বর্মা? প্রশ্নে জেরবার দলের ছোট, সেজো, মেজো নেতারা।
শ্রীমতী ওরফে মুনমুন সেন তখন ওই গণনা কেন্দ্র থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে চাঁদমারিডাঙার একটি হোটেলের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে টিভির পর্দায় ভোটের খবরাখবর নিচ্ছিলেন।
অপেক্ষার অবসান হল বিকেল প্রায় ৫টায়। হুডথোলা জিপে চেপে গণনা কেন্দ্রে এলেন মুনমুন। পাশে স্বামী ভরত দেববর্মা, তাঁর জয়ের অন্যতম কাণ্ডরী বাঁকুড়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী ও তৃণমূলের অন্য নেতারা। অপেক্ষা করে থাকা তৃণমূল কর্মীদের তখন দেখে কে! আবদার ধরলেন, তাঁদের সঙ্গে মুনমুনকে হাঁটতে হবে, হাত মেলাতে হবে। গণনা কেন্দ্রের কিছুটা দূরে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভেতরে ঢুকলেন তিনি। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “এই জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয়। মানুষ আমাকে জিতিয়েছেন। আমি খুশি। মানুষের উন্নয়নে, এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করব।” তাঁর স্বামী ভরত দেব বর্মার সংযোজন, “জঙ্গলমহলের কিছু মানুষ অনুন্নয়নের কারণে মাওবাদী হয়ে গিয়েছিলেন। আমি ওকে (মুনমুন) প্রথমেই গুরুত্ব দিয়ে জঙ্গলমহলের উন্নয়ন করতে বলব।”
টহলের মাঝেইপটকা ফাটিয়ে উত্সব বাঁকুড়ায়।—নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতা থেকে স্বামীকে নিয়ে বাঁকুড়ায় আসেন মুনমুন। সকাল থেকেই হোটেলে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন প্রচারের সর্বক্ষণের সঙ্গী অরূপ চক্রবর্তী। বস্তুত দিনভরই বাঁকুড়া লোকসভার গণনা ঘিরে ছিল ওঠাপড়া। প্রথম দিকে তৃণমূল প্রার্থীর চেয়ে কিছুটা এগিয়ে ছিলেন বাম প্রার্থী বাসুদেব আচারিয়া। আর তাতেই চঞ্চল হয়ে পড়েছিলেন মুনমুন। তৃণমূল সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে।
গণনা যত এগিয়েছে মুনমুন এগিয়ে ব্যবধান বাড়িয়ে নিয়েছেন। সকাল থেকেই টিভির পর্দায় ফল দেখে আর দলীয় সূত্রে ফলাফলের গতি প্রকৃতি জেনে বেশ উত্কণ্ঠায় ছিলেন তারকা সাংসদ। রাখঢাক না করে মুনমুন নিজেই সে কথা কবুল করেছেন। তাঁর কথায়, “কী ফল হবে ভেবে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই টেনশনে ছিলাম। এ দিন সকালের দিকেও কিছুটা উত্তেজনায় কেটেছে। সিপিএম হয়তো জিতে যেতে পারে ভেবেই উত্তেজনা হচ্ছিল।” তবে এ দিন গণনা কেন্দ্রে এসে মুনমুন তার সহজাত হাসিই বিলিয়েছেন। সেখানে কয়েক ঘণ্টা আগের উত্তেজনার ছিঁটেফোঁটাও ছিল না। শেষ মুর্হুতের গণনা দেখে এসে হাসতে হাসতে তিনি বলেন, “ন’বারের সাংসদকে হারিয়ে আমি ‘জায়েন্ট কিলার’ হয়েছি এটা ভাবছি না। এটা মানুষেরই জয়।”
অন্যদিকে বিজেপিকে সামলে জয়ের ব্যবধান কেমন থাকবে, তা নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিল তৃণমূল শিবির। দিনের শেষে কিন্তু পরিতৃপ্তির ছাপ স্পষ্ট তৃণমূলের নেতাদের শরীরী ভাষায়। তাঁদের কথায়, “বাসুদেববাবুকে শুধু হারানোই তো নয়, এই জয় রীতিমতো বড় ব্যবধানের জয়।” জেলা সভাধিপতির অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “সিপিএমের টানা ন’বারের সাংসদকে হারিয়েছি, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওনা। তবে মুনমুন জেলায় পর্যটনের বিকাশ-সহ জঙ্গলমহল তথা লোকসভা কেন্দ্রের সার্বিক উন্নয়নের কাজ করে দেখিয়ে দেবেন।” বিকাশের কাজ করবো আমরা”